দেশজুড়ে

‘চাঁদাবাজদের ভয়ে’ পালিয়ে বেড়াচ্ছেন কলেজশিক্ষক

পাবনায় চাঁদা না দেওয়ায় দুই মাস ধরে বাড়িছাড়া এক কলেজশিক্ষক। ভুক্তভোগীর অভিযোগ, দাবি না মানায় কয়েক দফা হামলায় বাড়িঘর ভাঙচুর ও হত্যার হুমকি দিয়েছে চাঁদাবাজ চক্র। সন্ত্রাসীদের ভয়ে কর্মস্থলে নিয়মিত পাঠদানও করতে পারছেন না তিনি। ওই শিক্ষকের নিরাপত্তা চেয়ে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছেন কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

Advertisement

লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ভুক্তভোগী শহিদুল ইসলাম উপজেলার সন্তোষপুর গ্রামের দবির উদ্দিনের ছেলে ও প্রফেসর বয়েন উদ্দিন ডিগ্রি (অনার্স) কলেজের সহকারী অধ্যাপক। চাঁদাবাজ চক্রের মূলহোতা মিনারুল ইসলাম একই গ্রামের মৃত আলাউদ্দিনের ছেলে। প্রায় ১০ বছর আগে উপজেলার বোঁথর গ্রামের আব্দুর রউফের সঙ্গে প্রতিবেশী মিনারুলের ১২ লাখ টাকা লেনদেনের সাক্ষী ছিলেন শহিদুল ইসলাম। টাকা না দেওয়ায় মিনারুলের বিরুদ্ধে ২০১৭ সালে মামলা করেন আব্দুর রউফ। ওই মামলায় শহিদুল সাক্ষ্য দেওয়ায় ক্ষিপ্ত হন মিনারুল। তিনি ২০১৭ সালে লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়ে শহিদুলের কাছে ১২ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন।

শহিদুলের অভিযোগ, চাঁদার টাকা না দেওয়ায় আনোয়ার মেম্বারসহ ভাড়াটে সন্ত্রাসীদের নিয়ে মিনারুল তাকে ক্রমাগত প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছেন। সন্তোষপুর গ্রামের বাড়িতে কয়েক দফা সশস্ত্র হামলায় প্রাণভয়ে বাবা, ভাইকে নিয়ে তিনি বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছেন।

আব্দুর রউফের আইনজীবী আশরাফুজ্জামান হালিম বলেন, ‘যে লিগ্যাল নোটিশ দেখিয়ে মিনারুল টাকা দাবি করছেন তা সম্পূর্ণ ভুয়া। আমি আব্দুর রউফের পক্ষে ২০১৭ সালের অক্টোবর ও ২০১৮ সালে ফেব্রুয়ারি মাসে মিনারুলকে লিগ্যাল নোটিশ পাঠাই। ২০১৭ সালের এ নোটিশটিই কম্পিউটারে স্ক্যান করে বাদী-বিবাদীর নাম পরিবর্তন করে একই চেক নম্বর ও একই আইনজীবীর প্যাডে জাল নোটিশ পাঠিয়ে শহিদুলের কাছে ১২ লাখ টাকা দাবি করেন মিনারুল। মিনারুলের পক্ষে আমি কখনোই কোনো লিগ্যাল নোটিশ পাঠাইনি। তিনি সুস্পষ্ট জালিয়াতি করেছেন।’

Advertisement

এদিকে, মিনারুলের ভাড়াটে সন্ত্রাসী বাহিনী শহিদুলের কলেজে এসে তার সহকর্মীদেরও হুমকি দিয়ে গেছে বলে নিশ্চিত করেছেন প্রফেসর বয়েন উদ্দিন ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মো. সদরউদ্দিন।

তিনি বলেন, ‘শহিদুল যদি টাকা নিয়ে থাকেন, তাহলে পাওনাদাররা প্রমাণসহ আইনের আশ্রয় নিতে পারেন। কিন্তু তারা তা না করে হুমকি-ধমকি দিয়ে যাচ্ছেন। আমাকেও তারা কলেজে এসে শাসিয়েছেন। শহিদুলকে তারা কলেজে এসে খোঁজ করেন। তিনি নিয়মিত ক্লাস নিতে পারছেন না। আমরাও আতঙ্কে ভুগছি।’

তবে, চাঁদা দাবি ও হুমকির অভিযোগ অস্বীকার করেছেন অভিযুক্ত মিনারুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘কয়েক বছর আগে শহিদুল আমার কাছ থেকে সাড়ে সাত লাখ টাকা আদায় করেছিলেন। আমি পাওনা টাকা চেয়েছি, কাউকে হুমকি বা বাড়িঘরে হামলা করিনি। পাওনা টাকা না দিতে অসত্য অভিযোগ করছেন শহিদুল।’

চাটমোহর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মঞ্জুরুল আলম বলেন, শহিদুল ইসলাম কয়েক মাস আগে জিডি করেছিলেন। কিন্তু কলেজে যেতে বাধা ও বাড়িতে থাকতে না দেওয়ার বিষয়ে আমাদের জানাননি। এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Advertisement

আলমগীর হোসাইন নাবিল/এসআর/জেআইএম