টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে এক ব্যক্তির মজুত করা তিনটি স্তূপে রাখা প্রায় ১০ কোটি টাকার আস্তর (প্লাস্টার) বালুকে অবৈধ হিসাবে জব্দ করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। পরে সে বালু গোপন নিলামের মাধ্যমে প্রায় ৪৯ লাখ টাকায় বিক্রি করে দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. তারিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে।
Advertisement
গত ৬ জানুয়ারি উপজেলার নিকরাইল ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাসুদুল হক মাসুদের জমিতে অভিযানে যান এসিল্যান্ড মো. তারিকুল ইসলাম। পরদিন ১০ কোটি টাকার বালু ৪৮ লাখ ৩৩ হাজার ৬৮০ (ভ্যাট ব্যতীত) টাকায় গোপন নিলামে স্থানীয় জহুরা এন্টারপ্রাইজের কাছে বিক্রি করে দেন।
অন্যদিকে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কার্যালয় থেকে উপজেলা সার্ভেয়ার মো. রফিকুল ইসলাম এবং উপজেলা প্রকৌশলী আমিনুল ইসলামকে বালুর ধরণ ও পরিমাপের জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়। তিনটি স্তূপে রাখা হয়েছে মোটা বালু। ভুক্তভোগীদের মতে, সেখানে প্রায় এক কোটি ২০ লাখ ঘনফুট বালু রয়েছে। সিরাজগঞ্জের মেসার্স এস কনস্ট্রাকশন থেকে এ বালু কেনা হয়েছে এমন অসংখ্য রশিদ উপস্থাপন করেন ভুক্তভোগীরা।
সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মাসুদের স্ত্রী শেফালি মাসুদ বলেন, প্রায় এক কোটি ২০ লাখ ঘনফুট প্লাস্টার (নির্মাণকাজে ব্যবহৃত) বালুকে ২৬ লাখ ১২ হাজার ৮০০ ঘনফুট ধরে এবং বালুর ধরণ ভিটি বালু দেখিয়ে নিলাম দেওয়া হয়েছে। যার মূল্য ধরা হয়েছে ১ টাকা ৮৫ পয়সা ঘনফুট। অথচ প্রতি ঘনফুট বালু সাধারণত বিক্রি হয় ১০-১৪ টাকায়।
Advertisement
নিয়ম অনুযায়ী, নিলাম পরিচালনাকারী কর্তৃপক্ষের নির্দেশক্রমে নিলাম ডাকের কমপক্ষে ৭ কার্যদিবস পূর্বে দুটি জাতীয় দৈনিক এবং একটি স্থানীয় দৈনিকে নিলামের বিজ্ঞপ্তি প্রচারের ব্যবস্থা করতে হবে। সেটি নিরাপত্তার জন্য পুলিশকে লিখিত চিঠি দেওয়া ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরের ওয়েবসাইটে সেটি প্রকাশ করতে হবে। পণ্য পরিদর্শনের তারিখ নিলাম অনুষ্ঠানের কমপক্ষে দুই কার্যদিবস আগে হতে হবে। কিন্তু এসব আইনের কোনো কিছুই মানা হয়নি জব্দ এ বালু নিলামের ক্ষেত্রে।
পলশিয়া গ্রামের আলাউদ্দিন বলেন, কয়েক মাস আগে সিরাজগঞ্জ মহাল থেকে বালু কিনে চেয়ারম্যান তার নিজের জায়গা ও অন্যের জমি ভাড়া নিয়ে রেখেছেন। প্রতি সিএফটি বালু কেনা পড়েছে ৮ টাকা। বর্তমানে বিভিন্ন ঘাটে প্রতি সিএফটি বালু বিক্রি হচ্ছে ১২-১৪ টাকা। অথচ এসিল্যান্ড এর দাম ধরেছেন ১ টাকা ৮৫ পয়সা।
ওই গ্রামের নূরুল ইসলাম বলেন, আমরা সার্বক্ষণিক এলাকায় থাকি। কোনো মাইকিং করা হলে কেউ না কেউ শুনতো বা জানতো। এছাড়া কোনো পত্র-পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করলে সেটিও জানা যেত। এসিল্যান্ডের অফিসে নিলামের বিজ্ঞপ্তি টানিয়ে রাখলেও জানতাম। তাও টাঙানো হয়নি। ঘটনাস্থলেও কোনো নিলামের কার্যক্রম পরিচালনা করা হয় নাই।
উপজেলা সহকারী (ভূমি) অফিসের সার্ভেয়ার মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, তিনটি বালু স্তূপের মধ্যে একটিতে বালু পা দিয়ে পরিমাপ করেছি। অন্য দুটি শুধু দেখেছি। এতে আনুমানিক ২৬ লাখ ঘনফুট নির্ধারণ করেছি। অন্যান্য বিষয় এসিল্যান্ড স্যার জানেন। যদিও একদিন পরে তার বক্তব্য পরিবর্তন করে ফিতা-চেইন টেনেই বালু পরিমাপ করেছি বলে জানান। এ কাজে আরও দুজন সহায়তা করেছে।
Advertisement
ভূঞাপুর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) একেএম রেজাইল করিম বলেন, কবে কোথায় কিভাবে বালু নিলাম হয়েছে তা জানা নেই। তাছাড়া নিলাম অনুষ্ঠানের মৌখিক বা লিখিত কোনো চিঠি পাইনি।
এ বিষয়ে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. তারিকুল ইসলাম বলেন, ভ্রাম্যমাণ আদালত আইন অনুযায়ী জব্দ করা বালু নিলাম দেওয়া হয়। নিষিদ্ধ বাল্কহেডের মাধ্যমে বালু পরিবহন করে সেখানে স্তূপ করে রাখা হয়েছিল তাই এটি অবৈধ। প্রশাসনের অনুমতি ছাড়া ব্যক্তি জমিতে মজুদ অবৈধ। এছাড়া বালু মহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন মোতাবেক জনদুর্ভোগ ও পরিবেশ দূষণ করায় এটি অবৈধ।
এ বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম জানান, বালু আইনের বিধি মোতাবেক তিনি নিলাম করেছেন। যদি সেক্ষেত্রে ওই ব্যক্তি সংক্ষুব্ধ হন তাহলে তিনি আপিল করতে পারবেন। সেই সুযোগ তার রয়েছে। এটির ব্যাপারে তদন্ত চলছে। তদন্তে ক্ষমতার অপব্যবহার ও কারও দোষ প্রমাণ হলে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এআরটি/আরএইচ/এএসএম