স্বাস্থ্য

আগামী বছরের জুনের মধ্যে নতুন ব্যবস্থাপনায় চলবে স্বাস্থ্যখাত

আগামী বছরের জুনের মধ্যে নতুন ব্যবস্থাপনায় স্বাস্থ্যখাত পরিচালিত হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব পালন করা প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (প্রতিমন্ত্রী) অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান।

Advertisement

বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান।

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী বলেন, প্রায় সাড়ে সাত হাজার পদোন্নতিযোগ্য বিশেষজ্ঞ স্বাস্থ্যসেবা কাঠামোত ছিল, যাদের পদের অভাবে পদোন্নতি দেওয়া হয়নি। তাদের সঙ্গে বৈষম্য করা হয়েছিল। বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ সংখ্যক সুপার নিউমারারি পদ সৃষ্টির মাধ্যমে চিকিৎসাসেবার ধারাবাহিকতা ও মান রক্ষার জন্য তিন পর্যায়ে প্রায় সাত হাজারেরও বেশি বিশেষজ্ঞ সুপার নিউমারারি পদ সৃষ্টি করে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে থাকা ক্ষোভ ও বঞ্চনার অবসান ঘটানোর উদ্যোগ নিয়েছি।

তিনি বলেন, এরই মধ্যে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে প্রথম তালিকার বিষয়ে সম্মতি এসেছে। এটি আর্থিক সংশ্লেষের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয় পাঠিয়েছি। দ্বিতীয় তালিকাটি আমরা আমাদের মন্ত্রণালয় থেকে জনপ্রশাসনে পাঠিয়েছি, তৃতীয় তালিকা অধিদপ্তরে তৈরি করা হচ্ছে। আমরা আশা করি আগামী সপ্তাহে আমাদের এখানে সেটি এসে পৌঁছাবে।

Advertisement

তিনি বলেন, বেসরকারি শিক্ষানবিশ চিকিৎসকদের ভাতা বৃদ্ধির বিষয়ে গত জানুয়ারি থেকে উদ্যোগ নেওয়া হয়, ফলে ভাতা বৃদ্ধি করা হয়েছে। জুলাই থেকে তাদের ভাতা বাড়ানোর বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে এরই মধ্যে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

বিশেষ সহকারী বলেন, গত ২৬ বছর ধরে স্বাস্থ্যখাত ওয়াইড প্ল্যান অপারেশনাল প্ল্যান ভিত্তিক ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশের স্বাস্থ্য কাঠামো চলছিল। বাংলাদেশের স্বাস্থ্য কাঠামোতে উন্নয়ন সহযোগী বিভিন্ন ব্যাংক ও অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর অংশগ্রহণ এমনভাবে ছিল, এটি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পাচ্ছিল না। আমরা ২৬ বছর ধরে চলা স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা একটা মৌলিক পরিবর্তন আনার পরিকল্পনা করেছি।

‘ট্রানজিট পরিকল্পনা হিসেবে আমরা ২০২৬ সালের জুন মাসের মধ্যে পুরো স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনাটি রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণাধীন এবং একটি প্রাতিষ্ঠানিক চেহারা দেওয়ার পরিকল্পনা করেছি।’

বর্তমানে নগরবাসীর জন্য প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা দেওয়ার কোনো ভালো কাঠামো নেই জানিয়ে সায়েদুর রহমান বলেন, সেজন্য জেনারেল প্র্যাকটিশনার ভিত্তিক একটি রেফারেল সিস্টেম প্রতিষ্ঠা করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। যেটি সম্পূর্ণ ডিজিটালাইজ হবে বলে আমরা আশা করছি।

Advertisement

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আরও বলেন, সরকারি ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান এসেনশিয়াল ড্রাগসের সক্ষমতা বাড়ানোর মাধ্যমে দেশের সকল মানুষের অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের চাহিদা পূরণের জাতীয় সক্ষমতা অর্জন করতে পারব আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই।

‘ডাক্তার’ শব্দটি ব্যবহারের ক্ষেত্রে আদালত রায় দিয়েছে জানিয়ে বিশেষ সহকারী বলেন, এ রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে সাধারণ চিকিৎসকদের পক্ষ থেকে একটি প্রত্যাশার কথা বলা হয়েছে- এমবিবিএস ও বিডিএস সনদ ছাড়া কেউ স্বাধীনভাবে প্র্যাকটিস করতে পারবে না। এ বিষয়ে আমরা আদালতের রায় পাওয়ার অপেক্ষা করছি, এরপর আইনি পরামর্শ অনুযায়ী আমরা তাদের মাধ্যমে কী ভাষায় প্রজ্ঞাপন জারি করতে হবে সেটি নির্দিষ্ট করবো।

‘ডাক্তার’ শব্দটি ব্যবহারের বিষয়ে আলাদা একটি কমিটি করে দেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।

৪৫, ৪৬ এবং ৪৭তম বিসিএসের মাধ্যমে প্রায় সাড়ে তিন হাজার চিকিৎসক নিয়োগের প্রক্রিয়া চলমান জানিয়ে সায়েদুর রহমান বলেন, তারপরও প্রত্যন্ত অঞ্চলে চিকিৎসকের অভাবের কথা বিবেচনা করে ২ হাজার চিকিৎসক নিয়োগের বন্দোবস্ত নিয়েছি। এজন্য গত ৯ মার্চ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কাছে অনুরোধপত্র পাঠানো হয়েছে।

চিকিৎসকদের চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩২ থেকে বাড়িয়ে ৩৪ করার জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে বলেও জানিয়েছেন বিশেষ সহকারী।

‘মানহীন মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুলগুলো বন্ধ করার কথা বলা হয়েছে। বিপুল সংখ্যক মানহীন ম্যাটস স্কুল চিহ্নিত করা হয়েছে। সেগুলোর ভর্তি বন্ধ আছে। চিকিৎসা শিক্ষার কোনো পর্যায়ে মানের বিষয়ে আমরা আপস করতে রাজি নই।’

স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইনটি বহু বছর ধরে আলোচিত জানিয়ে এ চিকিৎসক বলেন, দায়িত্ব পাওয়ার পর আমরা এটিকে প্রায় চূড়ান্ত করে এনেছিলাম। এরই মধ্যে স্বাস্থ্য সংস্কার কমিশন কিছু পর্যবেক্ষণ দিয়েছে। এগুলো আমরা বিবেচনায় নিতে আগ্রহী। তাদের পরামর্শগুলো আগামী ১৮ মার্চ আসবে বলে আমরা আশাবাদী। এগুলো এলে আমরা সেগুলোকে বিবেচনায় নিয়ে অতিসত্বর স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন বা নাম পাল্টে স্বাস্থ্য বা চিকিৎসক সুরক্ষা আইন আগামী দু-তিন সপ্তাহের মধ্যে জনসমক্ষে আনতে পারবো।

চিকিৎসা সেবাগ্রহীতা এবং সেবাদাতা দুদিক থেকে দুটি আলাদা আইন হতে পারে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

সবাইকে ধৈর্য ধারণ করার অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, স্বাস্থ্যখাতে যার যা সমস্যা আছে সেগুলো দূর করার জন্য আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করবো।

ডেঙ্গু নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে সায়েদুর রহমান বলেন, ডেঙ্গু নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। আমরা অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের ভিকটিম। এবার ডেঙ্গুর প্রোফাইলিং করেছি। বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে গাইডলাইনে এবার মাইনর পরিবর্তন হবে বলে আমরা আশা করছি। সেগুলো নিয়ে কাজ হচ্ছে। সেটার ভিত্তিতে আমরা সারাদেশের চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণ দেবো।

আরএমএম/এমকেআর/জিকেএস