ভারত থেকে বিভিন্ন স্থলবন্দর/কাস্টমস হাউজ ব্যবহার করে ডাম্পিং মূল্যে সুতা ও কাপড় স্থানীয় বাজারে প্রবেশের ফলে দেশীয় টেক্সটাইল শিল্পের চ্যালেঞ্জে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। এ বিষয়ে বিটিএমএর পক্ষ থেকে প্রধান উপদেষ্টা ও সরকারের সংশ্লিষ্ট নীতি নির্ধারকদের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ)।
Advertisement
সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর গুলশান ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে দেশীয় টেক্সটাইল শিল্পের সংকটাবস্থা এবং নানাবিধ সমস্যা তুলে ধরেন বক্তারা।
এসময় বক্তারা বলেন, দেশের টেক্সটাইল সেক্টর দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। এর মধ্যে গ্যাস ও বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি, ডলার সংকট, ব্যাংক সুদের হার ১৮ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি, এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের শর্তাবলি পূরণের অজুহাতে রপ্তানির বিপরীতে নগদ প্রণোদনার অস্বাভাবিক হ্রাস এবং টাকার অবমূল্যায়নের কারণে ওয়ার্কিং ক্যাপিটালের সংকট ইত্যাদি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
বিগত কয়েক মাস ধরে তীর গ্যাস সংকটের কারণে মিলগুলো তাদের উৎপাদন ক্ষমতার মাত্র ৪০ শতাংশ থেকে ৫০ শতাংশের বেশি ব্যবহার করতে পারছে না। ফলশ্রুতিতে সুতা ও কাপড়ের উৎপাদন ব্যাপকভাবে হ্রাস পাওয়ায় উৎপাদন খরচ প্রায় দ্বিগুণ হওয়ায় প্রতিযোগী দেশগুলোর সঙ্গে এ সেক্টরের প্রতিযোগিতার সক্ষমতাকে মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ন করছে।
Advertisement
টেক্সটাইল শিল্পে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পাওয়ায় আমাদের স্থানীয় বাজারও বিদেশিদের হাতে চলে যাচ্ছে। টেক্সটাইল সেক্টরের মিলগুলো দেশের ১৭ কোটি জনগোষ্ঠীর মৌলিক চাহিদার প্রায় সম্পূর্ণ জোগান দিচ্ছে। এতে দেশের ১২ বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় হচ্ছে যা আমদানি পরিপূরক তথা ইমপোর্ট সাবস্টিটিউট হিসেবে মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় করছে।
সংবাদ সম্মেলনে বিটিএমএ সভাপতি বলেন, আমরা এরই মধ্যেই স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানি বন্ধ এবং ভারতীয় সুতার ওপর অ্যান্টি-ডাম্পিং শুল্ক আরোপের জন্য সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছি। আমরা সরকারকে অনুরোধ করছি যে সুতার মিথ্যা ঘোষণা রোধে আমাদের স্থলবন্দরের সক্ষমতা উন্নত না হওয়া পর্যন্ত স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি বন্ধ করা হোক।
বিটিএমএ সহ-সভাপতি সালেউদ জামান খান অভিযোগ করেছেন যে ভারত প্রতি কিলোগ্রাম সুতাতে ১১ রুপি ভর্তুকি দিচ্ছে, কার্যত রাষ্ট্রীয়ভাবে ডাম্পিংকে সহায়তা করছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের পোশাক কারখানাগুলো সুতার দাম কম হওয়ায় লাভবান হচ্ছে না, শেষ পর্যন্ত এর সুবিধা যাচ্ছে বিদেশি ক্রেতাদের কাছে।
Advertisement
প্রতি ইউনিট গ্যাসের দাম ২০ টাকা নির্ধারণের দাবিবিটিএমএ সহ-সভাপতি সালেউদ জামান খান গ্যাসের দাম ইউনিট প্রতি ২০ টাকার নিচে নামানোর দাবি জানিয়ে বলেন, চলমান গ্যাস সংকটের কারণে মিলগুলো মাত্র ৫০ শতাংশ থেকে ৬০ শতাংশ ক্ষমতায় চলছে।
প্রকৌশলী রাজীব হায়দার প্রশ্ন করেন, মাটির নিচে গ্যাসের মজুত থাকা অবস্থায় এলএনজি আমদানি কার স্বার্থে উৎসাহিত করা হচ্ছে? এলএনজি আমদানির ওপর নির্ভর করে টেক্সটাইল ও গার্মেন্টস শিল্প টিকে থাকতে পারে না বলেও তিনি উল্লেখ করেন। কারখানা বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে সতর্ক করে তিনি বলেন, ৭৫ টাকায় গ্যাস দিয়ে কারখানা চালানো অসম্ভব হয়ে পড়বে।
বিটিএমএ সহ-সভাপতি আবুল কালাম বিনিয়োগকে উৎসাহিত করার জন্য সুদের হার একক অঙ্কে নামিয়ে আনার দাবি জানান এবং আগামী তিন বছরের জন্য সুদের হার এক অঙ্কে স্থির করার আহ্বান জানান।
বিটিএমএর নেতারা জানান ভারত বর্তমানে বিশ্বের ৫ম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ হওয়া সত্ত্বেও টেক্সটাইল শিল্পকে RodTep সহ নানাভাবে নগদ প্রণোদনার বিকল্প সুবিধা প্রদান করে আসছে। সুতরাং এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের নামে বাংলাদেশের টেক্সটাইল শিল্পের প্রণোদনা ও নীতি সহায়তা ব্যাপকভাবে কমিয়ে এ শিল্পে যেভাবে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হচ্ছে তাতে এ শিল্প অচিরেই ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যাবে।
সংবাদ সম্মেলনে জুলাই আগস্টের আন্দোলনের ফলশ্রুতিতে গঠিত সরকারের কাছে আমরা সব বৈষম্যমূলক সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে দেশের স্বার্থে অনতিবিলম্বে দেশীয় টেক্সটাইল খাতের মতো স্বার্থ সংরক্ষণের লক্ষ্যে নিম্নোক্ত দাবি জানানো হয়-
১. সকল স্থলবন্দর/কাস্টমস হাউজ ব্যবহার করে সুতা আমদানি বন্ধ করে শুধু মাত্র সমুদ্র বন্দর দিয়ে সব ধরনের সুতা আমদানির প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
২. বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন কর্তৃক গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির সাম্প্রতিক উদ্যোগ অবিলম্বে বন্ধ করে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা।
এসআরএস/এমআইএইচএস