ধর্ম

জানাজার সাথে কবরস্থানে যাওয়ার সময় নবিজি (সা.) যা করতেন

মুমিনের ওপর অপর মুমিনের পাঁচটি হকের একটি হলো মারা গেলে তার জানাজার নামাজ পড়া এবং তাকে দাফন করার জন্য মরদেহের সাথে কবরস্থানে যাওয়া। রাসুল (সা.) বলেন, 

Advertisement

حَقُّ المُسْلِمِ عَلَى المُسْلِمِ خَمْسٌ: رَدُّ السَّلاَمِ وَعِيَادَةُ المَرِيضِ وَاتِّبَاعُ الجَنَائِزِ وَإِجَابَةُ الدَّعْوَةِ وَتَشْمِيتُ العَاطِسِ

এক মুসলিমের ওপর অপর মুসলিমের হক পাঁচটি; সালামের জবাব দেওয়া, অসুস্থ হলে দেখতে যাওয়া, তার জানাজার সঙ্গে যাওয়া, দাওয়াত কবুল করা এবং তার হাঁচির জবাব দেওয়া। (সহিহ বুখারি: ১২৪০, সহিহ মুসলিম: ২১৬২)

জানাজার নামাজ পড়া ও জানাজার সাথে গিয়ে মৃত ব্যক্তির দাফনের কাজে অংশগ্রহণ করা পৃথক সওয়াবের কাজ, হাদিসে এই দুটি আমলেরই অপরিসীম সওয়াবের কথা বর্ণিত হয়েছে। রাসুল (সা.) বলেন,

Advertisement

مَنْ شَهِدَ الْجَنَازَةَ حَتَّى يُصَلِّيَ عَلَيْهَا فَلَهُ قِيرَاطٌ، وَمَنْ شَهِدَ حَتَّى تُدْفَنَ كَانَ لَهُ قِيرَاطَانِ.‏ قِيلَ وَمَا الْقِيرَاطَانِ قَالَ‏ مِثْلُ الْجَبَلَيْنِ الْعَظِيمَيْنِ‏‏.‏

যে ব্যাক্তি কোনো জানাজার নামাজ হয়ে যাওয়া পর্যন্ত মৃতের সাথে উপস্থিত থাকবে, সে এক ‘কিরাত’ পরিমাণ সওয়াব পাবে, আর যে ব্যাক্তি মৃতের দাফন হয়ে যাওয়া পর্যন্ত উপস্থিত থাকবে, সে দুই ‘কিরাত’ সওয়াব পাবে। কেউ জিজ্ঞাসা করল, দুই কিরাতের পরিমাণ কতটুকু? তিনি বললেন, দুটি বিশাল পর্বতের সমান। (সহিহ বুখারি: ১৩২৫) 

নবিজির (সা.) যুগে কোনো সাহাবির মৃত্যু হলে সাধারণত নবিজিই (সা.) তার জানাজা পড়াতেন এবং জানাজার সাথে কবরস্থানেও যেতেন। জানাজার সাথে কবরস্থানে যাওয়ার পথে নবিজি (সা.) চুপ থাকতেন। তার সাথে থাকা সাহাবিরাও চুপ থাকতেন। আখেরাতের বিষয়ে চিন্তামগ্ন থাকতেন। ইবনে জুরাইজ (রহ.) বলেন,

أَنّ النّبِيّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ كَانَ إِذَا تَبِعَ الْجِنَازَةَ أَكْثَرَ السّكُاتَ وَأَكْثَرَ حَدِيثَ نَفْسِهِ.

Advertisement

নবিজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যখন জানাজার পেছনে চলতেন তখন বেশিরভাগ সময় চুপ থাকতেন এবং চিন্তায় মগ্ন থাকতেন। (মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক: ৬২৮২, মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা: ১১৩১৫) 

আমাদের দেশে অনেক জায়গায় লাশের খাটিয়া বহন করে কবরস্থানে নিয়ে যাওয়ার সময় লোকজন উচ্চৈস্বরে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ ও বিভিন্ন কালিমার জিকির করে। অনেকে এটাকে সুন্নতও মনে করে থাকে। এ ধারণা সঠিক নয়। নবিজি (সা.) বা তার সাহাবিরা লাশের খাটিয়া বহন করার সময় উচ্চৈস্বরে জিকির করেছেন নির্ভরযোগ্য সূত্রে এ রকম কোনো ঘটনার কথা জানা যায় না। 

বরং নবিজি (সা.) জানাজার সাথে যাওয়ার সময় উচ্চৈস্বরে আওয়াজ করতে নিষেধ করেছেন। হজরত আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত নবিজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইরশাদ করেছেন,

لَا تُتْبَعُ الْجَنَازَةُ بِصَوْتٍ، وَلَا نَارٍ.

জানাজা পেছনে যেন শব্দ না করা হয় এবং আগুন না নেওয়া হয়। (সুনানে আবু দাউদ: ৩১৬৩) 

তাই জানাজার সাথে যাওয়ার সময় নবিজির (সা.) সুন্নত অনুসরণ করে চুপ থাকা উচিত। মৃত্যুর কথা ও আখেরাতের কথা স্মরণ করা উচিত। জিকির ও দোয়া পড়তে চাইলে মনে মনে পড়া যেতে পারে, উচ্চৈস্বরে নয়।

ওএফএফ/জেআইএম