সাহিত্য

গোলাম রববানীর সিরিজ কবিতা

মেঘনার মেয়ে-৪৫

Advertisement

সেদিনও সারারাত খেলা করেছিলে তুমি একনাগাড়ে একরাতের সাথে, রাত ঘুমাতে পারিনিবালিশের মাথা শুধু শুধু এবাড়ওবাড় করেছিল বুঝি, বালিশেরও মাথাব্যথা হয়? হয় নাকি!

মেঘনার মেয়ে তুমি থাকো কার মেধাজুড়ে:ফলাও কি কবিতার বীজ, চারা, গাছ নাকি উদ্ভিদ? উড়ে এসো গেঁথে গেলে হয়ে কবিতাপালনবিদকবিতার প্রস্বেদন হয়ে ধীরে ধীরে শোষণ কর কারে?

কখনও কখনও কেন মনমরা কৃত্রিম নদীর উজানেতোলে অবহেলিত মনজঞ্জাল, জলভাসা শ্যাওলা যেমনঘুমন্ত মৃত্তিকা কেন জাগাও, জীবিত মৃত্তিকার বুকে কল্পিত পাখিদের ডানায়, গন্তব্যহীন কুয়াশা নামে

Advertisement

মেঘনার মেয়ে-৪৬

পাখির কোনো নাগরিক সনদপত্রঠত্র নেইনেই কোনো জন্মসনদ কিংবা জাতীয় পরিচয়পত্র কোনো পিছুটানই নেই; নেই কোনো কান্নার নদীপাখির কোনো দীর্ঘরাত কিংবা দীর্ঘদিন নেই

পাখির কোনো পরশ্রীকাতরতার কোঠা নেইনেই হিসেবনিকেশের হিসেব বই, অবুঝ এরা এসবেবোঝে না মনখারাপের রহস্য—থ’ মেরে দাঁড়ায় না তোভেজায় না স্মৃতির উঠোন; বন্দি আকাশে থেমে নেইডানা ঝাপটায়ে উড়ে চলে দিকদিগন্তের দিকেঅথচ পাখিদের মধ্যেও পাখি বেজায় দলছুট আজও

পাখির কোনো সংঘ নেই; নেই দলাদলির দ্যোতনা নেই কোনো ভাগ-বাঁটোয়ারার ছন্নছেঁড়া দেশ-জাতি আমি শুধু একটি পাখির জ্ঞাতি, সব জানিয়ে দিয়েছিরেখেছি স্মৃতিভ্রষ্ট মনপাঁজরে মেঘনার মেয়ে প্রিয়া

Advertisement

পাখির মতো আমিও, বুঝি আমার মতো পাখিওপাখির ভিড়েও শুকপাখি; ভালোবাসাবাসি নাই বুঝি

মেঘনার মেয়ে-৪৭

দিনেরাতে কতকিছুই না গড়ার উন্মুক্ত বাসনাতেআপনারা মেতে উঠেছেন; আনন্দোৎসবে ভাসছেন কিচ্ছুই দেখতে পাচ্ছি না—গড়ার গরমিলে আমিওভাঙনের খেলাঘরে, তালমিলিয়ে যাচ্ছি চলে

গড়ার গৌরবে কী সুন্দর আয়োজন এখানে অথচ ভাঙন বেগ থামাতে পারেনি কেউকেউ থামাতে পারেনি, আবেগের নিষ্পাপ বেগভাঙনের অশনিসংকেতে সব তছনছ ভেঙেচুরে

মনভাঙচুর এ কঙ্কালসার অস্থিমজ্জা পুতুলতুল্যইচ্ছে হলেই গড়তে পারো; ভাঙনের উদাত্ত আহ্বানে

মেঘনার মেয়ে-৪৮

ফুল ঝরে গেলে দায় কার? কেন যে এ ফুল ফুটে! জলের ভেতরে কল নড়ে, ফোঁটা অশ্রুজল গড়ে

অত্যন্ত একটি দিন যদি সারাদিন বৃষ্টিতে ভিজে যেতজেনেছি ঝরেন বৃষ্টি সারাদিন আনমনে অঝোরে যদি বৃষ্টিমুখর ব্যথায় দু’টি চোখে বৃষ্টি নামানো যেতহয়তোবা অপূর্ণতার কোনো বালাই থাকতো না মেঘে

মেঘের আড়ালে আছে টাটানো ব্যথার কাহিনি ভিজে যেতে পারে কত দরকার, যতটুকু প্রয়োজন ভাদর ছাড়াও ভিজে অভাদরের অনাদর বেদনেবুকে মেঘনার মেয়ে নিয়ে মনোকষ্টের মরণে

যদি দু’চোখে কান্না নামিয়ে শুষ্ক মরু করা যেতোযদি ঠোঁট এঁটে এমনইভাবে মনের কথাটি বলা হতো হাসিতে হাসিতে হেসে, বসে বসে, চেয়ে আসা যেতোস্মৃতির শহর ধরে, বুকে নিয়ে, এলিজি হতো কবিতা

আসে না কেউই ফিরে, আমি গিয়েছিলাম সেদিনসব অসময়ে আসে; যেমন বেদনা তেমন যাতনা

মেঘনার মেয়ে-৪৯

তোমার চাহনির বিপরীতে আজও আমি চেয়ে আছিস্টিলের সেই রেলিং ধরে যেমন তুমি ঠাঁয় দাঁড়িয়ে; হয়তো তেমন—সেখানেই তো তোমার প্রিয় জন্মভূমি বৃষ্টিভেজা খোলা ছাদ ওড়ে ঘনকালো খোলাচুলে

তুমুল কোনো বৃষ্টির দিনে টাইলস বাঁধা ভেজা ছাদথেকে যাওয়া হালকা জলে যেনও ছায়া পড়েছেছায়ামূর্তি, মেঘনার মেয়ে—জলরঙা চিত্রের ক্যানভাস জেগে থেকে কবির ভেতর, অস্থিরতার অনল রোষেছাদ বেছানো টাইলসের পার ছায়া ভর করেছে সমানমনের আকাশজুড়ে; সরাতে গেলে আটকে পড়ে কেমন!

পেয়ে দু’হাতের স্পর্শ স্টিল রেলিং প্রশান্তিতে ভেজেযেমন মেঘ ভিজেছে কবির নিষ্পলক দুটি চোখেমেঘ ভেঙে গেলে পড়ে জল, মন ভেঙে গেলে অশ্রুমেঘনার মেয়ে তোমারও মিষ্টিমুখে হাসুক চাঁদ আজন্ম

জল আর অশ্রু আমি সঞ্চয়িতা থেকে সঞ্চিত রেখে যাই; প্রাপ্তি ও অপ্রাপ্তির কানাকড়ির বেদনা ব্যাংকে।

এসইউ/এমএস