অর্থনীতি

মাছ উৎপাদনে ‘মাইলফলক’ ছাড়ানোর পথে বাংলাদেশ

মাছ উৎপাদনে ‘মাইলফলক’ ছাড়ানোর পথে বাংলাদেশ

দেশে মাছের উৎপাদন ৫০ লাখ টন পেরিয়েছে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে। ওই বছর উৎপাদন হয় ৫০ লাখ ১৮ হাজার টন মাছ। এটি ছিল বাংলাদেশের মোট মাছ উৎপাদনে একটি নতুন ‘মাইলফলক’।

Advertisement

২০২৪-২৫ অর্থবছরের উৎপাদন এখনো সুনির্দিষ্টভাবে সন্নিবেশ করেনি সরকার। তবে উৎপাদন আগের বছরের চেয়ে আরও বেড়েছে বলে ধারণা মৎস্য অধিদপ্তরের।

গত বছর (২০২৪ সাল) মাছে-ভাতে বাঙালির জন্য আরও একটি সুখবর ছিল বৈশ্বিক অঙ্গনে। মিঠাপানির মাছ আহরণে বিশ্বে তৃতীয় থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে উঠে আসে বাংলাদেশ। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি বিষয়ক সংস্থার (এফএও) প্রকাশ করা ‘ওয়ার্ল্ড স্টেট অব ফিশারিজ অ্যান্ড অ্যাকুয়াকালচার-২০২৪’ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছিল।

সবমিলে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধিতে একটি ভালো সময় পার করছে বাংলাদেশ। তথ্য বলছে, বাংলাদেশ ২০২৩-২৪ সালে ৪৭ লাখ হেক্টর জলাশয়ে মাছ আহরণ করেছে। এর মধ্যে চাষের মাছ ২৯ লাখ ৭৮ হাজার টন, উন্মুক্ত জলাশয় থেকে আহরণ করা ১৪ লাখ ১১ হাজার টন। বাকিটা সমুদ্র থেকে সংগ্রহ করা।

Advertisement

বিগত প্রায় এক দশক ধরে দেশে মাছ চাষের একটি বিপ্লব চলছে। যেখানে সবার আন্তরিক প্রচেষ্টা ছিল। নানা দেশি মাছের জাত সংরক্ষণের মাধ্যমে সেগুলো পুকুরে চাষের উপযোগী করা, মৎস্য আহরণে নিষেধাজ্ঞা মেনে চলাসহ সরকারের মৎস্যবান্ধব নীতিমালার কারণে মাছের উৎপাদন বেড়েছে।- মৎস্য অধিদপ্তরের পরিচালক (অভ্যন্তরীণ মৎস্য) ড. মো. মোতালেব হোসেন

আর উন্মুক্ত জলাশয় থেকে আহরণ করা মাছের অর্ধেকই ইলিশ। বাংলাদেশ ওই বছর ৫ লাখ ২৯ হাজার টন শুধু ইলিশ উৎপাদন করেছিল।

দেশের উন্মুক্ত জলাশয়ে মাছ রয়েছে ২৬১ প্রজাতির। তবে বাংলাদেশের ৫৬ শতাংশ মাছ আসছে পুকুর থেকে। পুকুরে মাছ চাষের কারণে গত তিন দশকে উৎপাদন বেড়েছে প্রায় ছয় গুণ। পুকুর ছাড়াও বিল ও নদীতেও পরিকল্পিতভাবে চাষ হচ্ছে, যা দেশের মাছের উৎপাদন বাড়াতে সহায়তা করছে।

আরও পড়ুন মাছ চাষে কোটিপতি রশিদ, প্রতিবছর সঞ্চয় ২০-২৫ লাখ টাকা খাঁচায় মাছ চাষে নদী পাড়ে ফিরেছে আশার আলো পাতে ফিরেছে বিলুপ্তপ্রায় ৪০ প্রজাতির দেশি মাছ

মৎস্য অধিদপ্তরের পরিচালক (অভ্যন্তরীণ মৎস্য) ড. মো. মোতালেব হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ‘বিগত প্রায় এক দশক ধরে দেশে মাছ চাষের একটি বিপ্লব চলছে। যেখানে সবার আন্তরিক প্রচেষ্টা ছিল। নানান দেশি মাছের জাত সংরক্ষণের মাধ্যমে সেগুলোকে পুকুরে চাষের উপযোগী করা, মৎস্য আহরণে নিষেধাজ্ঞা মেনে চলাসহ সরকারের মৎস্যবান্ধব নীতিমালার কারণে মাছের উৎপাদন বেড়েছে।’

Advertisement

এমন প্রেক্ষাপটে এ বছর ২৩ থেকে ২৯ জুলাই জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ ২০২৫ পালন করা হছে। এ বছর দিবসের প্রতিপাদ্য ‘অভয়াশ্রম গড়ে তুলি, দেশি মাছে দেশ ভরি।’

এখন দেশের হাওর ও বিলগুলোতে ছোট এবং মাঝারি অন্য মাছের জাতগুলোর প্রজননের সময় সুরক্ষা দেওয়া উচিত। তাহলে দেশে পুষ্টিকর ছোট মাছের উৎপাদন আরও বাড়ানো সম্ভব হবে।- বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবদুল ওহাব

তথ্য বলছে, বাংলাদেশে গত এক যুগে মাছের উৎপাদন এক তৃতীয়াংশের বেশি বেড়েছে। ২০১১-১২ অর্থবছরের মোট উৎপাদন ছিল ৩০ লাখ ৬২ হাজার টন। গত চার দশক ধরে বাংলাদেশের মোট মাছ উৎপাদন ছয়গুণেরও বেশি বেড়েছে। ১৯৮৩-৮৪ সালে ৭ লাখ ৫৪ হাজার টন মাছ উৎপাদন হতো।

মাছের উৎপাদন উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বাড়ায় মাথাপিছু দৈনিক মাছ গ্রহণ ৬০ গ্রাম চাহিদার বিপরীতে বেড়ে ৬৭ দশমিক ৮০ গ্রামে উন্নীত হয়েছে। দেশের মোট জিডিপির ২ দশমিক ৫৩ শতাংশ এবং কৃষিজ জিডিপির ২২ দশমিক ২৬ শতাংশ মৎস্য উপ-খাতের অবদান।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবদুল ওহাব জাগো নিউজকে বলেন, ‘এখন দেশের হাওর ও বিলগুলোতে ছোট এবং মাঝারি অন্য মাছের জাতগুলোর প্রজননের সময় সুরক্ষা দেওয়া উচিত। তাহলে দেশে পুষ্টিকর ছোট মাছের উৎপাদন আরও বাড়ানো সম্ভব হবে।’

দেশের মোট জনগোষ্ঠীর ১৪ লাখ নারীসহ প্রায় দুই কোটি তথা প্রায় ১২ শতাংশের অধিক মানুষ মৎস্য খাতের বিভিন্ন কার্যক্রমে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সম্পৃক্ত থেকে জীবিকা নির্বাহ করছে।

এছাড়া চিংড়ি ও অন্য মৎস্য পণ্য রপ্তানি করে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছে বাংলাদেশ। মাছ থেকে জাতীয় রপ্তানি আয়ের দশমিক ৯৯ শতাংশ আসছে। ২০২৩-২৪ সালে প্রায় ৭৭ হাজার টন মাছ এবং মৎস্য পণ্য রপ্তানি করে সাড়ে ৪০০ কোটি টাকা আয় হয়।

বাংলাদেশ ইলিশ উৎপাদনে বিশ্বের সর্বোচ্চ অবস্থানে রয়েছে। পাশাপাশি তেলাপিয়া উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বে চতুর্থ এবং এশিয়ায় তৃতীয় স্থানে।

দেশে মাছের উৎপাদন আরও ৩০ শতাংশ বাড়াতে সরকারি মৎস্য খামার আধুনিকায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দেশের ৫৬ জেলার বিদ্যমান ১১৩টি সরকারি মৎস্য হ্যাচারি ও খামারে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে উৎপাদন বাড়ানো হবে। এজন্য সরকারের রাজস্ব খাত থেকে প্রায় ৩৭২ কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ২০২৪ সাল থেকে শুরু হওয়া প্রকল্পটি চলমান থাকবে ২০২৮ সাল পর্যন্ত।

এনএইচ/এএসএ/এমএফএ/এএসএম