বিশেষ প্রতিবেদন

অতিরিক্ত বাসা ভাড়ায় বাড়ছে সাবলেটের চাহিদা

বাড়ি ভাড়া আইন অনুযায়ী, দুই বছরের মধ্যে ভাড়া বাড়ানোর নিয়ম না থাকলেও প্রতি বছরই বাড়ছে বাড়ি ভাড়া৷ জীবিকার তাগিদে বাধ্য হয়ে ঢাকায় থাকা ভাড়াটিয়াদের এ সমস্যার যেন কোনো প্রতিকার নেই৷ দেড় কোটিরও বেশি মানুষের বসবাস রাজধানী ঢাকায়। যার ৭০ থেকে ৮০ শতাংশই ভাড়াটিয়া। এই ভাড়াটিয়া ও বাড়ি মালিকদের মধ্যে ভাড়া নিয়ে বিরোধের শেষ নেই। বাড়ি ভাড়া অগ্রিম নির্ধারণ থেকে শুরু করে মাসিক ভাড়া প্রদান, বাড়ির রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করানো, ইউটিলিটি বিল প্রদান, বাড়ি ভাড়া বাতিল, অগ্রিম ফেরতসহ সবক্ষেত্রেই উভয় পক্ষের মধ্যে বিরোধ লেগে থাকা অতি পরিচত ঘটনা। বছরে বছরে বাড়ি ভাড়া বৃদ্ধিতে হাঁপিয়ে উঠেছে ভাড়াটিয়ারা। বাড়ি ভাড়া বৃদ্ধির কারণে দিন দিন বাড়ছে সাবলেটের চাহিদা।দুই বা তিন রুমের বাসা একটি পরিবারের জন্য ভাড়া নিয়ে সেই পরিবার এক রুম আবার সাবলেট হিসেবে ভাড়া দিচ্ছে অন্য একটি ছোট ফ্যামিলির কাছে। এতে করে দুই পরিবারই উপকৃত হচ্ছেন।এ বিষয়ে মালিবাগে সাবলেট ভাড়া নেয়া মামুনুর রশিদ বলেন, কম বেতনে চাকরি করি। যে বেতন পাই সেই বেতন দিয়ে পুরো একটি বাসা ভাড়া নেয়া সম্ভব না। তাই সাবলেট বাসা নিয়েছি। ফ্যামিলি সদস্য বলতে আমি আর আমার স্ত্রী। তাই অন্য একটি ফ্যামিলির সঙ্গে এক রুম ভাড়া নিয়ে থাকি।রাজধানীর মিরপুর ১০ নম্বরে তিন রুমের একটি বাসা ভাড়া নিয়ে একটি রুম অন্য ফ্যামিলির কাছে সাবলেট ভাড়া দিয়েছেন আব্দুল হালিম নামের একজন বেসরকারি চাকরিজীবী।তিনি বলেন, রাজধানীতে বাসা ভাড়া দিতেই বেতনের ৬০ শতাংশ ব্যয় হয়। বর্তমানে যে বাসায় থাকি তার ভাড়া ১৬ হাজার টাকা। একার পক্ষে এত ভাড়া দেয়া সম্ভব হয় না, তাই ৬ হাজার টাকায় এক ফ্যামিলিকে সাবলেট দিয়েছি।এ বিষয়ে বাংলাদেশ ভাড়াটিয়া কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক তৌকির আহমেদ বলেন, ‘দেশে বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রণের জন্য ১৯৯১ সালের একটি আইন আছে। ভাড়াটিয়াদের কাছে কোনো ধরনের জামানত বা টাকা দাবি করা যাবে না। অগ্রিম হিসেবে এক মাসেরও অতিরিক্ত টাকা নেয়া যাবে না। বরং প্রতি মাসে ভাড়া পরিশোধের রসিদ দিতে হবে। এ সব কিছু না মেনেই বাড়ির মালিকরা প্রতিবছর বাড়ি ভাড়া বৃদ্ধি করছেন। বাড়ি মালিকদের চাপে ভাড়াটিয়ারা প্রায় অসহায় হয়ে আছে। বাড়ি ভাড়া অনিয়ন্ত্রিত, ভাড়া বৃদ্ধি যেন না হয় সে বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি।   রাজধানীর একাধিক বাড়ি মালিকের কাছে বাড়ি ভাড়া বৃদ্ধির কারণ জানতে চাইলে তারা বলেন, জিনিসপত্রের দাম যেভাবে ঊর্ধ্বগতি হচ্ছে, জীবন-জীবিকার ব্যয় যেভাবে বাড়ছে, তাতে কিছুই করার নেই। তাছাড়া অনেকের বেতনও বাড়ছে। সবকিছু মিলিয়ে বাসা ভাড়া তেমন একটা বেশি বাড়ে না। আমরা বছরে একবার বাড়ি ভাড়া বাড়াই।ভাড়াটিয়ারা বলছেন, রাজধানী ঢাকা একটি ব্যয়বহুল শহর। খুবই সাধারণ জীবনযাপনে হিমশিম খেতে হচ্ছে ঢাকায় বসবাসকারী মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্তদের। মাসের শুরুতেই আয়-রোজগারের অর্ধেকটা ভাড়া বাবদ খরচ হয়ে যায়। এছাড়া নিত্যপণ্যের দামও আকাশছোঁয়া।তাদের মতে, বাড়ি ভাড়া এখন লাভজনক ব্যবসায় পরিণত হয়েছে। এ অবস্থা নিরসনে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোনো পদক্ষেপ না নিলে বাড়িওয়ালা ও ভাড়াটিয়াদের মধ্যে চলমান বিরোধ কখনোই থামবে না।এএস/এসএইচএস/এআরএস/আরআইপি

Advertisement