পণ্য আমদানি ও রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের মালিক আবু সাঈদ। প্রথমবারের মতো রাজশাহীর একমাত্র সুলতানগঞ্জ নৌবন্দর দিয়ে আমদানি ও রপ্তানি করার অভিজ্ঞতা রয়েছেন তার। প্রথমবার বেশ লাভবান হয়েছেন তিনি। তবে গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে পাঁচটি পরীক্ষামূলক চলাচলের পর বন্ধ হয়ে যায় এ বন্দরের কার্যক্রম। এতে হতাশ তিনি।
Advertisement
তিনি বলেন, এ পোর্ট দিয়ে প্রথম পাট পাঠিয়েছি এবং পাথর এনেছি। যে পরিমাণ খরচ হবে চিন্তা করেছিলাম তার থেকেও কম খরচ হয়েছে। সহজভাবে এ পোর্টের মাধ্যমে কাজ করা গেছে। একেবারে ছোট রুট হিসেবে কোনো ঝুঁকি দেখি না।
তিনি আরও বলেন, খুব কম সময়ে এবং অল্প খরচে এক দেশ থেকে অন্য দেশে পণ্য আনা নেওয়ার এ সুযোগ বাণিজ্যে নতুন মাত্রা যোগ করবে। তবে কেন এটি বন্ধ রাখা হয়েছে সেটি বড় কথা। আমরা হতাশ হচ্ছি এটি বন্ধ থাকায়। দ্রুত এটি চালু করা গেলে সরকারও যেমন বিপুল পরিমাণ রাজস্ব পাবে আমারও তেমন লাভবান হবো।
আবু সাঈদের মতে, রাজশাহীর ব্যবসায়ীদের হতাশায় রেখেছেন বন্দরটি। রাজস্ব আদায় কার্যক্রম শুরু না হওয়ায় চালু করা সম্ভব হচ্ছে না এ বন্দর। ভারতের মুর্শিদাবাদের মায়া বন্দর থেকে নৌ পথে পণ্য আনা নেওয়া কার্যক্রম চালুর সিদ্ধান্ত ঝুলে আছে রাজস্ব বোর্ডের অনুমোদনের ওপর। ফলে নৌ বন্দরটি আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পর এক বছর ধরে অলস পড়ে থাকায় হতাশ স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।
Advertisement
গেজেট অনুযায়ী এ নৌবন্দরে আসা মালবাহী লাইটার, নদীর ভাটিতে ২০ কিলোমিটার দূরত্ব পেরিয়ে ভিড়তে পারবে। তাতে সেখানে থাকা বহুমুখী সড়ক ব্যবহারে আমদানি করা পণ্যের পরিবহন আরও সহজ হবে। তাই দ্রুত সময়ের মধ্যে এ বন্দর আমদানি-রপ্তানির অনুমতি পাক এটা চান ব্যবসায়ীরা। সুলতানগঞ্জ-মায়া পোর্ট অব কল বন্দরটি দিয়ে প্রাথমিকভাবে কয়লা ও পাথরের চিপস আমদানির অনুমতি রয়েছে। যাতে প্রতিটনে ব্যবসায়ীদের সাশ্রয় হবে ১০ ডলারের বেশি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সুলতানগঞ্জ থেকে ময়া নৌ-ঘাটের নদীপথে দূরত্ব মাত্র ১৭ কিলোমিটার। সুলতানগঞ্জ নৌঘাটটি রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ মহাসড়ক থেকে এক কিলোমিটার দক্ষিণে পদ্মার শাখা নদী মহানন্দার মোহনার কাছাকাছি। সারা বছর সুলতানগঞ্জের এ পয়েন্টে গভীর পানি থাকে। অন্যদিকে, পশ্চিমবঙ্গের ময়া নৌঘাটটি মুর্শিদাবাদ জেলার জঙ্গিপুর মহকুমা শহরের কাছে ভারতীয় ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের সঙ্গে যুক্ত। ফলে সুলতানগঞ্জ-ময়া পথে নৌবাণিজ্য শুরু হওয়ায় পরিবহন খরচ অনেকাংশে কমে যাবে। এতে রাজশাহীর অর্থনীতি গতিশীল এবং ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।
মেসার্স মা এক্সপোর্টের মালিক জালাল উদ্দিন শেখ সম্প্রতি রাজশাহী চেম্বার অব কমার্সের প্রাক বাজেট অনুষ্ঠানে এসেছেন। তিনি জানান, বন্দরটি আমরা অনেক কাছে দুই দেশের মধ্যে মালামাল পরিবহন করাতে পারি। এত ছোট দূরত্বে কোনো দেশের মধ্যে পোর্ট নেই। আমাদের মায়া থেকে কলকাল বন্দরও কাছে। ফলে পোর্টটি একটি বাড়তি সুবিধা দিতো। কিন্তু বাংলাদেশ সরকার এটি চালু না করে আমার এটি ব্যবহার করতে পারছি না।
রাজশাহী চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি মাসুদুর রহমান রিংকু বলেন, ভৌগোলিকভাবে আমাদের মায়া ও সুলতাগঞ্জ পোর্ট আব কলটি সব থেকে কাছে। ২০ কিলোমিটার দূরত্ব। বাংলাদেশে এত কাছাকাছি কোনো নৌ বন্দর নাই। ভারতের পাথরে পাকুর ও অনেক কাছে। সেই দিকে থেকে অমরা এনবিআর চেয়ারম্যানকে বলেছি। পোর্টটি চালু হলে একদিকে যেমন রাজস্ব আদায় বাড়বে তেমন বাড়বে ব্যবসায়ীদের লাভ।
Advertisement
বিআইডব্লিউটিএর পরিচালক (বন্দর ও পরিবহন) এ কেএম আরিফ উদ্দিন বলেন, সরকার রাজশাহীর সুলতানগঞ্জকে নদী বন্দর হিসেবে ঘোষণা করেছেন। ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তির আওতায় ময়ার সঙ্গে এ বন্দর দিয়ে পণ্য আসবে। সোনা মসজিদে যে ল্যান্ড পোর্ট আছে সেটি তাদের ক্যাপাসিটি পার হয়ে গেছে। তাদরে ওখানে আর ধরছে না। ল্যান্ড পোর্টের মাধ্যমে যে পাথর, কয়লা আসছে এগুলোর ব্যয় অনেক বেশি। নৌপথে আসলে খরচের চাপটা কমবে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান বলেন, নৌ বন্দরের কার্যক্রম পুরোদমে শুরু হলে উপকৃত হবেন দুই দেশের ব্যবসায়ীরা। রাজশাহীর সুলতানগঞ্জ নৌবন্দর চালুর বিষয়ে এনবিআর অনুমোদন দিলেও বিআইডব্লিউটি অবকাঠামো নির্মাণ না করায় সেটি চালু করা যাচ্ছে না। সমন্বিতভাবে সুলতানগঞ্জ পোর্ট চালুর বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া হবে।
সাখাওয়াত হোসেন/আরএইচ/এমএস