রাজনীতি

বিএনপির ‘কথার টোন আওয়ামী লীগের সঙ্গে মিলে যাচ্ছে’: নাহিদ ইসলাম

অন্তর্বর্তী সরকারের ‘নিরপেক্ষতা’ প্রশ্ন, শিক্ষার্থীদের নতুন রাজনৈতিক দল গঠনে সরকারের ভূমিকা এবং নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের করা মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া দিচ্ছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র নেতারা। যাদের মধ্যে রয়েছেন বর্তমান সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের তরুণ উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম।

Advertisement

নির্বাচন প্রসঙ্গে বিএনপির সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের টানাপোড়েনের মধ্যেই অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম শুক্রবার (২৪ জানুয়ারি) বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকার নিয়ে বিএনপির ‘কথার টোন আওয়ামী লীগের সঙ্গে মিলে যাচ্ছে’। তিনি এ-ও বলেছেন, তিনি নিজে রাজনৈতিক দলে যোগ দিলে সরকার থেকে বের হয়ে যাবেন।

মির্জা ফখরুলের নিরপেক্ষ সরকারের দাবিকে ‘আরেকটা এক-এগারো সরকার গঠনের ইঙ্গিত’ হিসেবে ব্যাখ্যা করে গত বৃহস্পতিবার ফেসবুকে পোস্ট দেন নাহিদ ইসলাম। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এক-এগারো এবং মাইনাস টু-এর আলাপটা কিন্তু সর্বপ্রথম বিএনপিই রাজনীতির মাঠে এনেছে কিছুদিন আগে।’

আরও পড়ুন

Advertisement

অন্তর্বর্তী সরকার নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করতে পারছে না: ফখরুল  বিএনপি মহাসচিবের নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আরেকটি এক-এগারোর ইঙ্গিত: নাহিদ

গত বুধবার বিবিসি বাংলাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে দলের অবস্থান নিয়ে বিএনপি মহাসচিবের বক্তব্য ঘিরে মূলত আলোচনার সূত্রপাত। বর্তমান সরকার নিরপেক্ষ থাকতে না পারলে নির্বাচন করতে নিরপেক্ষ সরকারের প্রয়োজন হবে এবং শিক্ষার্থীরা রাজনৈতিক দল গঠন করলে সরকার থেকে বেরিয়ে আসা উচিত। মির্জা ফখরুলের এমন বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া আসে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তরফ থেকে।

বর্তমান সরকারের দুই তরুণ উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহর প্রতিক্রিয়ার পর পাল্টাপাল্টি প্রতিক্রিয়া চলছে।

এবার অভ্যুত্থান ও আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বিএনপি ও অংশীজনদের সমর্থনেই সরকার গঠন হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বিএনপি মহাসচিবের ‘নিরপেক্ষতা’ নিয়ে বক্তব্য নিয়ে ‘সন্দেহ’ প্রকাশ করেন।

বর্তমান সরকারকে অস্থিতিশীল করতে বা সরাতে ‘দেশি-বিদেশি চক্রান্তের’ পাশাপাশি আওয়ামী লীগের সাম্প্রতিক অবস্থানের সঙ্গেও মির্জা ফখরুলের ওই বক্তব্যের মিল দেখছেন বলে জানান নাহিদ ইসলাম।

Advertisement

তিনি বলেন, সম্প্রতি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ আলী আরাফাত ‘সে কিন্তু স্ট্যাটাস দিয়েছে যে এটা অবৈধ ও অনির্বাচিত সরকার, একটা নিরপেক্ষ সরকার লাগবে, এর আন্ডারে সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়া সম্ভব না। সো একই টোনে আমরা যখন কথা বলতে দেখছি, এটা কিন্তু একটা সন্দেহ তৈরি করে।

আওয়ামী লীগের ফেসবুক পেজ থেকে শুক্রবার দেওয়া একটি পোস্টে মোহাম্মদ আলী আরাফাতকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সরকার ‘অনির্বাচিত ও অসাংবিধানিক সরকার’। এই সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচন হবে না এবং পরবর্তী নির্বাচন ‘একটি নতুন (তত্ত্বাবধায়ক) সরকারের অধীনে হতে হবে।

এ বিষয়ে নাহিদ ইসলাম বলেন, আমি মনে করি না যে এটা তারা (বিএনপি) ওই উদ্দেশ্য থেকে বলেছে। কিন্তু তাদের কথার টোনটা কিন্তু আওয়ামী লীগের সেই টোনের সঙ্গে মিলে যাচ্ছে।

‘বিচার কার্যক্রম, সংস্কার, ও নির্বাচন এ সবগুলোই বর্তমান সরকারের অগ্রাধিকার হলেও বিএনপি কেন জানি মনে করে এই সরকারটা হয়েছে শুধু একটি নির্বাচন দেওয়ার জন্য’- যোগ করেন তিনি।

আরও পড়ুন

ছাত্রদের প্রতিনিধি সরকারে রেখে দল নির্বাচন করলে মানবে না বিএনপি  অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে: রিজভী

নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন প্রসঙ্গে এই উপদেষ্টা বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারকে তো আমরা নিরপেক্ষই মনে করছি। বিএনপি কেন মনে করছে না নিরপেক্ষ আচরণ, বিএনপির এটা স্পষ্ট করা উচিত।

তার কথায়- ‘নির্বাচনের সময় এগিয়ে এলে এসব বিষয়ে সুস্পষ্টভাবে বলা সম্ভব বা কোনো অভিযোগ থাকলে নিরপেক্ষতার স্বার্থে কী পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে সেটা তখন সরকার বিবেচনায় নিতে পারবে।’

‘প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে বা সাংবিধানিক পদে যদি বিএনপিপন্থি লোকজন থাকে, সেটারও নিরপেক্ষতা লাগবে কি না, তাহলে সেটাও বিবেচনা করতে হবে। কিন্তু এখন তো এটার সময় আসেনি।’

বিএনপি সম্প্রতি দ্রুত নির্বাচন দেওয়ার কথা বলেছে। আগামী জুলাই-আগস্টেও নির্বাচন করা সম্ভব বলে মন্তব্য করেছেন মির্জা ফখরুল।

এ নিয়ে নাহিদ ইসলাম বলেন, এ বছরের শেষ থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচনের যে সম্ভাব্য সময়সীমা প্রধান উপদেষ্টা দিয়েছেন তাতে অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদকাল এবং নির্বাচনের একটি সম্ভাব্য সময়সীমা দেওয়া হয়েছে। সে পর্যন্ত ধৈর্য রেখে ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে সামনে এগোনো প্রয়োজন।

সূত্র: বিবিসি বাংলা

এমকেআর