দেশের বিস্তীর্ণ হাওরাঞ্চলের টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে ১১ দফা প্রস্তাব দিয়েছে হাওর উন্নয়ন আন্দোলন। এছাড়া হাওরে ইজারা প্রথা বন্ধের দাবি জানিয়েছে তারা।
Advertisement
শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় প্রেস ক্লাবের আবদুস সালাম হলে ‘হাওর ও হাওরবাসীর সংকট–সমস্যা সমাধান’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এ প্রস্তাব পেশ করেন বক্তারা।
হাওর উন্নয়ন আন্দোলনের আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট ফরিদ উদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান মো. মহিউদ্দিন খান, সাবেক সচিব কারার মাহমুদুল হাসান, আ. ওয়াহাব, সাবেক অতিরিক্ত সচিব ড. মো. এমদাদুল হকসহ প্রমুখ।
মহিউদ্দিন খান বলেন, হাওরে ইজারা প্রথা বন্ধ করতে হবে, ইজারা দেওয়া জায়গাগুলো উদ্ধার করে সেগুলোকে মাছের অভয়ারণ্য ঘোষণা করতে হবে। এবং এসব জায়গায় মাছ ধরা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করতে হবে। এতে করে এসব স্থান দেশের বৃহৎ প্রজনন কেন্দ্র হতে পারে। পরে এসব পোনা হাওরে ছড়িয়ে যাবে। এছাড়া হাওর অঞ্চলে একটি কৃষি ও জলবায়ু বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয়, আঞ্চলিক ধান গবেষণা কেন্দ্র স্থাপন করার আহ্বানও জানান তিনি।
Advertisement
বক্তারা বলেন, প্রায় ২৪ হাজার বর্গকিলোমিটারজুড়ে বিস্তৃত হাওর অঞ্চল দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ১০ শতাংশ মানুষের বাসস্থান। এখানকার প্রধান জীবিকা কৃষি ও মৎস্য আহরণ। দেশের মোট ধান উৎপাদনের এক-পঞ্চমাংশ আসে এ অঞ্চল থেকে। তবে বর্ষাকালে হাওরগুলো ১০ থেকে ১৫ ফুট পানির নিচে তলিয়ে যায়, যা কৃষি ও বসবাসের জন্য অনেক বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমাদের হাওরবাসীদের ৯০ শতাংশ কৃষির ওপর নির্ভরশীল, আর বাকিরা মাছ ধরা, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগি পালনসহ বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত।
হাওরের উন্নয়নে ১১ দফা প্রস্তাব১. অকাল বন্যা প্রতিরোধে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নদী-নালা ও খাল-বিল খনন করতে হবে। ফসল রক্ষায় পরিকল্পিত মাটির বাঁধ নির্মাণ করতে হবে।
২. প্রকৃত মৎস্যজীবীদের জলমহল ইজারা দিতে হবে। জেলেদের নিয়ে শক্তিশালী ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন করতে হবে।
৩. সেচ মৌসুমে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। কৃষকদের জন্য বীজ, সার, কীটনাশক ও আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতিতে বিশেষ প্রণোদনা দিতে হবে। কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে হবে এবং সমবায় বাজার প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিতে হবে।
Advertisement
৪. প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের জন্য অবিলম্বে শস্য বীমা চালু করতে হবে।
৫. ফসল পরিবহনের জন্য সাবমারসিবল সড়ক নির্মাণ করতে হবে। প্রয়োজনে ফসলি জমি নষ্ট না করে উড়াল সড়ক নির্মাণের উদ্যোগ নিতে হবে।
৬. কৃষিভিত্তিক শিল্প, দুগ্ধ খামার, হাঁস-মুরগি পালন, তাঁত ও পাট শিল্পের বিকাশে স্বল্পসুদে ঋণ দিতে হবে। বেসরকারি বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে হবে।
৭. প্রতিটি উপজেলায় কর্মসংস্থান ব্যাংক ও প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের শাখা স্থাপন করতে হবে। বেকার যুবক, নারী, কৃষক ও মৎস্যজীবীদের সহজ-শর্তে ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থা করতে হবে।
৮. হাওরের কৃষি ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় একটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করতে হবে।
৯. আধুনিক হাসপাতাল নির্মাণ ও বিদ্যমান হাসপাতালগুলোর চিকিৎসা সুবিধা বাড়াতে হবে।
১০. সব খাসজমি সরকারের আওতায় এনে ভূমিহীন কৃষকদের মধ্যে বিতরণ করতে হবে।
১১. দারিদ্র্য-বিমোচন ও প্রশিক্ষণ।
আরএএস/এমএএইচ/জেআইএম