কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ায় বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে পুষ্টিগুণে ভরপুর গাছ আলু ও মেটে আলু। চলতি মৌসুমে উপজেলায় ৪০২ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে এ আলু। যার বাজারমূল্য ধরা হচ্ছে আনুমানিক ২০ কোটি টাকা। সঠিক পরিচর্যায় দেশীয় চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি করা সম্ভব বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। খরচের তুলনায় লাভ বেশি হওয়ায় আগ্রহী হচ্ছেন নতুন নতুন কৃষক।
Advertisement
জানা গেছে, গাছ আলু চাষের জন্য আলাদা জমি, সার ও বাড়তি যত্নের প্রয়োজন হয় না। এটি সাথী ফসল হিসেবে ফলন দেয়। এপ্রিল মাসের প্রথমে গাছ আলু রোপণ করা হয়। তখন জমির মাচায় কুমড়া, চিচিঙা ও ঝিঙা উঠতে থাকে। সেই সঙ্গে একই মাচায় আগস্ট মাসের মাঝামাঝি গাছ অলুর ফলন আসে। বর্ষা মৌসুমে বাজারে অন্য সবজি কম থাকায় এর চাহিদা ভালো থাকে। কৃষকের কাছে এটি আপদকালীন সবজি হিসেবে পরিচিত। এ ছাড়া মেটে আলুর গাছে মাটির নিচেও ৩ থেকে ২০ কেজি ওজনের আলু হয়। গাছ আলু অন্য ফসলের তুলনায় কম খরচে ও বিনা পরিশ্রমে বেশি লাভজনক। তাই উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
উপজেলার চরতেরটেকিয়ার কৃষক আলাউদ্দিন ও রায়হান মিয়া জানান, প্রতি একরে গাছ আলু চাষের খরচ মাত্র ২-৩ হাজার টাকা। প্রতি ১০ শতাংশ জমিতে মাটির ওপর ৩০-৩৫ মণ ফলন হয়। যা প্রতি কেজির বাজারমূল্য ৪০-৪৫ টাকা। মাটির নিচে ২৫-৩০ মণ ফলন হয়। যা ১৪০০-১৬০০ টাকা মণ বিক্রি করা যায়। ফসল উত্তোলনের পর সেগুলোকে পরিষ্কার করাসহ নানা প্রক্রিয়ায় বাজারজাত করা হয়। এ ছাড়া এ আলু চাষকে ঘিরেও এলাকায় অনেক নারীর কর্মসংস্থান হয়েছে।
আরও পড়ুন আগাম শিমের ফলন বিপর্যয়, কৃষকের বোবা কান্না বিদেশে যাচ্ছে ঝালকাঠির আমড়াচরতেরটেকিয়া এলাকার জহুরা বেগম বলেন, ‘এ সময়ে ক্ষেত থেকে কৃষকেরা বাড়িতে এ আলু নিয়ে আসেন। অনেক আলু হওয়ায় আমাদের কাজের জন্য নিয়ে আসেন। আমরা আলু পরিষ্কার করে কিছু টাকা আয় করি। যা দিয়ে সংসারের বাড়তি খরচগুলো মিটে যায়।’
Advertisement
উপজেলার চরতেরটেকিয়া ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি অফিসার মো. বজলুল রহমান বলেন, ‘উপজেলার চরফরাদী ইউনিয়নের অধিকাংশ এলাকার মাটি দোআঁশ, বেলে-দোআঁশ হওয়ায় এবং উপযোগী পরিবেশ থাকায় গাছ বা মেটে আলু মিশ্র ও রিলে পদ্ধতিতে বিনা খরচে আবাদ হচ্ছে। তাই স্থানীয় কৃষক বাণিজ্যিকভাবে এ আলু চাষে দিন দিন আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।’
উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ নূর-ই-আলম জানান, উৎপাদন বাড়াতে অধিদপ্তর থেকে নানাভাবে কৃষকদের সহযোগিতা করা হচ্ছে। চলতি মৌসুমে পাকুন্দিয়া উপজেলায় ৪০২ হেক্টর জমিতে চাষ করা হয়েছে। যা দেশের অন্য জেলার তুলনায় সবচেয়ে বেশি। যার বাজারমূল্য ধরা হচ্ছে আনুমানিক ২০ কোটি টাকা। এ আলু চাষে রোগবালাই কম থাকায় খরচও কম হয়।
এসকে রাসেল/এসইউ/এএসএম
Advertisement