পাকিস্তান থেকে ৫০ হাজার মেট্রিক টন আতপ চাল কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। সেই সঙ্গে ভারত থেকে ৫০ হাজার মেট্রিক টন নন-বাসমতি সিদ্ধ চাল কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই দুই দেশ থেকে দুই ধরনের চাল আনতে মোট খরচ হবে ৫৮১ কোটি ৪১ লাখ ৫৪ হাজার টাকা।
Advertisement
চাল কেনার এই অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি। বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) সচিবালয়ে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠক হয়।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, খাদ্য মন্ত্রণালয় পাকিস্তান থেকে 'জিটুজি' পর্যায়ে ৫০ হাজার মেট্রিক টন আতপ চাল কেনার প্রস্তাব দেয়। প্রস্তাবটি সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি পর্যালোচনা করে অনুমোদন দিয়েছে।
সূত্রটি জানিয়েছে, চলতি (২০২৪-২৫) অর্থবছর রাষ্ট্রীয় জরুরি প্রয়োজনে ও জনস্বার্থে আন্তর্জাতিক উৎস থেকে ৬ লাখ মেট্রিক টন চাল আমদানির জন্য ‘অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি’র অনুমোদন রয়েছে।
Advertisement
এর পরিপ্রেক্ষিতে দেশের সরকারি খাদ্য মজুত বৃদ্ধি করে সরকারি বিতরণ ব্যবস্থা সচল রাখার স্বার্থে ৫০ হাজার মেট্রিক টন আতপ চাল জিটুজি পদ্ধতিতে পাকিস্তান থেকে আমদানির জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে প্রস্তাব পাঠানো হয়। বাংলাদেশের প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে পাকিস্তান চাল সরবরাহের আগ্রহ ব্যক্ত করে পত্র পাঠায়।
পরবর্তীসময়ে দুই দেশেরে মধ্যে নেগোসিয়েশনের মাধ্যমে নির্ধারিত প্রতি মেট্রিক টন ৪৯৯ মার্কিন ডলার হিসাবে মোট ২ কোটি ৪৯ লাখ ৫০ হাজার মার্কিন ডলারে ৫০ হাজার মেট্রিক টন আতপ চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ ৩০৪ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি অনুমোদন দেওয়ায় এখন এই চাল পাকিস্তান থেকে নিয়ে আসা হবে।
এদিকে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের আরেক প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে ভারত থেকে ৫০ হাজার মেট্রিক টন নন-বাসমতি সিদ্ধ চাল আমদানির অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি। আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে সংগ্রহ করা এই চাল আমদানিতে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ২৭৭ কোটি ২ লাখ ৫৪ হাজার টাকা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দেশের সরকারি খাদ্য মজুত বৃদ্ধি করে সরকারি বিতরণ ব্যবস্থা সচল রাখার স্বার্থে ৫০ হাজার মেট্রিক টন নন-বাসমতি সিদ্ধ চাল আমদানির জন্য আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বান করা হলে ছয়টি দরপত্র জমা পড়ে। ছয়টি প্রস্তাবই আর্থিক ও কারিগরিভাবে রেসপনসিভ হয়।
Advertisement
দরপত্রের প্রক্রিয়া শেষে টিইসির সুপারিশে রেসপনসিভ সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান ভারতের মেসার্স গুরুদিও এক্সপোর্টস করপোরেশন প্রাইভেট লিমিটেডের কাছ থেকে প্রতি ৫০ হাজার টন নন-বাসমতি সিদ্ধ চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এক্ষেত্রে প্রতি মেট্রিক টন চালের মূল্য ধরা হয়েছে ৪৫৪.১৪ মার্কিন ডলার। ফলে ৫০ হাজার টন নন-বাসমতি সিদ্ধ চাল আমদানিতে মোট ব্যয় হবে ২ কোটি ২৭ লাখ ৭ হাজার ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ ২৭৭ কোটি ২ লাখ ৫৪ হাজার টাকা।
এর আগে গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠকে ভারত থেকে ৫০ হাজার টন নন-বাসমতি সিদ্ধ চাল আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়। এতে ব্যয় ধরা হয় ২৭৫ কোটি ৩০ লাখ ৪০ হাজার টাকা।
এর আগে গত বছরের ৪ ও ১৮ ডিসেম্বর ভারত থেকে ৫০ হাজার টন করে নন-বসমতি সিদ্ধ চাল আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়। ৪ ডিসেম্বর আমদানির অনুমোদন দেওয়া চালের মূল্য ধরা হয় ২৮০ কোটি ৬২ লাখ টাকা। আর ১৮ ডিসেম্বর আমদানির অনুমোদন দেওয়া চালের মূল্য ধরা হয় ২৭৪ কোটি ২০ হাজার টাকা।
এদিকে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠকের পাশাপাশি অর্থ উপদেষ্টার সভাপতিত্বে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠত হয়। এই বৈঠকে রাষ্ট্রীয় জরুরি প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতি অনুসরণ করে ৩ লাখ মেট্রিক টন চাল ক্রয়ের জন্য পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা ২০০৮ এর বিধি ৮৩ (১) (ক) প্রয়োগ করে আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে ক্রয় প্রক্রিয়ার সময় হ্রাস করা হয়েছে।
এমএএস/এমএইচআর