ময়মনসিংহের বাজারে সারাবছরই অন্যান্য মাছের চেয়ে পাঙাশের দাম কম থাকে। ফলে এই মাছ বেশি কেনেন নিম্ন ও মধ্যম আয়ের লোকজন। অথচ সস্তা সেই মাছের দামও বাড়তে শুরু করেছে। এক মাসের ব্যবধানে কেজিতে ৪০-৬০ টাকা বেড়েছে পাঙাশের দাম।
Advertisement
মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে শহরের মেছুয়া বাজার ঘুরে জানা যায়, এক মাস আগে আকারভেদে প্রতিকেজি যেসব পাঙাশ ৯০-১৩০ টাকায় বিক্রি হতো, এখন একই আকারের পাঙাশ বিক্রি হচ্ছে ১৩০-১৯০ টাকা কেজি। অন্যান্য মাছের দাম আরও বেশি হওয়ায় নিম্ন ও মধ্য আয়ের অনেকে পাঙাশ কিনেই বাড়ি ফিরছেন।
এদিকে গত সপ্তাহের ব্যবধানে কয়েক জাতের মাছের দাম কেজিতে ১০ টাকা পর্যন্ত কমলেও বেশিরভাগ মাছ আগের বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে। কেজিতে পাবদা, ট্যাংরা ও কৈ মাছের দাম কমেছে ১০ টাকা। পাবদা এখন প্রতিকেজি ২৭০-৩৪০, ট্যাংরা ৩৫০-৪০০ ও কৈ ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আগের বাড়তি দামে শিং ৩০০-৪৫০, সিলভার কার্প ২০০, বাউশ ২৮০, শোল ৫০০-৫৫০, রাজপুঁটি ২০০-২২০, টাকি ৩৫০-৫০০ ও তেলাপিয়া ১৫০-২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মৃগেলের দাম কেজিতে ১০ টাকা বেড়েছে। বিক্রি হচ্ছে ২৩০-২৬০ টাকা কেজি। দুই কেজি ওজনের রুই ও কাতলা ২৭০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
আরও পড়ুন ‘কিনবার আইছি রুই-কাতল, পাঙ্গাশ কিন্ন্যা বাড়িত যাইতাছি’-বাজারে মাছ কিনতে এসেছিলেন ফজলু মিয়া। তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নগরীর একটি বিস্কুট কারখানায় শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন ফজলু। ৪০০ টাকা মজুরিতে কাজ করেন। প্রতি শুক্রবার কারখানা বন্ধ থাকে। যে টাকা রোজগার করেন, তাতে পাঁচ সদস্যের ঠিকমতো ভরণপোষণ করতে পারেন না বলে তিনি জানান।
Advertisement
ফজলু মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, ‘সব মাছের দাম বাড়তে বাড়তে গরিবের হাতের নাগালের বাইরে চইল্যা যাইতাছে। আমি গরিব মানুষ। হিসাব কইরা খরচ করন লাগে। অন্য মাছের দিকে না তাহায়্যা (তাকিয়ে) পাঙাশ দরদাম করতাছিলাম। কিন্তু পাঙাশের দাম আগের চাইয়্যা আরও বাইড়া গেছে। পাঙাশ গরিবের খাওন। রুই-কাতলার চাইতে দাম কম থাহায় (থাকায়) পাঙাশই কিনছি।’
মাছের দামের ঊর্ধ্বগতির কারণ প্রসঙ্গে বিক্রেতা আবুল হাশেম বলেন, ‘রুই-কাতলাসহ অন্যান্য মাছের সরবরাহ কমতি নেই। ক্রেতারও অভাব নেই। তবে পাঙাশ ছাড়া অন্যান্য মাছের দাম তুলনামূলক বেশি হওয়ায় নিম্ন ও মধ্য আয়ের ক্রেতা পাঙাশের দিকে ঝুঁকছেন। তবে ধীরে ধীরে এই মাছটির দামও বেড়ে যাওয়ায় ক্ষুব্ধ হচ্ছেন ক্রেতারা। তবে বিক্রি কমেনি।’
বাজারে কয়েক জাতের সবজির দাম যৎসামান্য কমলেও বেশিরভাগ সবজি গত সপ্তাহের মতো বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে। প্রতিকেজি করলার দাম ১০ টাকা কমেছে। এখন করলা বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়। আকারভেদে লেবু প্রতি হালিতে দাম কমেছে ৫-১০ টাকা পর্যন্ত। এখন প্রতি হালি লেবু বিক্রি হচ্ছে ৩৫-৪০ টাকায়। গত সপ্তাহ পাঁচ টাকা বেড়ে টমেটো ১৫ টাকায় বিক্রি হলেও এখন আরও পাঁচ টাকা বাড়িয়ে ২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া স্থিতিশীল অবস্থায় বেগুন ২০, গাজর ২৫, শিম ১৫, মটরশুঁটি ৬০, বরবটি ৬০, মুলা ১৫, মিষ্টিকুমড়া ১৫, কচুরলতি ৬০ ও শসা ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাঁধাকপি ২০, ফুলকপি ১৫ ও লাউ ৩০ টাকা পিস হিসেবে বিক্রি হচ্ছে।
আরও পড়ুন রমজানের আগে পণ্যের দাম স্থিতিশীল, সংকট কাটেনি ভোজ্যতেলেসবজি কিনছিলেন মধ্যবয়সী মো. নুরহাদি। তিনি বলেন, ‘শীতের শুরু থেকে সবধরনের সবজির দাম কমেছিল। তবে গত সপ্তাহ বেশিরভাগ সবজির দাম বেড়ে যায়। এখনো প্রায় সব সবজি আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে।’
Advertisement
সবজি বিক্রেতা আব্দুল হক লিটন বলেন, ‘সম্প্রতি ময়মনসিংহ সদরের চরাঞ্চল থেকে সবজি কম আসছে। এরইমধ্যে গরম পড়াও শুরু হয়েছে। এ কারণে শীতের অনেক পণ্যের সরবরাহ কমেছে। ফলে কিছু সবজির দামও সামান্য বেড়েছে।’
এদিকে কেজিতে ১০ টাকা কমেছে ব্রয়লার ও সাদা ককের দাম। ব্রয়লার ১৭০ ও সাদা কক ২৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অপরিবর্তিত অবস্থায় লেয়ার ৩৫০, সোনালি ২৯০, গরুর মাংস ৭৫০ ও খাসির মাংস এক হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ফার্মের মুরগির ডিম ৪৫, হাঁসের ডিম ৭৫ ও দেশি মুরগির ডিম বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা হালি।
মুরগি বিক্রেতা সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘ব্রয়লার ও সাদা ককের দাম ১০ টাকা কমেছে। তবে অন্যান্য মুরগি অপরিবর্তিত অবস্থায় বিক্রি হচ্ছে। কয়েকদিন পরই রোজা শুরু হবে। পাইকাররা সিণ্ডিকেট করে দাম বাড়ি দেওয়ার আবাস পাচ্ছি। আমাদের কাছে বেশি দামে বিক্রি করলে আমরাও ক্রেতাদের কাছে বেশি দামে বিক্রি করতে বাধ্য হবো।
আরও পড়ুন বেড়েছে সবজি-মাছের দাম, স্থিতিশীল মাংসদাম ওঠানামা করেনি চালের বাজারে। ২৫ কেজির নাজিরশাইল এক হাজার ৮৫০ টাকা, বিআর পুরাতন ২৮ ও ২৯ জাতের চাল এক হাজার ৬০০, কাটারি এক হাজার ৮৫০, চিনিগুঁড়া আড়াই হাজার ও চিনিগুঁড়া উন্নত তিন হাজার ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
চালের পাইকার আব্দুল বারেক বলেন, ‘এখন চালের যে দাম রয়েছে, তাতেও অসন্তুষ্ট ক্রেতারা। আবারও কোনো অজুহাতে দাম বাড়ানো হলে ক্রেতারা ক্ষুব্ধ হয়ে যাবেন। আমি অনেক মিলারদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা জানিয়েছেন, সামনে দাম বাড়ার সম্ভাবনা নেই।’
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, ময়মনসিংহে বার্ষিক মাছ উৎপাদন হয় চার লাখ ২ হাজার ৫৬৮ মেট্রিক টন। জেলায় মাছের চাহিদা রয়েছে এক লাখ ২ হাজার ৬৫৪ মেট্রিক টন। এখানকার চাহিদা পূরণ করে বার্ষিক মাছ উদ্বৃত্ত থাকছে দুই লাখ ৭৬ হাজার ৫১৪ মেট্রিক টন। অর্থাৎ এই পরিমাণ মাছ যাচ্ছে অন্য জেলায়। পাঙাশ উৎপাদনের জন্য ময়মনসিংহ জেলা বিখ্যাত। নিজ জেলার পাঙাশের চাহিদা পূরণ করে অন্য জেলায়ও বিক্রি হচ্ছে। বাজারে বিক্রেতারা সিন্ডিকেট করে দাম বাড়াচ্ছে বলে ধারণা করছি।
এ বিষয়ে ময়মনসিংহের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট উম্মে হাবীবা মীরা বলেন, নগরীর বাজারগুলোতে আমাদের তদারকি রয়েছে। জেলার উপজেলা পর্যায়ের বাজারগুলোতেও ভ্রাম্যমাণ আদালত নিয়মিত অভিযান চালিয়ে অসাধু ব্যবসায়ীদের জরিমানার আওতায় আনছেন।
এসআর/জিকেএস