খাগাড়ছড়ির মাটিরাঙ্গা উপজেলার গোমতি ইউনিয়নে বিস্তীর্ণ মাঠে দুলছে হলুদ আভার বল সুন্দরী বরই। পোকামাকড়ের হাত থেকে রক্ষা পেতে চারদিকে নেট দিয়ে ঘেরা। শ্রমিকদের সাথে নিয়ে বাগান থেকে বরই সংগ্রহে ব্যস্ত কৃষক মাহবুব মেম্বার। স্থানীয়রা ভিড় করছেন তার বরই বাগানে। কেউ নিজ হাতে তুলে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।
Advertisement
কথা হলে মাহবুব মেম্বার জানান, তামাক চাষ ছেড়ে নিজের ১ একর ৬০ শতক জমিতে বরই বাগান করেছেন। বর্তমানে ৮৫০টি গাছ ফল দিচ্ছে। এ বছর বরই বিক্রি করে প্রায় ১২ লাখ টাকা আয় করবেন বলে মনে করেন তিনি। একসময় তামাক চাষ করলেও বর্তমানে সফল বরই চাষি হিসেবে এলাকায় পরিচিত।
পাহাড়ি জনপদে বরই চাষ লাভজনক হয়ে উঠেছে জানিয়ে সাবেক এই জনপ্রতিনিধি বলেন, ‘বল সুন্দরী, বাউকুল, আপেল কুল, কাশ্মীরী কুল মিলে চার প্রজাতির ৮৫০টি গাছ আছে বাগানে। প্রতিদিন ১০-১২ জন শ্রমিক এখানে কাজ করে সংসার চালান। চলতি মৌসুমে গাছপ্রতি ১৪-১৫ কেজি বরই এসেছে। এ বছর সব গাছেই ফল এসেছে। টানা ৫-৭ বছর ফল বিক্রি করা যাবে। বাগানে প্রথমবার খরচ হয়েছে ৪ লাখ। গত বছর প্রায় ৭ লাখ টাকার বিক্রি করলেও এ বছর ১২ লাখ টাকা বিক্রির স্বপ্ন দেখছি।’
মাহবুব মেম্বার বলেন, ‘সরকারি সহায়তা এবং প্রশিক্ষণ পেলে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে উৎপাদন বাড়াতে পারবো। পরিবহন সমস্যা ও ন্যায্যমূল্য আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। যদি সরকার এবং সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো আরও সহযোগিতা করে, তাহলে আরও লাভবান হতে পারব। দেশের ফলের চাহিদা পূরণেও ভূমিকা রাখতে পারব।’
Advertisement
আরও পড়ুন
ভালো দামে বেশি লাভের স্বপ্ন চরাঞ্চলের কৃষকের রঙিন ফুলকপি ও বাঁধাকপি চাষে সফল লক্ষ্মীপুরের জামালবাগানের নিয়মিত শ্রমিক দীপু ত্রিপুরা বলেন, ‘প্রতিদিন সকালে গাছগুলোর পরিচর্যা করি। মাটির অবস্থা দেখি। যদি শুকনো থাকে, তাহলে পানি দিই। আগাছা পরিষ্কার করে গাছের চারপাশের মাটি নরম করি। যাতে গাছ ভালোভাবে বেড়ে উঠতে পারে। পরিশ্রমের ফল যখন সুস্বাদু হয়ে বাজারে যায়; তখন খুব ভালো লাগে। বরই চাষ শুধু কাজ নয়, এটি আমাদের জীবিকারও অংশ।’
মাটিরাঙ্গা উপ-সহকারী কৃষি অফিসার মো. জয়নাল আবেদিন বলেন, ‘সঠিক নিয়মে বরই চাষ করলে কৃষকেরা ভালো লাভ করতে পারেন। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে ও সঠিক পরিচর্যার মাধ্যমে ফলন বাড়ানো সম্ভব। কৃষক মাহবুব মেম্বার ২ বছর আগে তামাক চাষ ছেড়ে বাগানটি গড়ে তোলেন। কৃষি অফিস থেকে তাকে সব ধরনের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।’
মাটিরাঙ্গা উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মো. সবুজ আলী বলেন, ‘রোদেলা উঁচু জমিতে বরই বাগান ভালো হয়। যে বাগানে যত বেশি রোদের আলো পড়বে; সেই জমির বরই তত বেশি মিষ্টি হবে। তাছাড়া গাছে তুলানামূলক রোগবালাইও কম। নতুনভাবে কেউ যদি বিভিন্ন বরইয়ের বাগান করতে পরামর্শ চান, তাকে অবশ্যই সার্বিক সহযোগিতার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হবে।’
Advertisement
এমআরবি/এসইউ/এমএস