এক সময় রংয়ের (পেইন্ট) ব্যবহার হতো শুধু বাড়িঘর, অফিস, আদালতসহ বিভিন্ন স্থাপনাতে। কিন্তু এর ব্যবহারে সৌন্দর্যের পাশাপাশি স্থায়িত্ব কয়েকগুণ বাড়ায় প্রায় সব ধরনের অবকাঠামোর পাশাপাশি নানা পণ্যেও রংয়ের ব্যবহার বাড়ছে। উচ্চবিত্ত-মধ্যবিত্তের সঙ্গে নিম্ন-মধ্যবিত্তরাও এখন এর ক্রেতা। পাশাপাশি এর সঙ্গে জড়িত রয়েছে অসংখ্য শিল্পও।
Advertisement
তবে সরকার নতুন করে শুল্ক-কর বাড়ানোতে রং করার খরচ বাড়বে প্রায় ৬ শতাংশ। অর্থাৎ আগে যে পণ্য বা অবকাঠামোতে ১০০ টাকায় রং করা যেত, এখন সেটা রাঙাতে খরচ হবে ১০৬ টাকা।
গত ৯ জানুয়ারি মূল্য সংযোজন কর (মূসক/ভ্যাট) ও সম্পূরক শুল্ক বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। নতুন হার ইতোমধ্যে কার্যকর হয়েছে। এতে রংয়ের ক্ষেত্রে সরকার আমদানি ও সরবরাহ দুই স্তরের শুল্ক বাড়িয়েছে। রং আমদানিতে ২০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক (এসডি) বাড়িয়ে ৩০ শতাংশ করা হয়েছে। এছাড়া সরবরাহ পর্যায়ে শুল্ক বেড়েছে ৫ থেকে ১০ শতাংশ।
এতে রং করার ক্ষেত্রে ভোক্তা পর্যায়ে খরচ প্রায় ৫ দশমিক ৭৫ শতাংশ বাড়বে বলে জানান বাংলাদেশ পেইন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিএমএ) সাধারণ সম্পাদক অরুন মিত্র । তিনি জাগো নিউজকে বলেন, আমাদের রংয়ের কাঁচামালের ৯৮ শতাংশই আমদানি নির্ভর। প্রতিটি আমদানিতে কাস্টম ডিউটি, এসডি, আরডি (নিয়ন্ত্রক শুল্ক), ভ্যাট, দুই ধরনের আয়কর মিলে প্রায় ৫০ শতাংশ শুল্ক/কর আগে থেকেই রয়েছে। এর ওপর নতুন করে পণ্যের ভ্যালু এডিশনের ওপরে ১০ শতাংশ, আর ১৫ শতাংশ কর বসানো হলো। যেটা বেড়েছে, সেটা মিলিয়ে খরচ ৭৫ শতাংশ বেড়েছে। যা ৫ দশমিক ৭৫ শতাংশ সরাসরি পণ্যের ওপর পড়বে। সেজন্য আগে যে পণ্য ১০০ টাকায় বিক্রি করতাম, সেটা এখন ১০৬ টাকায় বিক্রি করতে হবে।
Advertisement
অরুন মিত্র বলেন, হুট করে এভাবে দাম বাড়ানো হলে এর প্রভাব যেমন সাধারণ মানুষের মধ্যে পড়ছে, তেমনি কোম্পানিগুলোও বড় ক্ষতির মুখে পড়ছে। দেশে রক্সি, রোমানা, পেইলাকের মতো অনেক কোম্পানির কারখানা আগেই বন্ধ হয়ে গেছে। সে তালিকা এখন আরও বড় হবে।
তিনি বলেন, আসবাব, আবাসন, অন্যান্য অবকাঠামোতে রং করার প্রবণতা এখন কমে যাবে। ফলে স্থাপনাগুলোর স্থায়িত্ব কমে যাবে। দেশের অবকাঠামোগত লোকসান বাড়তে থাকবে।
বিপিএমএ সূত্রে জানা গেছে, দেশে ৩৮টি নিবন্ধিত রংয়ের কোম্পানি রয়েছে। এছাড়া আরও ৮৮টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যারা নিবন্ধিত নয়, স্থানীয়ভাবে ছোট পরিসরে রং উৎপাদন করে।
সরেজমিনে বাজার পরিদর্শন করে দেখা গেছে, ৩.৬ লিটারের বার্জার ডিস্টেম্পারের কৌটার দাম আগে ছিল ৫৯০ টাকা। ছয় শতাংশ বাড়ায় নতুন দাম হবে ৬২৫ টাকা। এতে খরচ বাড়বে ৩৫ টাকা। আর বার্জার প্লাস্টিক ৩.৬ লিটারের কৌটার দাম আগে ছিল ১৪৩৫ টাকা। নতুন দাম হবে ১৫২১ টাকা, এতে গ্রাহককে বাড়তি গুনতে হবে ৮৬ টাকা। বার্জার এনামেল ০. ৯১ লিটারের দাম আগে ছিল ৩৯৫ টাক। নতুন দাম হবে ৪১৯ টাকা, গ্রাহকের খরচ বাড়বে ২৪ টাকা।
Advertisement
বাংলাদেশে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে প্রথম পেইন্টিং কোম্পানির যাত্রা শুরু হয় ১৯৫২ সালে এলিট পেইন্টসের হাত ধরে। এর এক বছর পরই পেইন্টিং ইন্ডাস্ট্রিতে আসে রকিস পেইন্টস, যা এখন বন্ধ। এরপর একে একে বাংলাদেশ কার্যক্রম শুরু করে বিভিন্ন দেশি-বিদেশি পেইন্টিং কোম্পানি। এর মধ্যে অন্যতম অবস্থানে রয়েছে বার্জার এবং এশিয়ান পেইন্টস।
শুল্ক/কর বাড়ানো নিয়ে বার্জার বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রূপালী হক চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, বছরের মাঝখানে এভাবে শুল্ক বাড়ানোে উচিত হয়নি। এর জন্য আমাদের সব কোম্পানিকে রংয়ের দাম বাড়াতে হবে। কারণ খরচ এত বাড়তি, কোনো কোম্পানি সমন্বয় করে দাম ঠিক রাখতে পারবে না। যার প্রভাব সাধারণ ভোক্তার কাঁধে পড়বে।
শিল্প সংশ্লিষ্টরা আরও বলছেন, এমনিতে দেশের ডলারের ক্রমাগত দাম বাড়ানো ও এলসি খোলায় জটিলতায় পেইন্ট শিল্পের দুর্দশা চলছে গত কয়েক বছর ধরে। এর মধ্যে হুট করে এমন শুল্ক বৃদ্ধি মরার ওপর খাঁড়ার ঘা এর মতো।
এনএইচ/এএমএ/এএসএম