জাতীয়

বিচার বিভাগের স্বায়ত্তশাসন বৃহত্তর শাসন ব্যবস্থার সংস্কার রক্ষায়

বিচার বিভাগের স্বায়ত্তশাসন বৃহত্তর শাসন ব্যবস্থার সংস্কার রক্ষায়

প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ বলেছেন, প্রশাসনিক স্বায়ত্তশাসন ছাড়া কোনো বিচারব্যবস্থা সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করা সম্ভব নয়। এই কাঠামোগত স্বাধীনতা বিচার বিভাগের অভ্যন্তরীণ সংস্কার এবং বৃহত্তর শাসনব্যবস্থার সংস্কার রক্ষায় অপরিহার্য।

Advertisement

সোমবার (১৪ জুলাই) রাজধানীর মহাখালীতে ব্র্যাক সেন্টার মিলনায়তনে ‘যথাসময়ে বিচার নিশ্চিত করতে পারিবারিক আদালতের পদ্ধতিগত জটিলতা নিরসন’ শীর্ষক একটি জাতীয় কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এমন কথা বলেন।

প্রধান বিচারপতি বলেন, কার্যকর নাগরিকবান্ধব সেবা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থা গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার ও রূপান্তরের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। সাম্প্রতিক আইনগত সংস্কারগুলো কেবল আধুনিকায়নের জন্য নয়, বরং ন্যায়বিচারকে সহজপ্রাপ্য করে তোলাই এই সংস্কারের মূল লক্ষ্য।

সামাজিক ক্ষমতায়ন ও আইনি সুরক্ষা (সেলপ) কর্সূচির উদ্যোগে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ব্র্যাক।

Advertisement

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি ফারাহ মাহবুব। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন-ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ্ এবং ব্র্যাকের সামাজিক ক্ষমতায়ন ও আইনি সুরক্ষা ( সেলপ) ও জেন্ডার জাস্টিস অ্যান্ড ডাইভারসিটি (জিজেডি) কর্মসূচির সহযোগী পরিচালক শাশ্বতী বিপ্লব।

পারিবারিক আদালতের দীর্ঘসূত্রতার কথা উল্লেখ করে প্রধান বিচারপতি বলেন, গত ৩১ মার্চ পর্যন্ত ৭৪ হাজার ২৫৯টি মামলা বিচারাধীন, যার মধ্যে ৫ হাজার ৩৪টি মামলা পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে নিষ্পত্তির অপেক্ষায়। তবে একই সময়ে, ২০২৫ সালের প্রথম প্রান্তিকে ১০ হাজার ৮৯টি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। তিনি এটিকে বিচারক এবং বার নেতৃবৃন্দের ইতিবাচক জনমুখী দৃষ্টিভঙ্গির ফল বলে উল্লেখ করেন।

প্রধান বিচারপতি বলেন, বিচারপ্রক্রিয়ায় পদ্ধতিগত অদক্ষতা দূর করতে দেওয়ানি কার্যবিধির সাম্প্রতিক সংশোধনের মাধ্যমে মামলা পরিচালনা কার্যক্রমের স্তর কমানো হয়েছে, যা অপ্রয়োজনীয় দেরি ও জটিলতা কমাবে। বিচার বিভাগের সঙ্গে ব্র্যাকের অংশীদারত্বের প্রশংসা করে প্রধান বিচারপতি বলেন, ব্র্যাকের উদ্যোগে আয়োজিত বিচারক, আইনজীবী, কোর্ট কর্মচারী এবং বিচারপ্রার্থীদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত পাঁচটি আঞ্চলিক কর্মশালায় মাঠপর্যায়ের বাস্তব চিত্র উঠে এসেছে। যেখানে বিচার কার্যক্রমে সমন জারির পুরো পদ্ধতি, মামলা মুলতবির অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার, অসংগঠিত মামলা ব্যবস্থাপনা, অপ্রতুল মানসিক সহায়তা এবং আদালতের অবকাঠামোর সীমাবদ্ধতার কথা ওঠে এসেছে।

আদালতে প্রযুক্তির ব্যবহারের গুরুত্ব উল্লেখ করে প্রধান বিচারপতি বলেন, ডিজিটাল কার্যতালিকা, মুলতবি পর্যবেক্ষণ এবং এসএমএস-এর মাধ্যমে সমন জারির পাইলট প্রকল্পে ইতিবাচক ফল পাওয়া গেছে এবং এটি এখন পারিবারিক আদালতেও চালু হবে। ভবিষ্যতে জাতীয় পরিচয়পত্রের সঙ্গে সংযুক্ত ডিজিটাল তলব এবং একটি বিচারিক সহায়তা ডেস্ক চালুর পরিকল্পনা রয়েছে বলেও জানান প্রধান বিচারপতি।

Advertisement

বিচারপতি ফারাহ মাহবুব বলেন, পারিবারিক আদালতে ন্যায়বিচার মানে জয় বা পরাজয় নয়; এটি মূলত একটি নিরাময়প্রক্রিয়া। আর এই ব্যবস্থার অংশ হিসেবে আমাদের এটিকে আরও সহজপ্রাপ্য, সহানুভূতিশীল ও দ্রুততর করতে হবে। তিনি এই কর্মশালাকে একটি ন্যায়সঙ্গত, দক্ষ এবং জনগণকেন্দ্রিক পারিবারিক বিচারব্যবস্থা গঠনে সমন্বিত ও দীর্ঘমেয়াদী উদ্যোগ হিসেবে উল্লেখ করেন।

তিনি বলেন, এখানে বিচার বিভাগ, সরকারি প্রতিষ্ঠান, আইনি সেবা প্রদানকারী সংস্থা, উন্নয়ন সহযোগী এবং গণমাধ্যমের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেছেন। এটি বাংলাদেশের প্রতিটি পরিবারকে ন্যায়বিচারে সহজ প্রবেশাধিকার নিশ্চিতে সবার সম্মিলিত প্রতিশ্রুতিকে পুনর্ব্যাক্ত করছে।

ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ্ বলেন, আমরা বিশ্বাস করি, একটি সমতা ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজে প্রতিটি নারী ও কিশোরী ক্ষতিকর সামাজিক ও সাংস্কৃতিক নিয়মের বেড়াজালে আবদ্ধ না থেকে তার পূর্ণ সম্ভাবনা বিকাশের সুযোগ পায়।

সবার জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে ব্র্যাকের বহুমাত্রিক কার্যক্রম রয়েছে। এর মধ্যে জনগণকে সম্পৃক্ত করা, তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং নীতিগত ও আইনগত সহায়তা নিশ্চিত করা উল্লেখযোগ্য। সাধারণ মনুষ, বিশেষত নারী ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য ন্যায়বিচার প্রাপ্তিতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে, এমন বাধাগুলো দূর করতে কাজ করছে ব্র্যাক।

এফএইচ /এমএসএম