সাহিত্য

এম এ রহমানের ছয়টি কবিতা

জীবনের উপন্যাস

Advertisement

জীবনের ভাঁজ খুলে হতাশার নিশিরাতজলজ চোখের স্বপ্ন বেয়ে ঝরে নীল জলভবিতব্য যাপনের রন্ধ্রে রন্ধ্রে হাঁটে ভয়ফুসফুসে জমা হয় বেদনার নিকোটিন।

আর কতদিন? যন্ত্রণার প্রস্রবণ ব্যথাসার্জিক্যাল চাকু ভয় ভাবনার দেহ ভাঁজে!তবু বাঁচে ঝিঁঝি পোকা; তুমুল বৃষ্টির পরেআত্মচিৎকারে কাঁপে গাঢ় অন্ধকার রাত।

জীবনের ঝরা পাতা নৈঃশব্দে বাজে মর্মরেঋতুচক্রে হেঁটে সময়েরা মাতে ভিন্ন গল্পেআয়ুপথে হাহাকার জীবন যুদ্ধের রক্তজীবনের উপন্যাস থেমে থাকে না কখনো।

Advertisement

****

কোথায় দাঁড়াব আমি

কোথায় দাঁড়াব আমি? জীবনের খরস্রোতা নদী!হৃদভূম ভেঙে যায় বেদনার নীলজল স্রোতেজরায়ুর ঘর ভেঙে ছোট্ট ডিঙি নায়ে আমি একাসময়ের ছেঁড়া পালে ভাসি গন্তব্যহীন গন্তব্যে।

পা বাড়ালেই শত পথ—তবু পথ খুঁজি পথে পথেচোখ খুলে তাকালেই ঝলমল রঙিন পৃথিবীতবু অন্ধত্বের চোখ আলোতে খুঁজে ফেরে আঁধার জীবনের পথ খুঁজি ভুল মানুষের মানচিত্রে।

Advertisement

ক্ষুধার্ত চোখের ভাষা অনুবাদ করে নষ্টতত্ত্বমুঠো মুঠো সফলতা পঁচে যায় বদ্ধ করতলেবিবেকের নগ্নদেহে চিত্র আঁকে নাগরিক চোখপ্রশান্তির খোলাকাশে ভরে যায় নাগরিক ধোঁয়া।

কোথায় দাঁড়াব আমি? একটা খোলা আকাশ চাইমুঠো মুঠো রোদ্দুরের আলোমাখা শুভ্রাকাশযেখানে সবুজ পৃথিবী-চোখ খুলে প্রকৃতির কোলাহলেসোঁদা ঘ্রাণের মাটিরা শুষে নেয় নাগরিক নোনাজল।

****

একটি কবিতা বৃত্তান্ত

তোমার অধর বেয়ে ঝরে পড়া আমিময় সুরএকটি কবিতা হবে—এক সবুজ দ্বীপের মতোচারিপাশে সমুদ্রের বয়ে যাওয়া কলকল স্রোতেতোমার কবিতা পাঠে দোল খাবে শুভ্র কাশফুল।

এক জীবন সময়—সময়ের ভাঁজে ভাঁজে তুমিহৃদয়ের লেপ্টে থাকা জীবন অধরে ঝরা মুক্তোখুঁটে খুঁটে তুমি, আমি—এক জীবনে কবিতা হবোআমাদের ব্যক্তিগত আকাশে আমরা পাখি হবো।

চাতকের অপেক্ষায় বাসা বাঁধে এক স্বপ্নপাখিদাঁড়াতে শিখিনি বলে উপেক্ষার রক্তলাল চোখতুমি থেকে আমি, আমি থেকে তুমি দূরত্বের রেখামহাশূন্য বিস্তৃতিতে তুমি হাঁটো অন্য ছায়াপথেমৃত নক্ষত্রের মতো কৃষ্ণগহ্বর অন্ধকারে বসেসমস্ত আলোক শুষে হেঁটে যাই মহাকাল পথে।

****

পাস্তুরিত স্মৃতি

পাস্তুরিত দুধসাদা স্মৃতিগুলো শরতের মতোশিশির ভেজানো জলে হৃদয়ের দুর্বা ভিজে যায়তখন শুভ্রমেঘেরা ওড়ে—তারা মিটমিট জ্বলেতখন রাত্রির কোলে ফুটন্ত শিউলি ফুল ঘ্রাণভাবনার রন্ধ্রে রন্ধ্রে হৃদয় সমুদ্রে ঢেউ তোলে।

তুমি নেই রয়ে গেছে তোমার দুধসাদা স্মৃতিরাতোমার না থাকা জুড়ে; স্মৃতিরা হাঁটতে থাকে, সেই—আমাদের প্রণয়ের দোল খাওয়া কাশফুল দিনেঅপেক্ষা প্রহর গুনে তুমি চড়ো ছোট্ট ডিঙি নায়েআমি মাঝি দাঁড় টানি প্রেম সমুদ্রের অথৈ জলে।

তুমিময় রৌদ্রছায়া লুকোচুরি পেঁজা মেঘ ওড়েদিনান্তিক অন্ধকারে জাগতিক স্মৃতিদের ঢলভাবনারা হেঁটে যায় শিউলি ঝরা সকালবেলাআর, ঘুমধরা নিশাচর চোখ ঢলে পড়ে ঘুমঘরে।

****

উপলব্ধি

সময়ের তীরে বিদ্ধ এক ক্লান্ত বিবশ শরীররক্তছাপে পায়ে পায়ে হেঁটে যায় অজানার পথেদৃষ্টি ক্ষীণ হয়ে আসে ঝাপসা ঝাপসা চারিদিকআলোরা হারিয়ে যায়—আতঙ্ক চোখের প্রতিবিম্বে।

পেছনে তাকাই, দেখি—একটি মাতৃভ্রূণ সকালকাঁচা রোদে স্নান করে ঘুড়ি ওড়ায় মুক্ত আকাশেনাটাই গোটাতে থাকি বর্তমান সময়ের হাতেকাঁচা রোদে তাপ বাড়ে বিদগ্ধ মাতৃভ্রূণ সকাল।

দুপুরের অগ্নিচোখে পুড়ে যায় সমুদয় স্বপ্নসময় হাঁটতে থাকে ছাঁই ওড়া বিকেলের দিকেপরে তৃষ্ণার্ত গোধূলি ডুবে যায় অন্ধকার জলেগোটানো সময় ঘুড়ি পড়ে থাকে বিবশ শরীরে।

সময় কি মহৌষধ? মিথ্যে কথা সান্ত্বনার বাণীজীবনের পেট শুধু হজমের ক্ষমতা বাড়ায়এই সত্যটুকু জেনে হেঁটে যাই গন্তব্যের দিকেভয়হীন, ক্ষুধাহীন—মৃত্যুর হাসিমাখা স্নিগ্ধ ভোরে।

****

জীবনের মানচিত্র

সভ্যতার বিষবাষ্পে বোধিবৃক্ষে পাতা ঝরে ক্রমেঅট্টালিকা শুয়ে থাকে, আকাশে নীল চাদর গায়েঘুম নেই ক্ষুধা চোখে—তৃষ্ণা বাড়ায় জোছনা আলোজীবন চুল্লীতে সিদ্ধ—শান্তি, হৃদহাড়ি ভরে দুঃখ-অন্নে।

তবুও ছুটছি—নিরন্তন, দিনান্তিক নিশ্চয়তা খুঁজে পাহাড়ে, সমুদ্রে আর আকাশের তারায় তারায়মায়াহীন, ছায়াহীন—ছাদহীন পৃথিবী পোড়ে রোদ্দুরেপাঠশালায় খাতা ভরে—ভুল জীবনের অঙ্ক কষে।

শাণিত মস্তিষ্ক খোঁজে সরল অঙ্কের সমাধানদেখতে সরল কিন্তু যোগ-বিয়োগ, গুণন-ভাগেবিপরীত দুইটি চলকে চলে সব হিসেব-নিকেশ দিনশেষে সব অঙ্ক কষে সমাধান আসে ‘শূন্য’।

যারা ঋতুচক্র বুঝে হেঁটে হেঁটে চলে তার পথেজীবনের মানচিত্র তাকে দেখায় সঠিক পথ।

এসইউ/এমএস