বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন তীব্র হওয়ার আগেই দেশ ছাড়েন ঢালিউড অভিনেতা জায়েদ খান। এখন তিনি অবস্থান করছেন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে। সম্প্রতি তাকে দেখা গেছে মোস্তফা সরয়ার ফারুকী নির্মিত ছবি ‘৮৪০’-এ। কবে দেশে ফিরবেন, যুক্ত হবেন নতুন কাজে। এ রকম নানান জিজ্ঞাসা নিয়ে জাগো নিউজের সঙ্গে কথা বলেন জায়েদ খান।
Advertisement
জাগো নিউজ: অভিনেত্রী নিপুণকে বহিষ্কার করেছে শিল্পীসমিতি। এ বিষয়ে আপনার প্রতিক্রিয়া জানতে চাই।
জায়েদ খান: শিল্পীসমিতি যা করেছে, তা অনেক আগেই করা উচিত ছিল। ইন্ডাস্ট্রির মানুষদের তার সঙ্গে সম্পর্কই রাখা উচিত না। একটা ইন্ডাস্ট্রির শিল্পীদের সম্মান তিনি কোথায় নিয়ে গেছেন! নায়িকারা হচ্ছে ভালোবাসার প্রতীক, তারা মানুষের সঙ্গে সাবলীল থাকবে, ভালোভাবে থাকবে। মৌসুমী আপাও তো নির্বাচন করেছিলেন, তার বেলায় তো এমনটা হয়নি! একটা মানুষ কত নোংরা হতে পারে যে, চলে যাওয়ার পরও শিল্পীসমিতির প্যাড ব্যবহার করে বিবৃতি দিতে পারে। আমি তো একাধিকবার ছিলাম, এ রকম অন্যায় করিনি। জোর করে একটা মানুষ নির্বাচিত প্রতিনিধিকে বসতে দেয় না, কত বৈষম্য যে আমার সঙ্গে হয়েছে! তার এসব কাজে শিল্পী হিসেবে নিজেরই লজ্জা লাগে।
জাগো নিউজ: পরপর দুজন শিল্পী মারা গেলেন। তাদের শেষশ্রদ্ধা জানানোর আয়োজনে শিল্পীরা আপনার অভাব অনুভব করেছে। আপনি কী এমন করতেন, যে কারণে সবাই আপনার কথাই বলছিল?
Advertisement
জায়েদ খান: যতদিন শিল্পীসমিতি থাকবে, ততদিন তারা জায়েদ খানের অভাব অনুভব করবেন। আমি শুধু সাধারণ সম্পাদক ছিলাম না, শিল্পীদের সেবক ছিলাম। করোনার মধ্যে যতগুলো লাশ কাঁধে করে দাফন করতে নিয়েছি, সেইটা বিরল। সাংগঠনিক ক্ষমতা সবার থাকে না। অমানষিক পরিশ্রম করে শিল্পীসমিতিকে আমি যেভাবে কাঠামো দিয়েছি, সামনের দিনে কারো পক্ষে সেটা আর সম্ভব না। কেউ পারবে না।
আরও পড়ুন: পর্দার টিক্কা খান দিলেন শান্তির বার্তা শিগগির ফিরছেন না জায়েদ খান সবাই আমাকে ‘বাংলাদেশের সালমান খান’ বলেন: জায়েদ খানজাগো নিউজ: দেশে ফিরছেন না কেন? আপনি কি ভয় পাচ্ছেন?
জায়েদ খান: না না, আমি ভয় পাচ্ছি না। দেশে তো আর বাবা-মা নাই, ভাই-বোন নাই। আমি এই জায়গায় (নিউইয়র্কে) একটা কোম্পানির সঙ্গে কাজ করতেছি। যেহেতু দেশে অনেক দিন কাজ করলাম, দেশে কাজও কম, রাজনৈতিক পরিবেশ-পরিস্থিতির কারণে অনেক শিল্পী কাজ পাচ্ছেন না, সবাই তো বিদেশে এসে কাজ করছেন। আমিও বিভিন্ন জায়গায় শো করছি। এখানে আমি বসে নেই। দেশে ফেরার ব্যাপারে আমার ভয়ের কোনো কারণ নেই। আমি তো কোনো অন্যায় করে আসিনি, কোনো অপরাধ করে আসিনি। শিল্পীরা কখনো অন্যায়-দুর্নীতি করতে পারে না। আপনি কোনো একটা দলকে পছন্দ করতে পারেন, সেটা আপনার ব্যক্তিগত ব্যাপার। শিল্পদের ব্যক্তিগত মতাদর্শ থাকতে পারে। আপনারা দেখবেন, তাদের দ্বারা কোনো দুর্নীতি হচ্ছে কি না। আমি দেশের আইন অমান্য করেছি? আমি কারোও ক্ষতি করেছি? অবৈধভাবে টাকা ইনকাম করেছি? আমি কষ্ট করে শৈল্পিক লাইন দিয়ে অর্থ উপার্জন করেছি, কোনো অন্যায় কাজ করিনি। অন্যায়ের কাছে মাথা নতো করিনি। যদি করতাম, তাহলে শিল্পীসমিতিই আমার অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলতো। আমি যখন সমিতিতে ছিলাম, দুপুরের খাবারও নিজের টাকায় খেয়েছি। চার বছরে কোনো দিন সমিতির টাকায় খাইনি।
জাগো নিউজ: আপনি বলছেন শিল্পীরা অন্যায় করে না। কিন্তু অনেক শিল্পীই তো ছাত্র-আন্দোলনের বিপক্ষে ছিলেন এবং কাজ করেছেন। তাদের কথা কেন এড়িয়ে যাচ্ছেন?
Advertisement
জায়েদ খান: আমি তাদের কথা কখনও বলবো না। দলীয় মতাদর্শের হয়ে যে কেউ, যে কোনো কিছু করতে পারে। সেটা তাদের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত, তাদের ব্যক্তিগত ব্যাপার। সেটা নিয়ে কথা বলার অধিকার আমার নাই। আমি আমারটা বলতে পারবো, কারো কোনো ব্যক্তিগত বিষয়ে আমি বলতে পারি না। এ ব্যাপারে আমার কোনো মন্তব্য নাই। রাজনৈতিক ব্যাপারে জিজ্ঞেস করবেন না প্লিজ। আমি তো রাজনৈতিক লোক না। রাজনৈতিক প্রশ্ন আসলে আমার জন্য না।
আরও পড়ুন: পদে বসবেন নিপুণ, যা বলছেন জায়েদ খান ও তার আইনজীবী খালেদ মুহিউদ্দীনের সঙ্গে ঠিকানায় যুক্ত হলেন জায়েদ খানজাগো নিউজ: আপনাকে ‘৮৪০’-এ দেখা গেছে। পরিচিতরা আপনার অভিনয় দেখে কোনো প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন?
জায়েদ খান: সবাই ভালো বলছেন। আমি আসলে ডিরেক্টরিয়াল ম্যাটেরিয়াল। আমাকে পরিচালকরা সুন্দর করে ব্যবহার করলে ভালো কাজ করতে পারি। তার প্রমাণ ‘৮৪০’। দেশে একটা রাজনৈতিক অস্থিরতা চলছে। এটা নিয়ে আর বলার কিছু নাই। এখন অনেক কাজ কম। আশা করি আঁধার কেটে যাবে। আমি একটা জিনিস বুঝে গেছি, যারা ভালো পরিচালক, তাদের সঙ্গে কাজ করতে হবে। যারা তোমার কাছ থেকে অভিনয়টা বের করে নেবে, তাদের সঙ্গে কাজ করতে হবে। আমি যা করবো, সেটাই ওকে হয়ে যাবে – এ রকম পরিচালকদের সঙ্গে কাজ করা যাবে না। শিল্পীরা কাদা-মাটি, এদের ভেতর থেকে অভিনয়টা বের করে নিয়ে আসতে পারে, সেরকম পরিচালকদের সঙ্গে কাজ করতে হবে।
জাগো নিউজ: যুক্তরাষ্ট্রে আছেন, হলিউডের কোনো কাজে যুক্ত হওয়ার চেষ্টা করছেন না?
জায়েদ খান: না ভাইয়া, মিথ্যা কথা বলে কোনো লাভ নাই। হলিউড গেছে পুড়ে। পুরো ক্যালিফোর্নিয়া, যেখানে হলিউডের শুটিং হয়, সেইখানে দাউদাউ আগুনের দাবানলে সমস্ত আর্টিস্টদের বাড়ি পুড়ে গেছে। তারা এখন খারাপ সময় পার করছে। এখন তাদের এইগুলো মাথায় নাই আর আমারও ট্রাই করার সুযোগ নাই। পরিবেশ-পরিস্থিতি নরমাল হলে আর আল্লাহ যদি হলিউড কপালে লেখে, হয়ে যেতে পারে কোনোদিন। মানুষের অসাধ্য কিছু নাই। আল্লাহর ইচ্ছে।
জাগো নিউজ: আপনাকে ধন্যবাদ
জায়েদ খান: দোয়া করো।
এমআই/আরএমডি/এএসএম