কৃষি ও প্রকৃতি

নওগাঁয় বেড়েছে সরিষা চাষ

সরিষা ফুলের হলুদ বরণে সেজেছে নওগাঁর বিভিন্ন উপজেলার ফসলের মাঠ। যতদূর চোখ যায় শুধু হলুদ আর হলুদ রঙের মাখামাখি। চলতি মৌসুমে জেলার প্রায় প্রতিটি ফসলের মাঠজুড়ে এখন সরিষা ফুলের সুবাসে ভরা।

Advertisement

শীতের শিশির ভেজা সকালে সরিষার সবুজ গাছের হলুদ ফুলে সোনাঝরা রোদে ঝিকিমিক করছে। এ এক অপরূপ সৌন্দর্যে প্রকৃতি যেন নতুন প্রাণ ফিরে পেয়েছে। যেদিকে দুচোখ যায় শুধু সরিষা ফুলের হলুদ রঙের চোখ ধাঁধানো বর্ণীল সমারোহ। আর মৌমাছির গুনগুন শব্দে সরিষা ফুলের রেণু থেকে মধু সংগ্রহে ব্যস্ত মৌমাছির দল।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে জেলার ১১টি উপজেলায় ৩২ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। যেখানে ৩৪ হাজার ৭৪৫ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে।

উল্লেখযোগ্য জাতগুলোর মধ্যে রয়েছে বারী-১৪, বারী-১৫, বারী-৯, বারী-১৬, বারী-১৭, বিনা-৪, বিনা-৯, টরি-৭ এবং সম্পদ। উপজেলা ভিত্তিক নওগাঁ সদর উপজেলায় ১ হাজার ৮২৫ হেক্টর, রানীনগরে ২ হাজার ৮০৫ হেক্টর, আত্রাইয়ে ১ হাজার ৭৩০ হেক্টর ও বদলগাছীতে ৯৩৫ হেক্টর।

Advertisement

অন্যদিকে মহাদেবপুরে ১ হাজার ৫০৫ হেক্টর, পত্নীতলায় ৫ হাজার ৩০ হেক্টর, ধামইরহাটে ১ হাজার ৯৬০ হেক্টর, সাপাহারে ৩ হাজার ৭৫০ হেক্টর, পোরশায় ৩ হাজার ৬৭০ হেক্টর, মান্দায় ৪ হাজার ৪১০ হেক্টর এবং নিয়ামতপুরে ৪ হাজার ৪৮০ হেক্টর জমি। জেলার পাঁচ হাজার কৃষকের মাঝে প্রত্যেককে এক কেজি উন্নত জাতের সরিষা বীজ, ২০ কেজি ডিএপি (ডাই-অ্যামোনিয়াম ফসফেট) ও ১০ কেজি এমওপি (মিউরেট অফ পটাশ) সার প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে।

নওগাঁ সদর উপজেলার ভীমপুর, নিন্দইন, বলিহার ও ফতেপুর গ্রামের মাঠ, জেলার মান্দা উপজেলার কৈইকুড়ি, শ্রীরামপুর, শংকরপুর, ভারশোঁ ও পাকুরিয়া গ্রাম, সাপাহার উপজেলার জোবাই বিলের মাঠ, পাতাড়ি গ্রামের মাঠ, মহাদেবপুর উপজেলা খাজুর, গোবিন্দপুর, আলিদেওনা, জয়পুর, বলরামপুর ও স্বরস্বতীপুর গ্রামের মাঠ এবং পত্নীতলা উপজেলার আকবুর, রহিমাপুর, মধইল, শ্রীপুর, বরহট্টি, মধুপুর ও বাদজামগ্রামসহ জেলার অন্য উপজেলার মাঠে সরিষার সমারোহ।

কৃষি বিভাগ থেকে প্রণোদনা ও সরিষা তেলের দাম বেশি হওয়ায় চলতি বছরে কৃষকদের মাঝে সরিষা চাষে আগ্রহ বেড়েছে। নতুন সরিষা ২২০০ টাকা মণ এবং একটু শুকনা সরিষা ২৫০০-২৬০০ টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে।

মান্দা উপজেলার ফতেপুর গ্রামের কৃষক তৈয়বুর রহমান বলেন, বারি-১৪ ও ১৫ জাতের সরিষা পাকতে একটু বেশি সময় লাগে এবং ফলনও বেশি হয়। এ কারণে আগাম বোরো রোপণ করতে দেশীয় জাতের (টরি) সরিষা লাগানো হয়। আগাম সরিষার দামও ভালো পাওয়া যায়। বর্তমানে ডিজেল এর দাম বেশি হওয়ায় আবাদ করতে বিঘা প্রতি ৩০০-৫০০ টাকা বেশি খরচ হচ্ছে।

Advertisement

একই গ্রামের কৃষক ইয়াকুব আলী বলেন, বাজারে সরিষা তেলের দাম বেশি। গত বছর দেড় হাজার থেকে দুই হাজার টাকা মণ বিক্রি করেছি। নতুন জাতের সরিষা উঠলে আশা করছি দাম বেশি পাবো। দাম বেশি হওয়ার সম্ভবনা থাকায় এ বছর তিন বিঘাতে সরিষার আবাদ করেছি। যা গত বছর ছিল ১০ কাঠা।

উপজেলার ভারশোঁ গ্রামের সরিষা চাষি হারুন রশীদ বলেন, সরিষার জমি প্রস্তুত করতে বিঘাপ্রতি প্রায় আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা খরচ হয়। এ বছর দুই বিঘা জমিতে দেশীয় জাতের সরিষা চাষ করেছেন।

এর মধ্যে একবিঘা থেকে ৬ মণ সরিষা পেয়েছেন। নতুন সরিষা হাটে তুলে ২২০০ টাকা মণ দরে বিক্রি করেছেন। ওই জমিতে বোরো আবাদ করবেন। দুইটি চাষ ও সামান্য পরিমাণ সার দিয়ে চারা রোপণ করবেন। সরিষা বিক্রির টাকা দিয়ে বোরোর আবাদ করবেন বলে জানান তিনি।

নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. শামসুল ওয়াদুদ বলেন, এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় জমিতে জোর এসেছে। এ কারণে সরিষার ভালো আবাদ হয়েছে যা থেকে উৎপাদনের প্রত্যাশিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের নিশ্চিত সম্ভাবনা রয়েছে।

আগের যে কোনো সময় থেকে বাজারে সরিষার দামও বেশি। যেহেতু বাজারে সয়াবিন তেলের দাম বেশি রয়েছে। সেহেতু সরিষা দাম কম হবে না বলে মনে হচ্ছে। সরিষা চাষে কৃষকদের উদ্বৃদ্ধ করতে পাঁচ হাজার কৃষককে বীজ ও সার দেওয়া হয়েছে।

আব্বাস আলী/এমএমএফ/জেআইএম