ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি ও চরমোনাই পীর সৈয়দ মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেছেন, ব্রিটিশসহ অন্যান্য মাধ্যমে বিচার পরিচালনা করার কারণে সমাজ ও রাষ্ট্রে অশান্তি, অসুন্দর, সত্যকে মিথ্যা, মিথ্যাকে সত্য করার বহু প্রবণতা আছে। মুসলমান সর্বক্ষেত্রে মানবরচিত আইনের পরিবর্তে কোরআনের আইন বাস্তবায়ন করবে। তারপরও অনেক মুসলমান আইন ও রাষ্ট্র পরিচালনার বিষয়ে ইসলামকে গুরুত্ব দিতে চায় না।
Advertisement
রোববার (১৯ জানুয়ারি) বিকেলে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনের শহীদ শফিউর রহমান মিলনায়তনে ইসলামী আইনজীবী পরিষদের উদ্যোগে কেন্দ্রীয় সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, সৃষ্টি যার আইনও হবে তার। সর্বক্ষেত্রে যদি সৃষ্টিকর্তার (আল্লাহর) অগ্রাধিকার থাকে তবে তার নীতি ও আদর্শ অনুযায়ী বিচার বিভাগসহ সবকিছু চলবে, এটাই বাস্তবতা।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির বলেন, মুসলমান দাবি করলে সর্বক্ষেত্রে আল্লাহর আইন মানতেই হবে। ইসলামী নীতি-আদর্শ বাস্তবায়ন করলে ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে শুধু শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে।
Advertisement
মুফতি রেজাউল করীম বলেন, অনেকে ইসলামের আইনের কথা শুনলে ভয় পায়। অথচ সম্পত্তি বণ্টনে ইসলামের বিধান অনুসরণ করা হয়। এখানে কোনো বৈষম্য আছে বলে কখনো কেউ বলতে পারেনি।
তিনি বলেন, কেউ না বুঝে ইসলামী আইনের মধ্যে কঠোরতা রয়েছে বলে প্রচার করে। এজন্য প্রকৃত অর্থে ইসলামকে আগে বুঝতে হবে। ইসলামে চুরি করলে হাত কেটে দেওয়া হয় এটা সঠিক। কিন্তু ইসলাম সব চোরের হাত কাটার নির্দেশ দিয়েছে কি না এটা জানা থাকা দরকার।
আরও পড়ুন সংস্কার ও নির্বাচনে বিরোধ নেই, দুটো একসঙ্গে চলতে পারে: ফখরুলসৈয়দ মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, চোর দুই প্রকার, একটি অভাবী, আর একটি স্বভাবী। মন্ত্রী-এমপি যারা রাষ্ট্রীয় অর্থ-সম্পদ চুরি করে বিদেশে পাচার করে, এরা অভাবী চোর নয়, স্বভাবী চোর। অভাবী চোরের হাত কাটা নির্দেশ ইসলামে নেই। ইসলাম স্বভাবী চোরদের হাত কেটে দিতে বলেছে। বাংলাদেশের একজন স্বভাবী চোরের হাত কেটে দেওয়া হলে এ দেশে চুরি থাকবে না। তাই বাংলাদেশে চুরি বন্ধে হাত কাটার আইন থাকতে হবে।
চরমোনাই পীর বলেন, ফ্যাসিস্ট তাড়িয়েছি, আবার নতুনভাবে যেন ফ্যাসিস্টের জন্ম না হয় সেদিকে সবাইকে নজর রাখতে হবে। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ছেলে, বাবা বা আত্মীয় চেনে না, যে যখন অপরাধ করবে ইসলামী আন্দোলন তার বিরুদ্ধে তখন রাজপথে ঝাঁপিয়ে পড়বে।
Advertisement
তিনি আরও বলেন, ৫৩ বছরে একবার, দুইবার নয়- পাঁচবার দুর্নীতিতে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন বানিয়েছে অতীতের শাসকরা। এই দুর্নীতিবাজদের রাষ্ট্র পরিচালনার থেকে দূরে রেখে পরিবর্তন আনতে হবে। সৎ, যোগ্য ও ন্যায়পরায়ণ মানুষকে রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করতে হবে। দেশে শান্তি চাইলে সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় ইসলামী আদর্শ বাস্তবায়ন করা জরুরি। মুসলমান হয়ে আল্লাহর ওপর ঈমান এনেছি, তাই সবাইকে মানতে হবে, সৃষ্টি যার আইন হবে তার। আইনজীবীদের ন্যায়ের পক্ষে আইনি লড়াই করতে হবে। শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হকসহ অনেকেই ন্যায়ের পক্ষে লড়াই করেছেন।
সম্মেলনে তিনি আগামী ২০২৫-২০২৬ সেশনের জন্য অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আতিয়ার রহমানকে সভাপতি, অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আবদুল বাসেতকে সিনিয়র সহ-সভাপতি, অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ হারুন অর রশিদ ও অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ মশিউর রহমানকে সহ-সভাপতি, অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ হানিফ মিয়াকে সাধারণ সম্পাদক ও অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ বায়জিদ হোসেনকে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক করে নতুন কমিটি ঘোষণা করেন।
ইসলামী আইনজীবী পরিষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট লুৎফর রহমান শেখের সভাপতিত্বে ও অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ হানিফ মিয়ার পরিচালনায় সম্মেলনে সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ও বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন, সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ও বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের সভাপতি অ্যাডভোকেট এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের আইনজীবী অ্যাডভোকেট শেখ আতিয়ার রহমান, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট শওকত আলী হায়দার প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
এএএম/ইএ/জিকেএস