অধিকৃত পূর্ব জেরুজালেমে আল-আকসা মসজিদের চারপাথে অতিরিক্ত বিধি-নিষেধ আরোপ করতে যাচ্ছে ইসরায়েল। আগামী শনিবার থেকে রমজান শুরু হচ্ছে। পবিত্র রমজান মাসে যেন ফিলিস্তিনিরা সেখানে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্যই এই বিধি-নিষেধ বলে মনে করা হচ্ছে। খবর আল জাজিরার।
Advertisement
৫৫ বছরের বেশি বয়সী পুরুষ এবং ৫০ বছরের বেশি বয়সী নারীরাই আল-আকসা মসজিদে প্রবেশের অনুমতি পাবেন। সম্প্রতি ইসরায়েলি কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়া ফিলিস্তিনি বন্দিরা রমজানের সময় আল-আকসা প্রাঙ্গনে প্রবেশ করতে পারবেন না।
ইসরায়েলের পক্ষে থেকে বলা হয়েছে, গত বছরও একই ধরনের বিধি-নিষেধ জারি করা হয়েছিল। তবে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ বলছে, এই বিধি-নিষেধ ‘বর্ণবাদী এবং উসকানিমূলক’।
রমজান মাসে পূর্ব জেরুজালেমের চারপাশে ইসরায়েলি নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাড়ানো হবে। মসজিদের দিকে যাওয়ার রাস্তায় চেকপয়েন্টে তিন হাজার সশস্ত্র কর্মী মোতায়েন থাকবে বলে জানানো হয়েছে।
Advertisement
এর আগে আল-আকসা মসজিদের প্রাঙ্গণে ঢুকে পড়ে ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীদের একটি দল। অধিকৃত পূর্ব জেরুজালেমের এই পবিত্র স্থানে এর আগেও বহুবার তারা এ ধরনের কাজ করেছে। জোর করে তারা আল-আকসা প্রাঙ্গণে প্রবেশ করে কাছাকাছি একটি স্থানে তালমুদিক প্রার্থনায়ও অংশ নিয়েছে।
দীর্ঘস্থায়ী একটি চুক্তির আওতায় সেখানে ইসরায়েলিদের প্রার্থনা এবং তালমুদিক রীতি পালন নিষিদ্ধ। কিন্তু বার বার এই চুক্তি লঙ্ঘন করছে বসতি স্থাপনকারীরা।
এছাড়া প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এবং তার সরকারের উগ্র ডানপন্থী মন্ত্রীরা বহুদিন ধরেই বলে আসছেন যে, তারা এই মসজিদ প্রাঙ্গন দখল করে সেখানে একটি সিনাগগ নির্মাণ করতে চান।
জেরুজালেম হলো ইহুদি ও ফিলিস্তিনিদের ১০০ বছরের সহিংসতার ইতিহাসের সাক্ষী। মুসলিম ও ইহুদি, দুই ধর্মাবলম্বীর কাছেই গুরুত্বপূর্ণ পবিত্র স্থান হিসেবে বিবেচিত আল-আকসা মসজিদ। দুই ধর্মাবলম্বীই আল-আকসাকে নিজেদের বলে দাবি করেন।
Advertisement
মুসলিমদের জন্য তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় স্থান এটি। মসজিদ চত্বরটি মুসলিমদের কাছে হারাম-আল-শরীফ হিসেবেও পরিচিত। অন্যদিকে ইহুদি ধর্মাবলম্বীরা আল-আকসা মসজিদ ও তার আশপাশের অংশকে ‘টেম্পল মাউন্ট’ হিসেবে অভিহিত করেন এবং তাদের জন্য এটি বিশ্বের সবচেয়ে পবিত্র স্থান।
১৯৬৭ সালে ছয়দিনের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধ আল-আকসা মসজিদ ঘিরে সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলেছিল। ইসরায়েল এ যুদ্ধে জয়ী হয়। তারা গাজা ও সিনাই উপদ্বীপ দখল করে নেয়, যা ১৯৪৮ সাল থেকে মিশরের নিয়ন্ত্রণে ছিল। অন্যদিকে, পূর্ব জেরুজালেমসহ পশ্চিম তীরও তারা দখল করে নেয় জর্ডানের কাছ থেকে।
যুদ্ধের আগ পর্যন্ত জর্ডানের ওয়াকফ মন্ত্রণালয় এর তত্ত্বাবধায়ক ছিল। এরপর ইসলামি ওয়াকফ ট্রাস্টের হাতে মসজিদের দায়িত্ব প্রদান করা হয়। শুধু মুসলমানরাই আল-আকসার ভেতরে প্রবেশ করতে পারেন। তবে ইহুদিরা পশ্চিম দেওয়ালে প্রার্থনার জন্য অংশ নেন।
আরও পড়ুন: ফের আল-আকসায় ঢুকে পড়েছে ইসরায়েলিরা ট্রাম্পের গাজা দখলের পরিকল্পনা, দেশে দেশে নিন্দার ঝড় ট্রাম্প কি শেষ পর্যন্ত গাজা দখলে নিতে পারবেন?পুরো মসজিদের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ। স্থানীয়দের অভিযোগ, ১৯৬৭ সালে ইসরায়েল, জর্ডান এবং মুসলিম ধর্মীয় কর্তৃপক্ষের সম্মত হওয়া ব্যবস্থাকে বছরের পর বছর ধরে উপেক্ষা করে আসছে ইসরায়েলিরা। তারা সেখানে আগ্রাসন চালিয়ে যাচ্ছে। একই সঙ্গে ফিলিস্তিনিদের এই মসজিদে নামাজ আদায় করতেও বাঁধা দিয়ে আসছে ইসরায়েল।
টিটিএন