বরিশাল নদীবন্দরের ঘাটের শ্রমিকদের (কুলি-কলম্যান) মাদক ও জুয়া থেকে দূরে রাখতে ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নেওয়া হয়। এতে লঞ্চ টার্মিনাল এলাকার পরিত্যক্ত জমিতে বিভিন্ন ধরনের শীতকালীন সবজি চাষ ও ফুল-ফলের গাছ রোপণ করে সফলতা পেয়েছেন রিপন হাওলাদার। লঞ্চঘাটের শ্রমিকদের নিয়ে ফুল ও ফলের ক্ষেত করে বরিশালে প্রশংসায় ভাসছেন রিপন।
Advertisement
বরিশাল লঞ্চঘাট ঘুরে দেখা গেছে, ৩ নম্বর গেট দিয়ে বন্দর ভবনের ভেতর দিয়ে পন্টুনে যেতে পরিত্যক্ত বিভিন্ন স্থানে বাহারি রঙের ফুল গাছের সারি। পাশেই আবার বিভিন্ন ধরনের সবজির বাগান। যা সৌন্দর্য বৃদ্ধির পাশাপাশি নদীবন্দর এলাকার দৃশ্যপট পাল্টে দিয়েছে।
বরিশাল-ঢাকা নৌ-রুটের পারাবত লঞ্চের কলম্যান ইমাম হোসেন বলেন, ‘সংবাদকর্মী রিপন ভাইয়ের সহযোগিতায় এবার কিছু হাইব্রিড শিমের বীজ রোপণ করেছি। মাত্র পাঁচটি শিমের বীজ রোপণ করে যা ফলন পেয়েছি, তা অবিশ্বাস্য। দুই-আড়াই মাস আগে রোপণ করা এ শিম গাছগুলো এখন থোকায় থোকায় ফল দিচ্ছে।’
ইমাম হোসেন বলেন, ‘রাসায়নিক সার না ব্যবহার করেও এত বেশি ফলন পাওয়া সম্ভব। এটি আমি প্রথমবার দেখলাম। এখন তো আমার এ শিমের কথা শুনে স্থানীয় কৃষকরা এসে দেখে যাচ্ছেন। অনেকেই বলছেন, আগামী মৌসুমে এ শিমের চাষ করবেন।’
Advertisement
শ্রমিক কালু বলেন, ‘বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত লঞ্চঘাটে কাজ থাকলেও সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত তাস খেলে অলস সময় পার করতাম। পরে ঘাটের পরিচিত মুখ রিপন ভাইয়ের পরামর্শে বিভিন্ন ফুল-ফলের চারা রোপণ করি। এসব গাছে বিভিন্ন ধরনের ফুল-ফল ধরেছে। যা দেখে নিজেরই ভালো লাগে। দিনের অধিকাংশ সময় ঘাটের শ্রমিকরা মিলে ক্ষেত পরিচর্যার কাজ করি।’
সংবাদকর্মী রিপন হাওলাদার বলেন, ‘একটি সংগঠনের মাধ্যমে দীর্ঘদিন ধরে লঞ্চঘাটে পথশিশুদের নিয়ে কাজ করছি। দেখলাম লঞ্চঘাটের শ্রমিকরা কাজ শেষে শুয়ে-বসে থাকেন। কেউ আবার মাদক ও জুয়ায় আসক্ত। তাই খারাপ সংস্পর্শ থেকে দূরে রাখতে নদীবন্দর ভবনের সামনে বাগান করার সিদ্ধান্ত নিই।’
তিনি বলেন, ‘প্রথমে ময়লা-আবর্জনায় ভরা জমি পরিষ্কার করে লাউ চাষ করার জন্য উৎসাহ দিই। লাউ গাছ রোপণের পর সঠিকভাবে পরিচর্যা করায় অনেক লাউ ধরে। যেগুলো শ্রমিকরা নিজেরা খাওয়ার পাশাপাশি আমাদেরও দিয়েছে। এরপর থেকে নিয়মিত তারা সেখানে বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ করে আসছেন।’
রিপন আরও বলেন, ‘আমাদের সহকর্মীরা বিভিন্ন স্থান থেকে বীজ সংগ্রহ করে দিচ্ছে। বাগানে বিভিন্ন ধরনের ফুল-ফলের গাছ, বোম্বাই মরিচ, হাইব্রিড শিম, দেশীয় প্রজাতির শিমসহ বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ হয়েছে। প্রথমবার হিসেবে হাইব্রিডি শিম রোপণ করে ভালো ফলন হয়েছে। কয়েকটি গাছ থেকে প্রায় ১০০ কেজি শিম হয়েছে। যা ঘাটের শ্রমিক থেকে শুরু করে সবাইকে দেওয়া হয়েছে।’
Advertisement
এসইউ/জিকেএস