ফিচার

কলম এল যেভাবে, জানুন বিশ্বের দামি কলমের ইতিহাস

কলমের ইতিহাস অনেক পুরনো। জানলে অবাক হবেন, কলম এখন যতটা সহজলভ্য ও কম দামী; অতীতে কিন্তু কলমের কদর শুধু ধনীরাই করত। বিলাসিতার উপকরণ হিসেবে ব্যবহৃত হত কলম। ইংরেজিতে ‘পেন’ শব্দটি এসেছে ল্যাটিন শব্দ পেন্না থেকে। যার অর্থ পাখির পালক।

Advertisement

এক সময় লেখার জন্য পালক ব্যবহার করা হত। খাগের কলম, পাখির পালক ইত্যাদি দিয়েই লেখা হতো। মিশরীয়রা সম্ভবত কাঠির ডগায় তামার নিবের মতো কিছু একটা পরিয়ে লেখা আরম্ভ করেছিল। গ্রিস দেশের লেখনী তৈরি হত হাতির দাঁত দিয়ে। এর নাম ছিল ‘স্টাইলাস’। বলপেন আসার আগ পর্যন্ত স্টাইলাসের কদর ছিলো অনেক।

সে জন্যই লেখার আঙ্গিককে বলা হয় স্টাইল। মধ্যযুগে কাগজ আবিষ্কারের পর পালকের কলমের প্রচলন শুরু হয়। ১৮৮৩ সালে আমেরিকান লুইস ওয়াটারম্যান আবিষ্কার করলেন ফাউন্টেন পেন। এরপর অন্যান্য দেশেও ফাউন্টেন পেন তৈরির ধুম পড়ে যায়। এখন আমরা যে বল পয়েন্ট পেন দিয়ে লিখি, সেই বল পয়েন্ট পেন তৈরি হয়েছিল বিংশ শতাব্দীতে।

১৮৯৯ সালে এক সাংবাদিকের হাতেই আবিষ্কার হয় কলমের। হাঙ্গেরির বুদাপেস্টে বসবাসরত ল্যাজলো জোসেফ বিরো ছিলেন একজন সাংবাদিক। সাংবাদিকতার কাজ করতে গিয়েই তিনি ফাউন্টেন পেন উদ্ভাবন করেন।

Advertisement

নানা রকম কালির ব্যবহার নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে শেষ পর্যন্ত তিনি বল পয়েন্ট কলম উদ্ভাবন করতে সক্ষম হন। ১৯৩১ সালে সর্বপ্রথম তিনি আন্তর্জাতিক এক মেলায় বল পয়েন্ট কলমের প্রদর্শন করেন। ১৯৩৮ সালে তিনি তার পেটেন্ট লাভ করেন।

বলপয়েন্ট কলমগুলোর ডগায় বা নিবে ০.৭-১.২ মি.মি. আকারের পিতল, স্টিল বা টাংস্টেন কার্বাইডের তৈরি একটি ছোট্ট শক্ত বল বা গোলক থাকে। যা কলমের ভেতরে থাকা কালিকে কাগজ বা যার উপরে লেখা হচ্ছে তাতে মাখাতে সাহায্য করে।

বলপয়েন্ট কলমে যে কালি ব্যবহার করা হয়, তা একটু ঘন প্রকৃতির। এই কালি কাগজের সংস্পর্শে আসতে না আসতেই তা শুকিয়ে যায়। এই নির্ভরযোগ্য কলমগুলোর দামও খুব কম। ফলে সহজেই নিত্যদিনের লেখালেখির কাজে বর্তমানে বলপয়েন্ট কলমের চাহিদা তুঙ্গে।

বর্তমান বিশ্বে নানা রং ও বৈচিত্র্যময় সব কলম দেখা যায়। যেগুলো অনেক সুন্দর ও দামি। এর কোনোটি স্বর্ণ আবার কোনোটি হিরার তৈরি। তেমনই কয়েকটি দামি ও বৈচিত্র্যময় কলমের হদিস জেনে নিন-

Advertisement

ক্রু সিক্সটিথ হোয়াইট গোল্ড: এই কলমগুলোতে ১৮ ক্যারাট সোনার নিবে রেডিয়াম এবং রুথেনিউম-এর আস্তরণ দেওয়া আছে। পেনগুলো দিয়ে লিখতে গেলে যাতে আঙুলে ব্যথা না হয় সে দিকটিও বিবেচনা করা হয়েছে।

শুধু তাই নয়, কলমের কালি কতটা পরিমাণ অবশিষ্ট আছে, তা বাইরে থেকেই দেখা যায়। হাতে তৈরি নেকটাই-এর মতো আকারে দেখতে ক্লিপটিও কলমটিকে এক অন্য মাত্রা এনে দিয়েছে। এই কলমের দাম ৪৩ হাজার ডলার।

গাইয়া হাই লাক্সরি: বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টিকারী এই কলমটি দেখতেও যেমন সুন্দর; এর গঠনও তেমনই আকর্ষণীয়। এই কলমে ১৮ ক্যারেটের সাদা এবং হলুদ স্বর্ণ ব্যবহার করা হয়েছে। এই কলমের গায়ে ভৌগোলিক বিস্ময়ের বিভিন্ন চিত্র খোদাই করে আঁকা আছে। এর দাম ৪৩ হাজার ডলার।

মার্টে: এই কলমের ঢাকনায় দু’ক্যারেটের ছোট ছোট হিরা ব্যবহার করা আছে। এই কলমে আছে সোনার নিব। যেখানে গ্রিক দেবতা মঙ্গলের চিহ্ন খোদাই করা। এর দামও পড়বে ৪৩ হাজার ডলার।

ভিসকোন্তি (ফরবিড্ন সিটি): কালো রঙের এই কলমটিতেও ১৮ ক্যারেট সোনা এবং হিরা ব্যবহার করা হয়েছে। এই কলমের গায়ে হারিয়ে যাওয়া শহর এইচ আর এইচ এর ভিন্ন চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। এর মূল্য সাড়ে ৫০ হাজার ডলার।

ভিসকোন্তি (অ্যালকেমি): হাতের কারুকার্য করা এই কলমের বিশেষত্ব হলো এর দু’টি নিব। একটি ১৮ ক্যারাট সোনার ও অন্যটি রুপার। দু’টি কালির প্রকোষ্ঠ আছে কলমে। এর ঢাকনাসহ বডিটে সোনা ও রুপার কাজ করা। এর দাম ৫৭ হাজার ডলার।

ভিসকোন্তি (রিপল্): ভিসকোন্তি কলম তৈরি করতে ব্যবহার করা হয়েছে ১৮ ক্যারেট সোনা এবং হিরা। এর নিব তৈরিতেও ব্যবহৃত হয়েছে ১৮ ক্যারাট সোনা। দাম ৫৭ হাজার ডলার।

ওমাস ফোনিক্স প্লাটিনাম: প্লাটিনাম এবং হলুদ এনামেল ব্যবহার করা হয়েছে এই কলমে। এর নিব তৈরি করা হয়েছে ১৮ ক্যারেট সোনা দিয়ে। দাম ৬০ হাজার ডলার।

লা মোদের্নিস্তা ডায়মন্ড: এই কলমের নির্মাতা সুইট্জারল্যান্ডের ক্যারন দ্য’আচি কোম্পানি। তারা এই পেনটি ১৯৯৯ সালে বাজারে আনেন। নিবটি তৈরি করতে ব্যবহৃত হয়েছে ১৮ ক্যারাটের রোডিয়াম কোটেড গোল্ড, ২০ ক্যারাটের হিরে ও ৯৬টি রুবি।

মিস্ট্রি মাস্টারপিস: তিন রকমের পাথর ও রত্ন দিয়ে কলম তৈরি করা হয়েছে। এর উপরে কারুকার্যের জন্য ব্যবহার করা হয়েছে রুবি, স্যাফায়ারস, এমারেল্ডস। এগুলো যে বিশেষ পদ্ধতিতে লাগানো হয় তাকে বলা হয় মিস্ট্রি সেটিং। এর দাম পড়বে ৭৩ হাজার ডলার।

অরোরা ডায়ামান্টে: এই কলমের নিবে ১৮ ক্যারেটের সোনা ব্যবহার করা হয়। এটি বিশ্বে একমাত্র কলম, যাতে ৩০ ক্যারাটের হিরা ব্যবহার করা হয়েছে। এর দাম শুনলে চমকে উঠবেন! ১,৪৭০,৬০০ ডলার।

আজ বল পয়েন্ট কলম দিবস। প্রতি বছর ১০ জুন এই দিবসটি পালিত হয়। কলম দিয়ে চিঠি বা কার্ড লিখে প্রিয়জনদেরকে পাঠানোর মাধ্যমে এই দিবসটি উদযাপন করা হয়। অনেকে দামী ও সুন্দর কলম উপহার দেওয়ার মাধ্যমেও দিবসটি উদযাপন করেন।

জেএমএস/এমকেএইচ