শ্রোতাপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী বেবী নাজনীন। সংগীতচর্চার পাশাপাশি তিনি রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত। বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টাদের একজন বেবী নাজনীন। দীর্ঘদিন তিনি ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রে। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সম্প্রতি দেশে ফিরেছেন তিনি। এখন থেকে গান ও রাজনীতিতে সক্রিয় হবেন বলে জানিয়েছেন এই শিল্পী। সামনের দিনগুলোতে নিজের কর্মকাণ্ড নিয়ে জাগো নিউজের সঙ্গে কথা বলেন বেবী নাজনীন।
Advertisement
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ভিন্নমতের শিল্পীদের ব্ল্যাকলিস্ট করা হয়েছিল বলে অভিযোগ করেন বেবী নাজনীন। তার কাছে জানতে চাওয়া হয়, শিল্পীদের কি রাজনীতি করা উচিত? এমন প্রশ্নে বেবী নাজনীন বলেন, ‘দলের প্রতি সমর্থন যে কোনো মানুষের ব্যক্তিগত ব্যাপার। কোন শিল্পী কোন দলের সমর্থন করবে, কোন দলের আদর্শের প্রতি দুর্বল থাকবে, এগুলো তাদের ব্যক্তিগত ব্যাপার। শিল্পীরা দেশের সম্পদ। একজন শিল্পীকে তার কাজের ক্ষেত্র সম্পর্কে জ্ঞান রাখতে হবে, তাকে বুঝতে হবে দেশের প্রতি তার দায়িত্ব কতখানি। সেসব বিষয় ঠিক রেখে কাজ করতে হবে। রাজনীতি করলেই আপনি উচ্ছন্নে চলে যাবেন, নষ্ট হয়ে যাবেন, খারাপ কাজে যুক্ত হয়ে যাবেন, এমনটা একজন শিল্পীর কাছ থেকে কাম্য নয়। সাধারণ মানুষ শিল্পীদের ভীষণ ভালোবাসেন। কারণ তাদের একেকজন মানুষ একেক শিল্পীর ভক্ত। কেউ তার প্রিয় শিল্পীর কাছ থেকে ভুল কিছু আশা করেন না। ভুল রাজনীতি আশা করবেন না।’
বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা-বাণিজ্যের অভিযোগ যাওয়া যাচ্ছে। বিভিন্ন স্তরের নেতা-কর্মীদের এসব কর্মকাণ্ড নিয়ে মতামত চাওয়া হয় বেবী নাজনীনের কাছে। জাগো নিউজের এসব প্রশ্নে শিল্পী বলেন, ‘বিএনপি দেশের একটি বৃহৎ দল। তারা ১৫ বছরেরও বেশি সময় ক্ষমতার বাইরে ছিল। তাদের সবার গুম, খুনের ভয়, অভাব অনটনের যন্ত্রণা লেগেই ছিল। তাদের অনেকের ঘরে তো চুলাই জ্বলেনি। কারো কারো ছেলে-মেয়েরা স্কুল-কলেজ বন্ধ করে বাড়িতে বসে ছিল। কারো কারো পরিবারের কেউ মারা গেলে তাকে ঠিকমতো দাফনও করতে পারেনি। তারপর আমাদের হাজার হাজার নেতাকর্মী মারা গেছেন, তাদের পূর্ণ তালিকাও এখন পর্যন্ত করা যায়নি। এখন যে সমস্যা হচ্ছে, এগুলো সত্যিকারার্থে হওয়া উচিত নয়। এগুলো আদৌ দলের কেউ করছে কি না সে ব্যাপারে আমার সন্দেহ রয়েছে। কারণ এত বড় একটা দল, কেউ একটা কিছু করে দলের নামে চালিয়ে দিতে পারে। কোনো বিষয়ে একটা অভিযোগ ওঠা মানেই সেটা সত্যি না।’
বিগত ১৬ বছরের আওয়ামী শাসনামলে পেশাগত কাজে নানান বাধার মুখে পড়তে হয়েছে বেবী নাজনীনকে। বাংলাদেশ বেতার, টিভি, মঞ্চ কোনো মাধ্যমেই স্বাচ্ছন্দে কাজ করতে পারেননি তিনি। একপর্যায়ে দেশ ছাড়তে বাধ্য হন এই শিল্পী। তবে বিদেশে অবস্থানরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের কাছে তিনি ছিলেন সমাদৃত। বিদেশের মাটিতে গান করার ক্ষেত্রে তাকে কোনো বাধার মুখে পড়তে হয়নি। বরং ওই সময়ে আমেরিকা, ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্যে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন বেবী নাজনীন।
Advertisement
আরও পড়ুন:
চিন্তা করেছি আমার ছেলে হয়তো মানুষ হবে না দীর্ঘদিন পর দেশে ফিরছেন বেবী নাজনীনসাড়ে চার দশকের ক্যারিয়ারে আধুনিক গানের অর্ধশতাধিক একক অডিও অ্যালবাম বের হয়েছে বেবী নাজনীনের। বেরিয়েছে বহু দ্বৈত অডিও অ্যালবামও। ভারতের জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী আশা ভোঁশলে, বাপ্পি লাহিড়ী, কুমার শানু, কবিতা কৃষ্ণমূর্তির সঙ্গেও একাধিক অডিও অ্যালবাম প্রকাশিত হয়েছে তার। বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশনের বিশেষ শ্রেণির তালিকাভুক্ত সংগীতশিল্পী বেবী নাজনীন চলচ্চিত্র, অডিও মাধ্যমে বহু জনপ্রিয় গান উপহার দিয়েছেন তিনি। ‘মানুষ নিষ্পাপ পৃথিবীতে আসে’, ‘আমার একটা মানুষ আছে, ‘ওই রংধনু থেকে’, ‘পত্রমিতা’, ‘এলোমলো বাতাসে উড়িয়েছি শাড়ির আঁচল’, ‘কাল সারারাত ছিল স্বপনেরও রাত’, ‘দুচোখে ঘুম আসে না তোমাকে দেখার পর’, ‘আমার ঘুম ভাঙাইয়া গেলরে মরার কোকিলে’, ‘লোকে বলে আমার ঘরে নাকি চাঁদ উঠেছে’, ‘আজ পাশা খেলবো রে শ্যাম’, ‘প্রিয়তমা’, ‘সারা বাংলায় খুঁজি তোমারে’, ‘ও বন্ধু তুমি কই কই রে’, ‘এ প্রাণো বুঝি যায় রে’র মতো বহু গানের মাধ্যমে বাংলা গানের ভান্ডারকে সমৃদ্ধ করেছেন এই সংগীত তারকা।
এমএমএফ/আরএমডি/এমএস
Advertisement