গত ছয়মাসে বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে পণ্য আমদানি কমেছে। এ কয়মাসে আট হাজার ৪২৩ মেট্রিকটন পণ্য কম এসেছে। গেল বছরের প্রথম ছয়মাসে আট লাখ ২৪ হাজার ৬০৬ মেট্রিকটন পণ্য আমদানি হরেও এবার আমদানি হয়েছে আট লাখ ১৬ হাজার ১৮৩ মেট্রিক টন। বৈশ্বিক মন্দা ও বাণিজ্যে নানান প্রতিবন্ধকতা এ অবস্থার জন্য দায়ী বলছেন ব্যবসায়ীরা।
Advertisement
বন্দর সূত্র জানায়, চলতি অর্থ বছরের প্রথম ৬ মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১১৫ কোটি ১৪ লাখ টাকা কম রাজস্ব আদায় হয়েছে। ওই ছয় মাসে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল তিন হাজার ৩৩৭ কোটি ৩১ লাখ টাকা। সেখানে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৩ হাজার ২২২ কোটি ১৭ লাখ টাকা। তবে গত নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি পেয়েছে। এ দুই মাসে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল এক হাজার ১৯৬ কোটি টাকা। সেখানে আদায় হয়েছে এক হাজার ৩৯৩ কোটি ৬৬ লাখ টাকা।
সূত্র জানায়, দেশের ২৪টি স্থলবন্দরের মধ্যে ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য হয় ১৬টির সঙ্গে। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি বাণিজ্য হয় বেনাপোল-পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে। গত দুই মাস আগে বেনাপোল বন্দরের শূন্য রেখায় চালু হয় কার্গো ভেহিকেল টার্মিনাল। দ্রুত পণ্য খালাস ও বাণিজ্য সম্প্রসারণে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এনবিআরের উদ্যোগে কমিটি গঠন করে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়।
বেনাপোল কাস্টমস সূত্র জানায়, চলতি অর্থ বছরের জুলাই মাসে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৪১৩ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। সেখানে আদায় হয়েছে ৪১৩ কোটি ২২ লাখ টাকা। আগস্টে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫২০ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। আদায় হয়েছিল ৪০১ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। সেপ্টেম্বরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬০৮ কোটি ৩২ লাখ টাকা। আদায় করা হয় ৪৮৯ কোটি ১১ লাখ টাকা। অক্টোবরে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৫৯৮ কোটি এক লাখ টাকা। এ মাসে আদায় হয় ৫২৪ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। নভেম্বরে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫৯৯ কোটি টাকা আর আদায় হয় ৬১৪ কোটি ৭১ লাখ টাকা। এবং ডিসেম্বর মাসে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৫৯৭ কোটি টাকা সেখানে আদায় হয়েছিল ৭৭৮ কোটি ৯৫ লাখ টাকা।
Advertisement
তবে সদ্য সমাপ্ত ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২১৬ কোটি টাকা বেশি রাজস্ব আয় হয়েছিল। ভারত থেকে যেসব পণ্য আমদানি হয় তার ওপর প্রতি মাসে নির্দিষ্ট পরিমাণে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল পাঁচ হাজার ৯৪৮ কোটি টাকা। সেখানে তারা আয় করেছিল ছয় হাজার ১৬৪ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। এ সময় আমদানি হয়েছিল ১৭ লাখ ২১ হাজার ৭৮০ টন পণ্য।
কাস্টমস সূত্র জানায়, ভারত থেকে যেসব পণ্য আমদানি হয় তার ওপর প্রতিমাসে নিদিষ্ট পরিমাণে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। আমদানি স্বাভাবিক থাকলে লক্ষ্যমাত্রার কাছাকাছি পৌঁছায় কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। কিন্তু আমদানি কমে যাবার কারণে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারছে না বেনাপোল কাস্টমস।
আরও পড়ুন বেনাপোল বন্দর দিয়ে পণ্য রপ্তানিতে নতুন শর্ত ৯ মাস ধরে অচল বেনাপোল বন্দরের স্ক্যানিং মেশিন বেনাপোল বন্দর দিয়ে চাল এলেও প্রভাব নেই বাজারেবেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশন যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আবু তাহের ভারত জানান, বছরে ভারত থেকে আমদানি হয় ৫০ হাজার কোটি টাকার বিভিন্ন ধরনের পণ্য এবং ৮ হাজার কোটি টাকার বিভিন্ন ধরনের পণ্য রফতানি হয়ে থাকে। যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেশির ভাগ আমদানিকারকরা বেনাপোল বন্দর ব্যবহারে আগ্রহী। তবে দ্রুত পণ্য খালাস নানান প্রতিবন্ধকতায় হয়রানি হতে হয়। বাণিজ্য সহজীকরণ ব্যবস্থা নিশ্চিত হলে আমদানি ও রাজস্ব বাড়বে।
যশোর চেম্বার অব কমার্সের যুগ্ম-সম্পাদক এজাজ উদ্দিন টিপু জানান, ডলার সংকটসহ নানা প্রতিকূল পরিবেশে কয়েক বছর ধরে দেশে ব্যবসায়ীক মন্দাভাব বিরাজ করছে। আমদানি কম হলে রাজস্ব আদায়ও কম হবে। তবে বেনাপোল বন্দরেও রয়েছে অনেক সমস্যা। বেনাপোল বন্দরে নেই প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম। এতে করে পণ্য খালাসে গতি কমে যাচ্ছে।
Advertisement
যশোর চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি মিজানুর রহমান খান জানান, সরকার পরিবর্তনের কারণে ব্যবসা-বাণিজ্য কিছুটা ছন্দপতন হয়েছে। ব্যবসায়ীরা দেশের পরিস্থিতি কোথায় যায় সেটি দেখছেন। ডলার সংকটের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন আমদানিকারকরা। আবার কিছু এলসি করা গেলেও ডলারের বিনিময় হার বেশি লাগছে। এতে করে পণ্যের দাম বেশি লাগছে। অনুকূল পরিবেশ থাকলে সামনের মাসগুলোতে বাণিজ্য গতি ফিরে আসবে। ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে কাস্টমসের নানা হয়রানির অভিযোগ আসছে। হয়রানি ও উৎকোচের পরিমাণটা কমালে রাজস্ব আদায়ও বাড়বে বলে আশা করছি। চেম্বারের পক্ষ থেকে বিষয়টি নিয়ে দ্রুত কাস্টমসের সঙ্গে বৈঠক করার চিন্তা ভাবনা করা হচ্ছে।
বেনাপোল বন্দরের পরিচালক মামুন কবীর তরফদার জানান, ইতোমধ্যে বেনাপোল বন্দরে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ সমাপ্ত হয়েছে। পুরো বন্দরে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। অবকাঠামো উন্নয়ন কাজ অব্যাহত রয়েছে। আশা করছি সব কাজ শেষ হলে বাণিজ্য বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখবে।
বেনাপোল কাস্টম হাউজের অতিরিক্ত কমিশনার এইচ এম শরিফুল হাসান জানান, জুলাই-আগস্ট মাসে দেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলার কারণে ব্যবসায়ীরা পণ্য আমদানি থেকে বিরত ছিলেন। যে কারণে আমদানি কমে গেছে। আর আমদানি কমলে আমাদের রাজস্ব আদায়ও কমে যাবে এটা স্বাভাবিক। এখন ডলারের পরিস্থিতিও স্থিতিশীল। তবে গেল দুই মাস (নভেম্বর-ডিসেম্বর) আমাদের আমদানি ও রাজস্ব আদায়ের হার ভালো। আশা করছি সামনের মাসগুলোতে আমাদের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়ে যাবে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এনবিআরের সদস্য কাজী মোস্তাফিজুর রহমান জানান, বাণিজ্য সম্প্রসারণে এনবিআরের উদ্যোগে কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটি ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে। আশাবাদী সামনের দিনে বাণিজ্য বৃদ্ধি ও সহজীকরণে এ উদ্যোগ বড় ভূমিকা রাখবে।
মো. জামাল হোসেন/আরএইচ/এএসএম