রাজনীতি

নতুন ছাত্র সংগঠনের মূলভিত্তি হবে জুলাইয়ের স্পিরিট

 

রাজনীতিতে যুক্ত হতে যাচ্ছে নতুন একটি ছাত্র সংগঠন। ছাত্র-জনতার রক্তের বিনিময়ে পাওয়া নতুন বাংলাদেশে জুলাই বিপ্লবের স্পিরিটকে ধারণ করে পরিচালিত হবে সংগঠনটি। সংগঠনে থাকবে না কোনো দল বা ব্যক্তির লেজুড়বৃত্তি।

Advertisement

কথাগুলো বলেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আব্দুল কাদের।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে বারবার ইন্টারনেট বন্ধ থাকার কারণে যখন যোগাযোগ সীমিত হয়ে পড়েছিল, তখন সাংবাদিকদের কাছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচির তথ্য জানিয়ে আলোচনায় আসেন আব্দুল কাদের। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের এই শিক্ষার্থী গঠিত হতে যাওয়া নতুন ছাত্র সংগঠনের শীর্ষ নেতৃত্বে আসতে পারেন বলে আলোচনা আছে।

নতুন ছাত্র সংগঠনের নেতৃত্ব, পরিচালনার ধরনসহ নানা বিষয় নিয়ে আব্দুল কাদেরের সঙ্গে কথা বলেছে জাগো নিউজ। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক হাসান আলী।

Advertisement

জাগো নিউজ: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম থাকতে নতুন দল কেন?

আব্দুল কাদের: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন হচ্ছে একটা গণঅভ্যুত্থানের প্ল্যাটফর্ম। স্বাভাবিকভাবেই এটি একটি অন্তর্ভুক্ত প্ল্যাটফর্ম। গণঅভ্যুত্থানের স্বার্থে ডান-বাম-ছাত্রদল-শিবির সবাই এখানে এসেছে। এই প্ল্যাটফর্মের উদ্দেশ্য ছিল দুইটা। একটি হচ্ছে বিদ্যমান ব্যবস্থাকে উপড়ে ফেলা এবং অন্যটি হচ্ছে নতুন একটা বন্দোবস্ত হাজির করা। দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং তার সঙ্গে সম্পৃক্ত অন্যান্য ছাত্র সংগঠনগুলো তাদের নিজ নিজ জায়গা থেকে প্রথম কাজটি করেছে। কিন্তু এরপরও ছাত্রদের বিশাল একটা অংশ আছে যাদের আগের কোনো ছাত্র সংগঠন নেই, তারা কোথায় যাবে? দেশের প্রতি তাদেরও তো দায়বদ্ধতার জায়গা আছে।

আমরা ক্যাম্পাসগুলোতে ছাত্রলীগের দাসত্বের অবসান ঘটিয়েছি, এখন আমাদের নতুন বন্দোবস্ত হাজির করতে হবে। আমরা জেনেছি, গণঅভ্যুত্থানের মধ্য থেকে একটি রাজনৈতিক শক্তি বের হচ্ছে, সেটা জাতীয় পর্যায়ে। সেখানে আমাদের মনে হয়েছে কোনো প্ল্যাটফর্ম না থাকা শিক্ষার্থীদের জন্য একটি স্বাধীন এবং স্বতন্ত্র ছাত্র সংগঠন থাকা জরুরি। আর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন যেহেতু কোনো পলিটিক্যাল প্ল্যাটফর্ম না সেহেতু নতুন একটি ছাত্র সংগঠনের কথা আমরা চিন্তা করেছি।

জাগো নিউজ: নতুন ছাত্র সংগঠনের নাম কী হতে পারে?

Advertisement

আব্দুল কাদের: নতুন ছাত্র সংগঠনের নাম কী হবে সেটি এখনো চূড়ান্ত হয়নি। সংগঠন যে আসছে সেটি নিয়ে আমরা আপাতত আগমনি বার্তা টাইপের একটি সংবাদ সম্মেলন করেছি এবং শিক্ষার্থীদের জানিয়েছি। আমরা অনলাইন এবং অফলাইনে শিক্ষার্থীদের সংগঠন নিয়ে নাম থেকে শুরু করে বিভিন্ন বিষয়ে মতামত, প্রত্যাশা জানতে চাচ্ছি। আশা করছি শেষ পর্যায়ে ভালো নাম চূড়ান্ত করতে পারব।

জাগো নিউজ: একটি সংগঠন করতে গেলে স্বাভাবিকভাবেই যেসব বিষয় সামনে আসে (গঠনতন্ত্র, লক্ষ্য-উদ্দেশ্য ইত্যাদি) সেগুলো সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। সামগ্রিকভাবে জাতীয় নাগরিক কমিটি থেকে একটি দল গঠনের কথা শোনা গেলেও ছাত্র সংগঠনের কথা হুট করেই সামনে এসেছে। সেক্ষেত্রে এত অল্প সময়ের মধ্যে সবকিছু কীভাবে করবেন?

আরও পড়ুননতুন ছাত্রসংগঠন আসছে ২০ ফেব্রুয়ারি, কারা থাকছেন নেতৃত্বেছাত্রদের দল হবে ‘মধ্যপন্থি’, ২৫ ফেব্রুয়ারি আসতে পারে ঘোষণা

আব্দুল কাদের: আমাদের নতুন যে ছাত্র সংগঠনটি আসবে তার মূলভিত্তি হবে জুলাইয়ের স্পিরিট। জুলাইয়ের স্পিরিটকে ধারণ করে ক্যাম্পাস তথা শিক্ষাঙ্গণ পর্যায়ে কাজ করবে। আমাদের নেতৃত্ব নির্বাচন হবে ইন্টারনাল ডেমোক্রেসির মধ্য দিয়ে কাউন্সিলের মাধ্যমে। নরমালি আমরা দেখি, ছাত্রত্ব নাই এমন ব্যক্তিরা কেন্দ্রীয় কমিটিতে প্রায়োরিটি পায়। আমাদের সংগঠনে প্রাথমিক একটা প্রস্তাবনা রেখেছি যে, কেন্দ্রীয় কমিটিতে কখনোই ২৮ বছরের ওপরে কেউ সদস্য পর্যন্ত হতে পারবে না। আর অন্যান্য ইউনিটগুলোতে কেউ সদস্য হতে চাইলে অনার্সে ভর্তি থেকে সাত বছর পর্যন্ত সদস্য থাকতে পারবে। আর বাকি বিষয়গুলোও আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা হবে।

জাগো নিউজ: বৈষম্যবিরোধীদের একটি প্ল্যাটফর্ম থেকে একই সময়ে জাতীয় পর্যায়ে এবং ছাত্র পর্যায়ে দুটি দল আসছে। সেক্ষেত্রে স্বাভাবিকভাবেই লেজুড়বৃত্তির প্রশ্নটি থেকে যায়। সেটা আপনারা কীভাবে সমাধান করবেন?

আব্দুল কাদের: অবশ্যই, আমাদের সবচেয়ে বড় যে প্রতিবন্ধকতা সেটি হলো লেজুড়বৃত্তিপনা। লেজুড়বৃত্তি বাদ দিয়ে কীভাবে একটি ছাত্র সংগঠন রান করানো যায়। আমাদের প্রথম লক্ষ্য হচ্ছে ‘স্টুডেন্টস ফার্স্ট—বাংলাদেশ ফার্স্ট’। আমরা শিক্ষার্থীদের নিয়ে তাদের দাবি-দাওয়ার জন্য কাজ করব। সেক্ষেত্রে আমাদের মিশন হচ্ছে লেজুড়বৃত্তি করা যাবে না। আমরা লেজুড়বৃত্তি করি কি না সেটা আমার সংগঠনের সাংগঠনিক কার্যক্রম থেকে বোঝা যাবে। লেজুড়বৃত্তি কী কী কারণে হয় সেটি আইডেন্টিফাই করেছি। আমরা দেখেছি, বিদ্যমান ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতা নির্বাচিত হয় তাদের মাদার সংগঠনের নেতার কনসার্ন দ্বারা। এভাবে যখন নির্বাচিত হয় তখন তো তারা ছাত্রদের কাছে আর দায়বদ্ধ থাকে না, তারা দায়বদ্ধ থাকে মাদার সংগঠনের ওই নেতাদের কাছে। আরেকটি বিষয় হচ্ছে, সংগঠন চালাতে গেলে ফাইন্যান্সিয়াল সাপোর্টটা কোথায় থেকে আসছে। এটা যেদিক থেকে আসছে সেদিকে সংগঠনের দায়বদ্ধতা তৈরি হয়। তাই আমরা ঠিক করেছি, সংগঠনের সদস্যদের সাংগঠনিক ফি বা চাঁদার ওপরে আমাদের ফাইন্যান্স সিস্টেম প্রতিষ্ঠিত থাকবে। সুতরাং লেজুড়বৃত্তির ব্যাপারটা এখানে থাকবে না।

আরও পড়ুনআখতারকে সরাতে চায় কারা, হঠাৎ কেন আলোচনা?নতুন দলের জন্য নাম-প্রতীক চেয়েছেন শিক্ষার্থীরা

জাগো নিউজ: আপনারা অন্যকোনো সংগঠনের সঙ্গে জোটবদ্ধ হবেন কি না?

আব্দুল কাদের: যদি কোনো রাজনৈতিক দলের বা ছাত্র সংগঠনের এজেন্ডা বা কর্মসূচি জুলাইয়ের স্পিরিটকে ধারণ করে, সেক্ষেত্রে আমাদের ছাত্র সংগঠন সেটার সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করবে। অথবা তাদের সঙ্গে যুগপৎ কর্মসূচিও দিতে পারে বা কাজ করতে পারে। কিন্তু কোনো সংগঠনের থেকে অর্থ নিয়ে ‘খুললাম খুল্লা’ ভাবে তার দ্বারা নেতা নির্বাচন করে, তার এজেন্ডা বাস্তবায়ন করবে, এমন সংস্কৃতি এখানে হাজির হবে না।

জাগো নিউজ: আপনি বলেছেন, হল এবং অ্যাকাডেমিক এরিয়ায় আপনারা কোনো কমিটি দেবেন না। এটা আসলে কেন?

আব্দুল কাদের: আমি মনে করি, জুলাই বিপ্লব পুরো রাজনীতির ইকুয়েশনটা পরিবর্তন করে দিয়েছে। আগের যে ব্যবস্থা ছিল সেটি পুরোপুরি ভেঙে গেছে। এই আন্দোলনে মূল স্টেক হচ্ছে ছাত্ররা। ১৭ বছর ধরে হলগুলোতে যে দাসত্বের কালচার ছিল তখন কোনো ছাত্র সংগঠন তাদের উদ্ধার করার জন্যে এগিয়ে আসেনি। শিক্ষার্থীরা নিজেরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে আন্দোলন করে সিস্টেমটা ভেঙে দিয়েছে। ২৪-এর গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী যে বাংলাদেশ, এই বাংলাদেশে যার জন্য আমি রাজনীতি করতে চাই, সেই শিক্ষার্থীদের কনসার্ন মেনে আমাকে রাজনীতি করতে হবে। ছাত্ররা চায়, ক্যাম্পাস লেভেলে ছাত্র-রাজনীতি থাকবে কিন্তু কোনোভাবেই হল এবং অ্যাকাডেমিক এরিয়ায় সেটি থাকবে না। আমরা তাদের কনসার্নকে স্বাগত জানিয়ে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

জাগো নিউজ: আপনাদের নতুন সংগঠনের যে কমিটি ঘোষণা হবে সেটির আকার কেমন হবে? শুধু কেন্দ্রীয় কমিটি না কি আরও কমিটি ঘোষণা করা হবে?

আব্দুল কাদের: সাধারণত এই অঞ্চলে একটা কালচার প্রচলিত আছে, কোনো সংগঠনের কমিটি দিলে প্রথমে কেন্দ্রীয় এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দেওয়া হয়। পরে ধীরে ধীরে সব কমিটি দেওয়া হয়। আমরাও চাচ্ছি সেভাবেই দিতে। পরে আমরা বাকি কমিটিগুলো দেব। তবে কেন্দ্রীয় এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরে আমরা বিভিন্ন সেল আকারে কমিটিগুলো দেবো।

এমএইচএ/এমআরএম/এমএমএআর/জেআইএম