‘ইরা, এদিকে এসো!’ নারীকণ্ঠে ডাক আসে, ছুটে যান ইরা। পরক্ষণেই আরেকটি কণ্ঠ শোনা যায়, ‘দিলনাওয়াজের সঙ্গে ছবি তুলবো।’ তার কাছেও ছুটে যান তরুণ নৃত্যশিল্পী মুবাশশীরা কামাল ইরা। কিছুক্ষণ আগেও মঞ্চে ঘুরে ঘুরে নাচছিলেন তিনি। নাট্য শেষে মঞ্চের নিচে ঘুরে ঘুরে দর্শকদের সঙ্গে ছবি তুলতে হচ্ছে তাকে। পরিবেশনার পর তরুণ একজন শিল্পীর জন্য কতটা অনুপ্রেরণার এই মুহূর্তটা?
Advertisement
তরুণ নৃত্যশিল্পী মুবাশশীরা কামাল ইরা। ছবি: ফেসবুক থেকে
আরও পড়ুন: এ কেমন ভালোবাসা, মৃত্যুই যার নিয়তি উর্দু থেকে ইংরেজিতে রাহাত আরা বেগমের গল্পড্যান্সড্রামা ‘দিলনাওয়াজ’-এর প্রধান চরিত্রে বাজিমাত করেছেন ইরা। এখন প্রশংসায় ভাসছেন তিনি। নৃত্য পরিচালক, দলের শিল্পীরা, দর্শক – সবাই শুধু একটি কথাই বলছেন, ‘দারুণ’। রাহাত আরা বেগমের উর্দু গল্পকে উপজীব্য করে নৃত্যনাট্য করেছেন সাব্বির আহমেদ খান, শিল্প নির্দেশক ছিলেন লুবনা মারিয়াম। এর সংগীত পরিচালক ছিলেন খ্যাতিমান সংগীতজ্ঞ উদয় শংকরের নাতি রাতুল শংকর ঘোষ। এর প্রধান চরিত্রে দেখা গেল শাহজাদার জন্য ব্যাকুল অপেক্ষা, তার সঙ্গে সাক্ষাতের সীমাহীন আনন্দ, বিচ্ছেদের হৃদয় বিদারক বেদনা ইরা ফুটিয়ে তুলেছিলেন কেবল অভিব্যক্তিতে। এতটুকু সংলাপ নয়, শুধুই চোখ-মুখের অভিব্যক্তি! একজন শিল্পী হিসেবে সেখানে উৎরে গেছেন এই তরুণ নৃত্যনন্দিনী।
ভরতনাট্যম শিখেছেন ইরা। ছবি: ফেসবুক থেকে
Advertisement
ভালোবাসা দিবসে জাতীয় নাট্যশালায় ছিল ‘দিলনাওয়াজ’-এর মঞ্চায়ন। কখনও কত্থকের চক্কর, কখনও সুফি নৃত্য মোগামের, নাচে যেন সর্বাঙ্গসুন্দর হয়ে উঠছেন ইরা। ভরতনাট্যম, ব্যালে, সমসাময়িক নৃত্যেও প্রশিক্ষণ রয়েছে তার। অভিনয় করছেন নাটকে, মডেল হয়েছে টিভিসি ও বিজ্ঞাপনে। উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে সেসবের একটার রিচ শেয়ার করে বললেন, ‘রিসেন্ট কাজটা চুয়াল্লিশ মিলিয়ন ভিউ হয়েছে! ভাবা যায়?’
পড়াশোনার পাশাপাশি বিনোদন অঙ্গনে কাজ করে যাচ্ছেন এই তরুণ নৃত্যশিল্পী। ছবি: ফেসবুক থেকে
নতুন নৃত্যনাট্য ‘দিলনাওয়াজ’? ‘দিলনাওয়াজ’ চরিত্রের ইরা বলেন, ‘আমার ওপর এত আস্থা রাখার জন্য আমি সত্যিই খালার (শিল্প নির্দেশক লুবনা মারিয়াম) প্রতি কৃতজ্ঞ। কী অদ্ভুত গল্পটা! ভালোবাসার মাধ্যমে গডের সঙ্গে মানুষের কানেকশন দেখানো হয়েছে সেখানে। পারফরমেন্স শেষে অনেকক্ষণ চরিত্রটা থেকে যেন বের হতে পারছিলাম না। আর সবাই এত প্রশংসা করছিল যে, মনে হলো এত কষ্ট সার্থক হয়েছে।’
প্রথম নৃত্যনাট্যেই বাজিমাত করেছেন মুবাশশীরা কামাল ইরা। ছবি: ফেসবুক থেকে
Advertisement
আগেও নৃত্যনাট্যে কাজ করেছেন ইরা। প্রযোজনা সংস্থা সাধনার ‘নকশি কাঁথার মাঠ’, ‘তাসের দেশ’, ‘ফায়ার ফ্লাই’তে তিনি ছিলেন অন্যতম শিল্পী। তবে প্রধান চরিত্রে কেমন উপভোগ করলেন? জানতে চাইলে ইরা বলেন, ‘গেল ডিসেম্বরের ২৫ তারিখ “দিলনাওয়াজ”-এর একটা ডামি প্রদর্শনী ছিল। সেখানে পরীক্ষামূলকভাবে আমি পারফর্ম করেছিলাম। সেদিনই দেখলাম সবাই খুব পছন্দ করেছে। দলের সিনিয়ররাও আমাকে দিয়ে করানোর কথা বলেছিলেন। সেদিনই আমার ওপর বিশ্বাস তৈরি হয়েছে সবার। আমি সেই বিশ্বাসটা রাখতে চেষ্টা করেছি মঞ্চে। সবাই এত প্রশংসা করলেন যে ... আমি ভীষণ কৃতজ্ঞ সবার কাছে।’
ব্যালে নাচের মুদ্রায় ইরার কয়েকটি ছবি ভাইরাল হয়েছিল। ছবি: ফেসবুক থেকে
সোশাল মিডিয়ার এই যুগে ইরাকে কে না চেনে! ২০২২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে ব্যালে নাচের মুদ্রায় ইরার কয়েকটি ছবি ভাইরাল হয়েছিল। আলোকচিত্রী জয়িতা আফরিনের তোলা সেসব ছবি রীতিমতো তারকা বানিয়ে দেয় ইরাকে। শেষ মহড়ার আগে নিজেও বলছিল সেকথা। ‘রাজু ভাস্কর্যে তোলা ওই ছবিগুলোই ছিল আমার টার্নিং পয়েন্ট। এখন ঠিক ছবির মতো উড়ছি। অন্যরকম একটা সময় পার করছি।’
সামনে অনেকটা পথ পাড়ি দেওয়ার অপেক্ষায় ইরা। ছবি: ফেসবুক থেকে
আইন নিয়ে পড়াশোনা করছেন ইরা। এ রকম কঠিন একটা বিষয়ে পড়ার পাশাপাশি বাবা-মায়ের সংসারের হাল ধরতে হয়েছে তাকে। পড়া, নাচ, অভিনয়, সবকিছু মিলে যেন ঝড়ের মতো কেটে যাচ্ছে ইরার দিন। অথচ তার মাত্র ‘আঠারো বছর বয়স’। ‘এ বয়স বাঁচে দুর্যোগে আর ঝড়ে’, সুকান্তের কবিতার মতো তিনিও এগুচ্ছেন ঝড়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে।
আরএমডি/জিকেএস