মিল এলাকায় প্রবেশ করলেই চারপাশের নিস্তব্ধতা ভেঙে কেবল বাতাসের শো শো শব্দ। ঝোপঝাড় আর আবর্জনার স্তূপ এলাকাটিতে তৈরি হয়েছে এক ভুতুড়ে পরিবেশ। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, দীর্ঘদিন ধরে পরিত্যক্ত থাকার ফলে সেখানে বিষাক্ত সাপসহ বিভিন্ন প্রাণী আস্তানা গেড়েছে।
Advertisement
দৃশ্যটি রংপুরের ঐতিহ্যবাহী শ্যামপুর চিনিকলের। এটি একসময় এই অঞ্চলের অর্থনীতির মেরুদণ্ড ছিল। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার কারণে সেই অতীত গৌরবের প্রতিষ্ঠাটি ধ্বংসস্তূপের অবকাঠামো। মিলের প্রধান গেট দিয়ে ভেতরে ঢুকতেই চোখে পড়ে পরিত্যক্ত ভবনের সারি, মরিচা ধরা যন্ত্রপাতি এবং ঝোপঝাড়ে ঘেরা বিস্তীর্ণ এলাকা। পাশেই চিনিকলের মাঠের একপাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা ট্রাক্টর এবং অন্যান্য যন্ত্রাংশ দীর্ঘদিনের অব্যবহারে মরিচা ধরে নষ্ট হয়ে গেছে। আখ পরিবহন এবং মাড়াই কার্যক্রমে ব্যবহৃত এই যন্ত্রপাতি একসময় শ্রমিকদের ব্যস্ততার সাক্ষী ছিল। আজ সেগুলো পড়ে থেকে অকেজো হয়ে গেছে।
এদিকে সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী রংপুরের এই মিল ও দিনাজপুরের সেতাবগঞ্জ সুগার মিলটি প্রথম ধাপে পুনরায় চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে সরেজমিনে পরিদর্শনকালে দেখা যায়, এই ঘোষণার পরও নেই কোনো প্রস্তুতি। আগে থেকেও কোনো পরিকল্পনা করা হয়নি। বাস্তবে মিল চালুর ঘোষণাটি এখনো শুধুই কাগজ-কলমে সীমাবদ্ধ। দুই মিলেই পরিত্যক্ত ভবন, ঝোপঝাড়ে ঢেকে থাকা মাঠ, মরিচা ধরা যন্ত্রপাতির কিছুই স্পর্শ পায়নি সংস্কারের।
সরকারের এই সিদ্ধান্তকে আমরা স্বাগত জানাই। তবে পরিকল্পনার বাস্তবায়ন যদি সঠিকভাবে না হয়, তাহলে এটি ব্যর্থ হতে পারে। আমরা চাই না নতুন করে কোনো ঝুঁকি নিতে। অনেকে পেশাবদল করেছেন। তাদের ফিরে আনতে সরকারের নানান রকম প্রণোদনার বিষয়টিও মাথায় রাখতে হবে।
Advertisement
রংপুরের স্থানীয় এক চাষি বলেন, মিল চালুর খবরে আমরা আশ্বস্ত হয়েছিলাম। কিন্তু এখনও সেই আগের অবস্থাই রয়ে গেছে। কাজ শুরু করতে তো অন্তত কিছু প্রস্তুতি দরকার। সেটিও আমরা দেখছি না।
পড়ে থাকা চিনিকল দেখলে মনে হয় ভুতুড়ে ভবন-ছবি জাগো নিউজ
আরও পড়ুন
আখ মাড়াই উদ্বোধন আজ, ৪ হাজার টন চিনি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা লোকসানের বোঝা নিয়েই জিল বাংলা চিনিকলে আখ মাড়াই শুরুদেখা গেছে, শ্যামপুরে বন্ধ কারখানার গেটে লালকালি দিয়ে সুখবর লিখে একটি পোস্টার সাঁটানো রয়েছে। তাতে সরকারি সিদ্ধান্তের তথ্য জানিয়ে সুগার মিলস কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে কৃষকদের আখ রোপণ করার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এই আখ প্রতি কুইন্টাল ৫৮৭ থেকে ৬০০ টাকার কেনার জন্য দামও নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু চলতি অর্থবছরে এখন পর্যন্ত মিলের যে অবস্থা রয়েছে তার সঙ্গে মিল রেখে পোস্টার লাগানোর মতো করে প্রস্তুতির কোনো তৎপরতা দেখা যায়নি।
Advertisement
বন্ধ থাকা চিনিকলগুলো এই মুহূর্তে চালু করা হলে ঝুঁকির পাশাপাশি বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ নিতে হবে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় কৃষক, ব্যবসায়ী এবং বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার ফলে মিলের ভবন ও যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে গেছে। অনেক যন্ত্রাংশ মরিচা ধরে অকার্যকর হয়েছে। পুরোনো প্রযুক্তির পরিবর্তে আধুনিক মেশিনারিজ স্থাপন করা ছাড়া বন্ধ থাকা এই মিলগুলো কার্যকরভাবে পরিচালনা করা কঠিন। পুনরায় চালুর জন্য একটি বড় অঙ্কের টাকার বাজেটও প্রয়োজন। আগের শ্রমিক ও চাষিদের বকেয়া পরিশোধ এখনো সম্পন্ন হয়নি, যা নতুন আখ সরবরাহে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। স্থানীয় আখচাষিদের আস্থা হারানোর কারণে আখ উৎপাদন বর্তমানে উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। নতুন করে চাষিদের এ ব্যাপারে উদ্যোগী করাও বেশ চ্যালেঞ্জের।
আরও পড়ুন রংপুর চিনিকল চালুর সিদ্ধান্তে আবারো স্বপ্ন বুনছেন শ্রমিক-চাষিরা এবারও লাভের মুখ দেখছে না দর্শনার কেরু চিনিকলএছাড়া মিল পুনরায় চালু করতে প্রশিক্ষিত ও অভিজ্ঞ জনবল প্রয়োজন, যা দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার কারণে হারিয়ে গেছে। এখন উৎপাদিত পণ্য বাজারজাতের জন্য শক্তিশালী বিতরণ নেটওয়ার্ক নেই। এর কারণে মিলের উৎপাদিত চিনি বাজারজাত করা কঠিন হবে। সবকিছু ঠিক হলেও মিল পুনরায় চালু করতে মেরামত, আধুনিকায়ন এবং উৎপাদন প্রক্রিয়া শুরু করতে দু-তিন বছর সময় লাগবে। এতে এই প্রকল্পটি দীর্ঘায়িত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।
ব্যবসায়ীরা জানান, বর্তমানে চিনির আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতা বাড়ছে। বিষয়টি মাথায় রেখে দেশীয় চিনির উৎপাদন খরচ কমানো জরুরি। অর্থনীতিবিদ ড. শিরিন আক্তার বলেন, চিনি শিল্পের পুনরায় চালুর ফলে স্থানীয় এবং জাতীয় পর্যায়ে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে। এটি আখ চাষিদের জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে। তবে এটার জন্য যথেষ্ট চ্যালেঞ্জ নিতে হবে। তারপরও সরকারের উচিত আধুনিক ব্যবস্থাপনা সংযোজনের মাধ্যমে মিলগুলোর চাকা সচল করা।
শিল্প বিশ্লেষকরা বলছেন, কোনো কারখানা পুনরায় চালুর আগে অবকাঠামো উন্নয়ন, প্রযুক্তিগত আধুনিকায়ন এবং দক্ষ জনশক্তি তৈরির কাজ অত্যন্ত জরুরি। শ্যামপুর ও সেতাবগঞ্জ চিনিকলের ক্ষেত্রে এসবের কোনোটাই করা হয়নি। প্রয়োজনীয় আধুনিকায়ন এবং পরিকল্পনা ছাড়া এই উদ্যোগ দীর্ঘস্থায়ী হবে না।
ব্যবসায়ী নেতা সাইরুল ইসলাম বলেন, আদেশ দেওয়া হলেও এর বাস্তবায়নে কোনো অগ্রগতি হয়নি। মিলের অবকাঠামো সংস্কার বা আধুনিকায়নের কোনো কার্যক্রম শুরু হয়নি। মিলগুলো চালুর জন্য নতুন করে যেসব যন্ত্রাংশ সংস্কার প্রয়োজন সেগুলোর বরাদ্দ মেলেনি। যেহেতু প্রতিষ্ঠানগুলো পুনরায় চালু হচ্ছে তাই পরিকল্পনা করে এগুনোই ভালো হবে। না হলে আবারো বন্ধ হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যাবে।
পুরোনো প্রযুক্তির পরিবর্তে আধুনিক মেশিনারিজ স্থাপন করা ছাড়া বন্ধ থাকা এই মিলগুলো কার্যকরভাবে পরিচালনা করা কঠিন। পুনরায় চালুর জন্য একটি বড় অঙ্কের টাকার বাজেটও প্রয়োজন। আগের শ্রমিক ও চাষিদের বকেয়া পরিশোধ এখনো সম্পন্ন হয়নি, যা নতুন আখ সরবরাহে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। স্থানীয় আখচাষিদের আস্থা হারানোর কারণে আখ উৎপাদন বর্তমানে উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। নতুন করে চাষিদের এ ব্যাপারে উদ্যোগী করাও বেশ চ্যালেঞ্জের।
তবে শ্যামপুর চিনিকলের ব্যবস্থাপক (হিসাব) ফজলে এলাহী বলেন, মিল চালুর সিদ্ধান্তের পর আগামী ১০ বছরের কর্ম পরিকল্পনা তৈরির জন্য সরকারের পক্ষ থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এজন্য জনবল, কারখানা মেরামত, মালামাল ক্রয়, অবকাঠামো উন্নয়নসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কর্ম পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
পণ্য পরিবহনে ব্যবহৃত যানগুলোও পড়ে আছে-ছবি জাগো নিউজ
আস্থা সংকটে কৃষকদীর্ঘদিন ধরে চিনিকলগুলো বন্ধ থাকায় কৃষকরা তাদের উৎপাদিত আখের সঠিক দাম পাননি। আখ সরবরাহের পরও দীর্ঘসময় বকেয়া অর্থ পরিশোধ করা হয়নি, যা চাষিদের চাষে নিরুৎসাহিত করেছে।
মিঠাপুকুরের আখচাষি রফিকুল ইসলাম বলেন, ধান, গম, ভুট্টা, সবজি ইত্যাদি তুলনামূলকভাবে লাভজনক এবং চাষের সময় কম লাগে। এসব ফসলের বাজারজাতকরণ ও মুনাফা দ্রুত হয়, যা চাষিদের কাছে বেশি আকর্ষণীয়। আমি নিজেও আখ চাষ বাদ দিয়ে এখন অন্য ফসল করছি।
দিনাজপুরের বোচাগঞ্জের কৃষক মমিনুল হক বলেন, আখের বাজারমূল্য কম থাকায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। তবে মিল চালু হলে পরিস্থিতি বদলাতে পারে। এখন সার, কীটনাশক, সেচ এবং শ্রমের ব্যয় অনেক বেড়েছে। এসব কারণে আখ চাষে বিনিয়োগ করা কঠিন হয়ে পড়ছে। সরকারি ভর্তুকি বা সহজলভ্য ঋণ চাষিদের কাছে পর্যাপ্তভাবে পৌঁছে না। এছাড়া ক্রমবর্ধমান নগরায়ণের কারণে আখ চাষের জমি অন্য কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। জমি টুকরো টুকরো হয়ে যাওয়া বড় পরিসরে আখ চাষের সুযোগ সীমিত করেছে।
আরও পড়ুন
সরকারি চিনিকলে বিক্রির তিনগুণ লোকসান চিঠিতেই আটকে আছে চিনিকলের বহুমুখী উৎপাদনজানা গেছে, কৃষকরা আখ চাষে মনোযোগী ছিলেন। কিন্তু মিল বন্ধ হওয়ার পর অনেকে চাষ থেকে সরে গিয়ে অন্য ফসল চাষ করছেন। আখ চাষে সময় লাগে প্রায় ১৭ মাস, যা কৃষকের জন্য অর্থনৈতিকভাবে ঝুঁকিপূর্ণ। এ অবস্থায় অনেকেই অন্য ফসলের দিকে ঝুঁকছেন।
সুগার মিলগুলো যেভাবে বন্ধপ্রায় ১২০ কোটি টাকা লোকসান করার পর ২০২০ সালে বন্ধ হয়ে যায় শ্যামপুর সুগার মিলস লিমিটেড (রংপুর)। এ সময় এই মিলে শ্রমিক সংখ্যা ছিল ৭৮০ জন। একই সময়ে ৯৫ কোটি টাকা লোকসান করে বন্ধ হয় সেতাবগঞ্জ সুগার মিলস লিমিটেড (দিনাজপুর)। এটির শ্রমিক সংখ্যা ছিল ৬৫০ জন। ৮০ কোটি টাকা লোকসান করে বন্ধ হয় পঞ্চগড় সুগার মিল (পঞ্চগড়)। এটির শ্রমিক সংখ্যা ছিল ৫৮০ জন। ১১০ কোটি টাকা লোকসান করে বন্ধ হয় পাবনা সুগার মিল (পাবনা)। এটির শ্রমিক সংখ্যা ছিল ৭২০ জন। ১০৫ কোটি টাকা লোকসান করে বন্ধ হয় কুষ্টিয়া সুগার মিল (কুষ্টিয়া)। এটির শ্রমিক সংখ্যা ছিল ৬৯০ জন। ১১৫ কোটি টাকা লোকসান করে বন্ধ হয় রংপুর সুগার মিল (রংপুর)। এটির শ্রমিক সংখ্যা ছিল ৭৫০ জন।
২০২৪ সালের ১৭ ডিসেম্বর শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে একটি প্রজ্ঞাপনে ছয়টি বন্ধ চিনিকল পুনরায় চালুর ঘোষণা দেওয়া হয়। এরমধ্যে প্রথম পর্যায়ে রংপুরের শ্যামপুর ও দিনাজপুরের সেতাবগঞ্জ চিনিকল রয়েছে। নির্দেশনা অনুসারে দ্বিতীয় পর্যায়ে চালু হবে পঞ্চগড় ও পাবনা চিনিকল এবং তৃতীয় পর্যায়ে কুষ্টিয়া ও রংপুর চিনিকল চালুর কথা বলা হয়।
মিলের ভেতর পড়ে থাকা ট্রাক্টর-ছবি জাগো নিউজ
প্রথম ধাপে চালুর তালিকায় থাকা সেতাবগঞ্জ মিলটিও চার বছর ধরে বন্ধ। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার ফলে মিলের মূল্যবান যন্ত্রাংশ নষ্ট হচ্ছে এবং অবকাঠামো ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। আখ সরবরাহের স্বল্পতা এবং লোকসানের অজুহাতে এই মিলটির মাড়াই স্থগিত করা হয়েছিল।
সেতাবগঞ্জ মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল বাশার জানান, আখ রোপণ এবং মিলের মেরামত কার্যক্রম একসঙ্গে শুরু হবে। পর্যাপ্ত আখ সরবরাহ নিশ্চিত করা গেলে আগামী বছর অথবা তার পরের বছর উৎপাদন শুরু করা সম্ভব হবে। তবে সরকারি ঘোষণার পর এখনো কোনো কাজই শুরু করা যায়নি।
কৃষি বিশেষজ্ঞ ড. মাহমুদ হাসান বলেন, সরকারি সিদ্ধান্ত শুধু আখ চাষের পুনর্জাগরণই নয় বরং এটি শিল্পায়নের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ। তবে খুবই সাবধানে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
অতীতের ভুলে লোকসানসরেজমিনে পরিদর্শনকালে কৃষক ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বন্ধ থাকা শ্যামপুর ও সেতাবগঞ্জ চিনিকলগুলোর লোকসানের পেছনে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ ছিল। আশির দশক থেকে শুরু হওয়া এই মিলগুলোতে অব্যবস্থাপনার কারণে উৎপাদন খরচ বেড়ে গিয়েছিল। শিল্পের কার্যক্রমে প্রশাসনিক ত্রুটি এবং অদক্ষ ব্যবস্থাপনা ছিল অন্যতম কারণ।
কোনো কারখানা পুনরায় চালুর আগে অবকাঠামো উন্নয়ন, প্রযুক্তিগত আধুনিকায়ন এবং দক্ষ জনশক্তি তৈরির কাজ অত্যন্ত জরুরি। শ্যামপুর ও সেতাবগঞ্জ চিনিকলের ক্ষেত্রে এসবের কোনোটাই করা হয়নি। প্রয়োজনীয় আধুনিকায়ন এবং পরিকল্পনা ছাড়া এই উদ্যোগ দীর্ঘস্থায়ী হবে না।
চিনিকলগুলোর যন্ত্রপাতি ছিল পুরোনো এবং অপ্রচলিত, যা উৎপাদন কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত করেছিল। যন্ত্রপাতি সংস্কারের অভাব এবং নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার না হওয়ায় উৎপাদন খরচ বাড়ছিল এবং কার্যকারিতা কমছিল। পুরোনো যন্ত্রপাতি ও অবকাঠামোর কারণে উৎপাদন ব্যয় অত্যধিক বেড়ে গিয়েছিল। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার না করার ফলে খরচের তুলনায় উৎপাদন আয় খুবই কম ছিল।
আরও পড়ুন
লোকসান কমাতে আরও দুই চিনিকলে মদ তৈরির উদ্যোগ রাষ্ট্রায়ত্ত চিনিকলে প্রতি কেজির উৎপাদন খরচ কত?চিনিকলগুলোর শ্রমিক সংখ্যা ছিল সীমিত এবং অনেক শ্রমিক অন্য পেশায় চলে গিয়েছিলেন। এসব কারণে ২০২০ সালে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন (বিএসএফআইসি) শ্যামপুর এবং সেতাবগঞ্জসহ মোট ছয়টি চিনিকল বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়। এতে হাজারো শ্রমিক এবং আখচাষি তাদের কর্মসংস্থান ও ব্যবসার ক্ষেত্র হারান।
শ্যামপুর সুগারমিল এমপ্লয়ীজ ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আবু সুফিয়ান বলেন, সরকারের এই সিদ্ধান্তকে আমরা স্বাগত জানাই। তবে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন যদি সঠিকভাবে না হয়, তাহলে এটি ব্যর্থ হতে পারে। আমরা চাই না নতুন করে কোনো ঝুঁকি নিতে। অনেকে পেশাবদল করেছেন। তাদের ফিরে আনতে সরকারের নানান রকম প্রণোদনার বিষয়টিও মাথায় রাখতে হবে।
সেতাবগঞ্জ চিনিকলের সাবেক শ্রমিক মফিজুল হক বলেন, আমাদের বহুদিনের অপেক্ষা শেষ হতে যাচ্ছে। তবে আমরা চাই, আমাদের কাজের উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি হোক। পুরোনো ধ্যানধারণা নিয়ে মিল চালু করা হলে আবারো লোকসানের বোঝা বাড়বে। আমরাও পুনরায় ঝুঁকিতে পড়বো।
শ্রমিকদের ব্যস্ততার সাক্ষী এই যন্ত্রপাতি-ছবি জাগো নিউজ
রংপুর চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি আকবর আলী বলেন, চিনিকল পুনরায় চালুর উদ্যোগ সরকারের জন্য একটি সাহসী পদক্ষেপ। ব্যবসায়ীদের দুর্ভোগ এতে অনেকটা লাঘব হবে। একই ভাবে দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে সক্ষম হবে এবং স্থানীয় অর্থনীতির উন্নয়ন সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, চিনি উৎপাদন শুধু যন্ত্রপাতি এবং প্রযুক্তিই নয়, পাশাপাশি পরিবহন ব্যবস্থা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বহুদিন ধরে অব্যবস্থাপনার ফলে সড়ক, রেলপথ এবং পরিবহন নেটওয়ার্কগুলোর অবস্থা খারাপ হয়েছে। এই সমস্যাগুলো মেটাতে সঠিকভাবে কাজ করতে হবে।
এলবি/এসএইচএস/জেআইএম