কৃষি ও প্রকৃতি

ফরিদপুরে পেঁয়াজ রোপণের ধুম পড়েছে

ফরিদপুরে শুরু হয়েছে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজের আবাদ। মুড়িকাটা পেঁয়াজ বিক্রি শেষ হয়েছে সম্প্রতি। এখন জমিতে পুরোদমে হালি পেঁয়াজ রোপণের ধুম পড়েছে। বীজ থেকে উৎপাদিত চারা রোপণ করা হচ্ছে মাঠজুড়ে। কৃষকরা তীব্র শীত আর ঘন কুয়াশা উপেক্ষা করে কাক ডাকা ভোর থেকে সারাদিন পেঁয়াজের চারা রোপণে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

Advertisement

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মুড়িকাটা পেঁয়াজে এবার কৃষকরা আট-দশ গুণ লাভ পেয়েছেন। যে কারণে ক্ষেত থেকে তুলে ওই পেঁয়াজ বিক্রির পরপরই আবার হালি পেঁয়াজ রোপণ কাজ করছেন। ফরিদপুর জেলায় চলতি বছরে ৪১ হাজারের অধিক হেক্টর জমিতে এবার পেঁয়াজের আবাদ হচ্ছে। এর মধ্যে প্রায় অর্ধেকেরও বেশি জমিতে ইতিমধ্যে পেঁয়াজ রোপণ করা শেষ হয়েছে।

সরেজমিনে জেলার নয়টি উপজেলার বিভিন্ন মাঠে মাঠে এখন কেবল পেঁয়াজ রোপণের চিত্র দেখা যাচ্ছে। ফরিদপুরে পেঁয়াজের রাজধানী হিসেবে পরিচিত সালথা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ উপজেলায় গত বছর ১১ হাজার ৯৪৮ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের আবাদ হয়। চলতি মৌসুমে ১২ হাজার ২৪০ হেক্টরের জমিতে পেঁয়াজের চাষ হচ্ছে।

এ বছরও লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অধিক জমিতে পেঁয়াজের আবাদ হবে। লাল তীর কিং, তাহেরপুরী, ফরিদপুরী, বারি-১সহ বিভিন্ন জাতের পেঁয়াজ রোপণ করা হচ্ছে। পেঁয়াজ রোপণের ভরা মৌসুমে চাষিরা চারা রোপণের কারণে শ্রমিক সঙ্কট দেখা দিয়েছে। কৃষকরা অতিরিক্ত মূল্যে শ্রমিক সংগ্রহ করে দ্রুত রোপণ কার্যক্রম সম্পন্ন করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন।

Advertisement

সালথা উপজেলার গট্টি ইউনিয়নের পেঁয়াজ চাষি মো. হাফেজ মোল্যা, রামকান্তুপুরের নুরুল ইসলাম, সোনাপুরের মো. শাহজাহান মোল্যা জাগো নিউজকে বলেন, কয়েক বছর দাম ভালো পাওয়ায় কৃষকরা পেঁয়াজ চাষে ঝুঁকেছেন। উপজেলার প্রতিটি গ্রামের মাঠেই পেঁয়াজ চারা রোপণের ধুম পড়ে গেছে।

প্রতিদিন ভোর থেকে পেঁয়াজের চারা উত্তোলনের পর জমিতে রোপণ করা হচ্ছে। জনপ্রতি ৫০০ টাকা থেকে ৬০০ টাকার বিনিময়ে শ্রমিকরা কাজ করছেন। তবে একযোগে কাজ শুরু হওয়ায় শ্রমিকের চাহিদা বেশি থাকায় মজুরি একটু বেশি নেওয়া হচ্ছে। আগামী ১০-১২ দিনের মধ্যেই পেঁয়াজ রোপণ সম্পন্ন হবে।

সালথা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ জিবাংশু দাস জাগো নিউজকে বলেন, পেঁয়াজ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা যাতে সঠিকভাবে অর্জিত হয় সেজন্য সরকার কৃষি প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় এ উপজেলার ২ হাজার ৯০০ কৃষককে বিনা মূল্যে বীজ ও সার প্রদান করা হয়েছে। পেঁয়াজ উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা সার্বক্ষণিক কৃষকের পাশে থেকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছেন।

গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ আবাদের মাধ্যমে দেশের পেঁয়াজের চাহিদা পূরণ করার লক্ষ্যে সম্প্রতি জেলা সদরের অম্বিকাপুর মাঠে আদর্শ কৃষাণী সাহিদা বেগমের জমিতে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ বীজের আবাদ কাজের উদ্বোধন করেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. হাসানুজ্জামান কল্লোল।

Advertisement

এসময় জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক মনোজিত কুমার মল্লিক, উপ-পরিচালক ড. মো. হযরত আলী, জেলা মার্কেটিং অফিসার মো. শাহাদত হোসেনসহ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

তবে দেশীয় পেয়াজের পাশাপাশি হাইব্রিড জাতের লাল তীর কিং পেঁয়াজ বেশি লাগানো হচ্ছে। চাষিরা বলছেন অল্প খরচে ভালো ফলন হয় এই জাতে। তবে এ মৌসুমে দুদফা বৃষ্টিতে পেঁয়াজের বীজতলা নষ্ট হয়েছে। এতে পেঁয়াজের চারার কিছুটা সঙ্কট হলেও কোনো ঘাটতি হবে না বলে জানিয়েছেন কৃষকরা।

গত মৌসুমের শেষ দিকে এসে পেঁয়াজের ভালো দাম পেয়েছেন চাষিরা। এছাড়া এবার পেঁয়াজ বীজের দাম গত মৌসুমের তুলনায় একটু বেশি। তারপরও পেঁয়াজ চাষে ঝুঁকেছেন চাষিরা।

মধুখালী উপজেলার কোড়কদি এলাকার পেঁয়াজ চাষি মো. নান্নু খান, মো. আলম সেখ জাগো নিউজকে বলেন, এক কেজি দানার পেঁয়াজ চারা ১৬-১৮ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দাম বেশি হলেও কৃষকরা জমি খালি না রেখে পেঁয়াজের চারা রোপণের চেষ্টা করছেন। আগামী মাসের মধ্যে এ অঞ্চলে পেঁয়াজ রোপণ শেষ হবে।

এ বিষয়ে বোয়ালমারী উপজেলার টোংরাইল গ্রামের বড় পেঁয়াজ চাষি, কালিকুমার বালা, সুনিল বিশ্বাস, জয়দেব বিশ্বাস, স্বপন বিশ্বাস, সুতালিয়া গ্রামের রবিন বিশ্বাস, নগরকান্দা উপজেলার কাদের মোল্লা, সেলিম সেখ, ভাঙ্গা উপজেলার সোহাগ মাতুব্বর, রুস্তম আলী, নাদের সেখ, মধুখালীর গৌতম রায়, একাধিক কৃষক জাগো নিউজকে বলেন, এখন পেঁয়াজ রোপণের ভরা মৌসুম।

কৃষক-কৃষাণীরা সবাই ব্যস্ত সময় পার করছেন পেঁয়াজ রোপণে। কেউ চারা তুলছেন, কেউ রোপণে ব্যস্ত,আবার কেউ হাট-বাজারে চারা বিক্রি করছেন। হাট-বাজারে পেঁয়াজের চারা ভরপুর। বিকিকিনিতে ব্যস্ত কৃষকরা। চাহিদা বেড়েছে পেঁয়াজ রোপণ করা শ্রমিকদের। সবমিলিয়ে কৃষক-কৃষাণী এখন পুরোদমে ব্যস্ত পেঁয়াজ রোপণ করার কাজে।

এ প্রসঙ্গে ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. হযরত আলী জাগো নিউজকে বলেন, চলতি মৌসুমে এ জেলায় ৪১ হাজার ৮১০ হেক্টর কৃষি জমিতে পেঁয়াজ চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।

সে অনুযায়ী ইতিমধ্যে ৬৮ ভাগ জমিতে পেঁয়াজ রোপণ করা শেষ হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে এ মাসের শেষ অবধি পুরোপুরি জমিতে রোপণ করা শেষ হবে। তবে কিছু জমিতে পানি নামতে দেরি হয়েছে যার কারণে একটু সময় লাগতে পারে। আমাদের পক্ষ থেকে কৃষকদের সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবারও ফরিদপুরে পেঁয়াজ আবাদে আশানুরূপ সাফল্য অর্জন করা সম্ভব হবে।

এন কে বি নয়ন/এমএমএফ/জেআইএম