কৃষি ও প্রকৃতি

কমলা চাষে সফল হলেন আব্দুল হালিম

কয়েক বছর আগে বেকারত্ব ঘোচানোর জন্য শ্রমিক হিসেবে কাজ করতে বিদেশ যাওয়ার প্রস্তুতি নেন গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের আব্দুল হালিম (২৭)। কিন্তু দালালের মাধ্যমে প্রতারণার শিকার হয়ে বিদেশে পাড়ি জমাতে পারেননি। বিদেশ যেতে না পেরে অনেকটা হতাশ হয়ে পড়েন তিনি। হঠাৎ একদিন ইউটিউবে দেখতে পান বিদেশি জাতের কমলা চাষ করে সফল হওয়া যায়। এরপর এক বন্ধুর পরামর্শে ২০১৯ সালে বরেন্দ্র অঞ্চলে নিজেদের পুকুরপাড়ের তিন বিঘা জমিতে শুরু করেন দার্জিলিং কমলা চাষ। কমলা চাষে এখন অনেকটাই স্বাবলম্বী হয়েছেন আব্দুল হালিম। স্বপ্ন দেখছেন সফল উদ্যোক্তা হওয়ার।

Advertisement

আব্দুল হালিম গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার শাখাহার ইউনিয়নের বাল্যা গ্রামের আব্দুস সামাদের ছেলে। বর্তমানে তার কমলা বাগানে ২ শতাধিক কমলা গাছ। থোকায় থোকায় ঝুলছে কমলা। চারা রোপণের ২ বছর পর কমলা আসতে শুরু করে। পরের বছর ২০২২ সালে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছে প্রায় ৩ লাখ টাকার কমলা বিক্রি করেন।

আব্দুল হালিমের বাগানের কমলার স্বাদ-রস তুলনামূলক ভালো হওয়ায় এ খবর ছড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন এলাকায়। এরই মধ্যে ওই ২০০ গাছে চলতি বছর উৎপাদিত কমলা বিক্রি হয়েছে ১ লাখ টাকারও বেশি। এখনও গাছে ৪ থেকে সাড়ে ৪ লাখ টাকা বিক্রি করার মতো কমলা আছে।

আরও পড়ুন: শেরপুরে তিন মাসে খরচের চারগুণ লাভ

Advertisement

যুবক আব্দুল হালিমের বাগান দেখতে প্রতিদিন ভিড় করছেন অনেকে। পাহাড়ি ফল হিসেবে কমলার পরিচিতি থাকলেও সমতলের এলাকায় চাষ হওয়ায় অনেকের মধ্যে আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে। তার বাগানে বারি-২, চায়না-থ্রি ও দার্জিলিং জাতের কমলা আছে।

স্থানীয়রা জানান, যখন আব্দুল হালিম কমলা চাষ শুরু করেন; তখন তার কাজটিকে অনেকেই পাগলামি বলেছেন। তার কাজটিকে তেমন গুরুত্ব না দিলেও গাছে কমলা দেখে সবাই অভিভূত। আব্দুল হালিম এখন এলাকার অনেকের অনুকরণীয় আদর্শ কমলা চাষি। তার সফলতা দেখে অনেক বেকার যুবক কমলা চাষে আগ্রহী হচ্ছেন।

আব্দুল হালিম বলেন, ‘আমার এখানে কমলার পাশাপাশি বিভিন্ন ফলের গাছ আছে। কমলার বাজার ভালো থাকায় চাষের আগ্রহ বেড়ে যায়। আমার ৩ বিঘা জমিতে বারি-২, চায়না-থ্রি ও দার্জিলিং জাতের ২ শতাধিক গাছ আছে। ২০২২ সালে ভালোই লাভ হয়েছে।’

আরও পড়ুন: ড্রাগন চাষে সফল বরগুনার শিক্ষক উজ্জল

Advertisement

বাগান দেখতে আসা শক্তিপুর গ্রামের সোহেল রানা জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমাদের উপজেলার মাটিতেও যে কমলা চাষ করা সম্ভব, তা এখানে এসে দেখলাম। এখানকার কমলা বেশ মিষ্টি এবং রসালো। আমি নিজেই কমলা চাষ শুরু করবো।’

দর্শনার্থী সানোয়ার হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ‘এই কমলা বাগান দেখে আমি উৎসাহ পাচ্ছি। এভাবে কমলা চাষ শুরু করলে বিদেশ থেকে আমদানি করতে হবে না। এতে দেশের অর্থ যেমন বাঁচবে; তেমনই টাটকা ফলও পাওয়া যাবে।’

গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সৈয়দ রেজা-ই-মাহমুদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘কমলা চাষ করে হালিম যে সফলতা দেখিয়েছেন, তা কৃষি বিভাগের জন্য গৌরবময়। আগামীতে কৃষি বিভাগ থেকে তাকে আরও প্রযুক্তিগত সহায়তা দেওয়া হবে। কেউ যদি কমলা চাষে আগ্রহী হন, তাহলে তাকেও সার্বিক সহযোগিতা করা হবে।’

আরও পড়ুন: কলা চাষে অর্থনৈতিক সচ্ছলতা পাহাড়ে

গাইবান্ধা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. খোরশেদ আলম জাগো নিউজকে বলেন, ‘কমলা চাষ উত্তরের জেলা গাইবান্ধায় এক নতুন সম্ভাবনা তৈরি করেছে। কমলা চাষের এখন পর্যন্ত কোনো লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়নি। তবে আব্দুল হালিমের কমলা বাগানে কৃষি বিভাগের সব ধরনের সহযোগিতা থাকবে।’

শামীম সরকার শাহীন/এসইউ/এমএস