কাজের মেয়াদ ১৮ মাস। সে কাজ শেষ হয়নি প্রায় পাঁচ বছরেও। গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার ভরতখালী বন্দর উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের চার তলাবিশিষ্ট নতুন ভবন নির্মাণে ঘটেছে এমন ঘটনা।
Advertisement
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ শেষ না করে ফেলে রেখেছেন। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সরকারি দফতরে বারবার ধরনা দিলেও সমাধান হচ্ছে না। এতে শ্রেণিকক্ষ সংকটে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
জানা যায়, ১৯৬৭ সালে সাঘাটা উপজেলা ভরতখালী ইউনিয়নের যমুনা নদীর পাড়ে ছোট টিনশেড ঘরে প্রতিষ্ঠিত যাত্রা শুরু হয় বিদ্যালয়টির। পরে ১৯৮৫ সালে এমপিওভুক্ত হলে ১৯৯৪ সালে একটি একতলা পাকা ভবন নির্মাণ করা হয়। পুরোনো ভবনটি জরাজীর্ণ হয়ে পড়ায় নতুন চারতলা ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেয় শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর।
বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানায়, নতুন একাডেমিক ভবন নির্মাণে ২০২০-২১ অর্থবছরে দরপত্র আহ্বান করা হয়। দুই কোটি ৩৮ লাখ টাকা বরাদ্দের এ কাজ পায় পাবনার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান শাওন অ্যান্ড শায়লা ট্রেডার্স। পরে ২০২০ সালের ৭ জানুয়ারি চারতলা ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। দরপত্র অনুযায়ী ১৮ মাসের মধ্যেই ভবনটির কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান বারবার সময় বাড়ানোর আবেদন করে সময়ক্ষেপণ করতে থাকে। বর্তমানে কাজ বন্ধ। এতে শ্রেণিকক্ষ সংকটে ভোগান্তিতে আছেন বিদ্যালয়টির শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
Advertisement
সরেজমিনে দেখা যায়, পুরোনো একতলা ভবনে চলছে বিদ্যালয়টির শিক্ষাকার্যক্রম। ভবনটিতে চারটি কক্ষ রয়েছে। একটি কক্ষে প্রধান শিক্ষক এবং একটিতে অন্য শিক্ষকদের বসার জন্য কয়েকটি চেয়ার ও টেবিল রয়েছে। অপর তিনটি কক্ষে ক্লাস চলে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের জন্য আছে একটি মাত্র টয়লেট। চারতলা নতুন ভবনের অবকাঠামো নির্মাণ হলেও বাকি কাজ শেষ হয়নি। ভবনের কক্ষে চেয়ার-টেবিলসহ বিভিন্ন সামগ্রী পড়ে আছে।
বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী রাজিয়া ফেরদৌসি রেমি, অপূর্ণা আক্তার ও নীলা আক্তার বুশরা বলেন, নবম-দশম শ্রেণির মানবিক, বিজ্ঞান ও ব্যবসায় শিক্ষার ক্লাস করায় অতিরিক্ত শ্রেণিকক্ষের প্রয়োজন হয়। রুম না থাকায় বাধ্য হয়ে স্কুল মাঠে ক্লাস করতে হয়। নতুন ভবনের কাজ দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে আমরা জোর দাবি জানাচ্ছি।
বিদ্যালয়ের শিক্ষক লায়লা আরজুমান বানু, হায়দার আলী ও পলি রানি দেব বলেন, একটিমাত্র টয়লেট শিক্ষক ও ছাত্রীদের ব্যবহার করতে হয়। দীর্ঘদিন থেকে এমন ভোগান্তি পোহাচ্ছি। দ্রুত এর সমাধান চাই।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আতাউর রহমান সরকার বলেন, বারবার কর্তৃপক্ষ ও ঠিকাদারকে কাজ শেষ করার কথা বলা হলেও কোনো কাজ হচ্ছে না। তিন শতাধিক ছাত্রী ও ২০ জন শিক্ষক-কর্মচারী ভোগান্তিতে রয়েছি। এমন অবস্থার জন্য অভিভাবকরা এ স্কুলে মেয়েদের ভর্তি করাতে নিরুৎসাহিত হচ্ছেন। আমরা পিছিয়ে পড়ছি।
Advertisement
এ বিষয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান শাওন অ্যান্ড শায়লা ট্রেডার্সের প্রতিনিধি মুজিবুর রহমানের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
গাইবান্ধা শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. বেলাল আহমেদ বলেন, ‘করোনার প্রভাব এবং জিনিসপত্রের দামের ঊর্ধ্বগতির জন্য ঠিকাদার কাজ করতে পারেনি। বর্তমানে কাজ বন্ধ। কাজ শুরুর জন্য ঠিকাদারকে মৌখিকভাবে তাগাদা দিচ্ছি। তাদের এ মাসের মধ্যেই কাজ শুরু করতে বলা হয়েছে। কাজ শুরু না করলে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ এইচ শামীম/এএইচ/এমএস