প্রক্লেমেশন অফ রেভল্যুশন ঘোষণা না হওয়ায় এখনো অনেক বড় বিপদ রয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এ এফ এম আব্দুর রহমান। বর্তমান সরকার যে সংবিধান অনুসরণ করে চলছে সেই সংবিধানের কোনো অস্তিত্ব নেই বলেও দাবি করেন তিনি।
Advertisement
মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) বিকেলে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে ‘নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত: জুলাই ঘোষণাপত্র, গণপরিষদ ও সংবিধান’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে জাতীয় নাগরিক কমিটির সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল উইং।
তিনি বলেন, পৃথিবীর সব দেশেই বিপ্লবের পর বিপ্লবী পরিষদ হয়। সেই বিপ্লবী পরিষদ তার ক্ষমতা নেয় একটি প্রক্লেমেশনের মাধ্যমে। বিপ্লব কিন্তু সংবিধান মেনে হয় না। পৃথিবীতে যত বিপ্লব হয়েছে সেই বিপ্লব একটি নতুন লিগ্যাল অর্ডার তৈরি করেছে। সেই লিগ্যাল অর্ডারের যে ভিত্তি ভূমি, তা সমূলে গ্রহণ করতে হয় প্রক্লেমেশন অব রেভল্যুশনের মাধ্যমে। প্রক্লেমেশন অব রেভল্যুশন সেই বিপ্লবী পরিষদকে ক্ষমতা দেয়। সেই প্রক্লেমেশনের পক্ষে থাকে সমস্ত জনগণ। কিন্তু এই প্রক্লেমেশনটা আমাদের এখনো ঘোষণা করা হয়নি। এটা ঘোষণা না করায় যে কত বড় বিপদ রয়ে গেছে সেটা আপনারা (অন্তবর্তী সরকার) এখনো খেয়াল করছেন না কেন? বর্তমান সংবিধান দিয়ে চলছেন আপনারা। সংবিধানের কোনো অস্তিত্ব নেই।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট হুমায়রা নূরের সঞ্চালনায় সেমিনারে আরও বক্তব্য রখেন রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম, এবি পার্টির জেনারেল সেক্রেটারি ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, জাতীয় নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার প্রমুখ।
Advertisement
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে উদ্দেশে বিচারপতি এ এফ এম আব্দুর রহমান বলেন, সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদের বলে আপিল বিভাগ থেকে একটি মতামত নিয়েছেন। ১০৬ অনুচ্ছেদে কী বলা হয়েছে? এমন আইনগত প্রশ্ন উত্থাপন হয়েছে যা রাষ্ট্রপতি মনে করছেন আপিল বিভাগ থেকে মতামত গ্রহণ করা আবশ্যক। বিপ্লব কি আইনের প্রশ্ন? যে সরকারকে আমরা ঝেটিয়ে বিদায় করেছি সেই বিপ্লব কি আইনের প্রশ্ন? তাহলে কিসের ভিত্তিতে আইনের এমন প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছে যা ১০৬ অনুচ্ছেদের মাধ্যমে মতামত দিতে হবে? ১০৬ এর কোনো ভিত্তি নেই।
তিনি বলেন, যারা ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্সকে ফেলে দিয়ে শত শত লোককে ফাঁসিতে ঝুলিয়েছেন, তারা যদি আবার ক্ষমতায় আসতে পারে তাহলে কি আপনাদেরকে ফাঁসি দেবে না? নাকি আদর করবে? ফাঁসিতে ঝুলাবে। ফাঁসিতে যাতে ঝুলাতে না পারে এটা আমাদের চিন্তা করতে হবে। ৮ আগস্ট থেকে সব কর্তৃপক্ষকে বলছি প্রক্লেমেশন করেন। না হলে বিপদ আছে। তাদের ধারণা ১০৬ অনুচ্ছেদই ভিত্তি। ১০৬ ভিত্তি ভূমি নয়। সুতরাং প্রক্লেমেশন হতে হবে।
এ এফ এম আব্দুর রহমান বলেন, একটা সরকার পরিবর্তন হয় কীভাবে? নিয়মিত এবং অনিয়মিত দুইভাবেই। নিয়মিত পরিবর্তন হলো নির্বাচনের মাধ্যমে। আর অনিয়মিত পরিবর্তন হয় তিনভাবে। আন্দোলন, অভ্যূত্থান ও বিপ্লব। আন্দোলন তখনই হয় যখন একটি সরকারকে পরিবর্তন করার জন্য বিরোধী দল ও জনগণ মিলে রাস্তায় নামে। সেই আন্দোলনকে সম্মান দেখিয়ে সরকার পদত্যাগ করে নির্বাচন দেয়। আরেকটি পরিবর্তনের উপায় হচ্ছে সামরিক অভ্যূত্থান। এটি বহুবার দেখেছি। আরেকটি হচ্ছে বিপ্লব। বিপ্লব হচ্ছে এমন একটি স্বৈারাচারকে হটানো। সমগ্র দেশের জনগণ যখন রাস্তায় নেমে এসে রক্তাক্ত অথবা অন্য কোনোভাবে একটা স্বৈরাচারকে টেনে নামায়, সেটাকে বলে বিপ্লব।
গত ৫ আগষ্ট বিপ্লব আমরা দেখেছি তিনি আরও বলেন, ৫ আগষ্ট যে সরকারের পতন হয়েছে সেটা ছিল একটা গোখরো সাপ। সমগ্র জাতিকে পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে এই সাপটি ১৬ বছর ধরে চুষে চুষে খেয়েছে। সেই সাপটাকে আমরা ছাড়িয়েছি। এই সাপকে আমরা কোনোভাবেই আর আনতে চাই না। সেই সাপ না, আর যারা সাপ হতে চায় তাদেরও না। আমরা বিপ্লবের সৈনিক। একটি সাপকে ফেলে দেওয়ার জন্য ২ হাজারের বেশি তাজা প্রাণ ঝরে গেছে। সেই সাপ পালিয়ে গেছে তার ঠিক খোপে।
Advertisement
গণপরিষদ নির্বাচনের তাগিদ দিয়ে সাবেক এই বিচারপতি বলেন, গণপরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমে তারা একটা সংবিধান তৈরি করবে। তখন একটি আইনগত ভিত্তি পেয়ে যাবেন। এই নির্বাচন কমিশন গণপরিষদ নির্বাচন করবে। পরে তারা জনগণের মতামত নিয়ে একটি সংবিধান তৈরি করবে। যে দিন সংবিধান গৃহীত হবে সেদিন গণপরিষদ একটা পার্লামেন্টে পরিণত হবে। নতুন করে নির্বাচন করতে হবে না। তাহলে প্রক্লেমেশনের মাধ্যমে আইনগত ভিত্তিটা পাব। কিন্তু আপনারা যে পথে হাঁটছেন তা অত্যন্ত বিপদজনক। এখনো সময় আছে। প্রক্লেমেশনটা করেন, কোনো অসুবিধা নেই।
এ সময় জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, বর্তমান সংবিধানে একজন ব্যক্তিকে জাতির পিতা ঘোষণা করা হয়েছে। আমরা নতুন সংবিধানে ফাউন্ডিং ফাদার্স করতে চাই। আমরা এক ব্যক্তি থেকে সবার মাঝে ইতিহাস ভাগ করতে চাই। আমরা চাই সরকার আমাদের ডিক্লারেশনকে প্রকাশ করবে। যদিও আমরা কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ দেখছি না। খাদ্য, বস্ত্র, চিকিৎসা, বাসস্থান, শিক্ষা- এসব সংবিধানে মৌলিক অধিকার হিসেবে থাকতে হবে। নতুন সংবিধানের জন্য গণপরিষদ নির্বাচন হতে হবে। যারা সংবিধান রচনা করবে এবং আইনসভার দায়িত্ব নেবে। রাজনৈতিক দলগুলোর এই গণপরিষদ নির্বাচন নিয়ে কোনো আপত্তি থাকার কথা না। কারণ দুইটা নির্বাচন একইসঙ্গে হতে পারে।
এফএইচ/এএমএ