রাজশাহীর দূর্গাপুরে মাঠজুড়ে সবুজ ডগায় গোছায় গোছায় সাদা ফুল। ওই সাদা ফুলের মধ্যেই লুকিয়ে আছে ‘কালো সোনা’ খ্যাত পেঁয়াজ বীজ। কৃষিবিদদের মতে, এ উপজেলার মাটি ও আবহাওয়া পেঁয়াজের বীজ উৎপাদনের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। উৎপাদিত পেঁয়াজ বীজ গুণে ও মানে উৎকৃষ্ট। ফলনও হয় বেশ ভালো। আর তাই দূর্গাপুরে পেঁয়াজের বীজ চাষে লাভের স্বপ্ন দেখছেন চাষিরা।
Advertisement
দূর্গাপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, এ বছর উপজেলায় ৮০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ বীজের চাষ হয়েছে। যা গত বছর ছিল ৫০ হেক্টর। বছরজুড়েই পেঁয়াজের দাম বেশি। তাই অল্প সময়ে বেশি লাভ হওয়ায় এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি পেঁয়াজের বীজ আবাদ হয়েছে।
আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে উপজেলায় বেশি পেঁয়াজ বীজ উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। ১ মণ বা ৪০ কেজি বীজের দাম ৮০ থেকে ৮৫ হাজার টাকা। সময় ভেদে চাহিদার তুলনায় দাম আরও বেশি হয়ে থাকে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এখানকার পেঁয়াজ বীজের বেশ চাহিদা রয়েছে। আর তাই এখানকার বীজ বিক্রি করে লাভবান হচ্ছেন দূর্গাপুরের কৃষকরা।
ভালো লাভের সম্ভাবনার বিষয়ে উপজেলার পেঁয়াজ বীজ চাষিরা জানায়, দূর্গাপুরের খুব উর্বব হওয়ায় পেঁয়াজ বীজ চাষে রয়েছে অফুরন্ত সম্ভাবনা। উপজেলার মধ্যে দেবীপুর, কানপাড়া, দাওকান্দি, আলীপুর, মাড়িয়া, পানানগর, জয়নগর, কুশাডাঙা, নওপাড়া, চৌপুকুরিয়া প্রভৃতি এলাকায় প্রচুর পেঁয়াজ বীজের চাষ হয়েছে।
Advertisement
পেঁয়াজ বীজের সাদা ফুলে ফুলে ভরে উঠেছে উপজেলার খেতগুলো। শেষ সময়ে এসে চাষিরাও পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। ঝড়, শীলা বৃষ্টি না হলে এবার পেঁয়াজ বীজের আশাতীত ফলন হবে।
জানা গেছে, এ বছর চাষাবাদযোগ্য জমির বেশির ভাগ জমিতে পেঁয়াজের বীজ চাষ করা হয়েছে। উপজেলার দেবীপুর, নওপাড়া, জয়নগর, কুশাডাঙা, মাড়িয়া, চৌপুকুরিয়ায় সবচেয়ে বেশি জমিতে পেঁয়াজ ও পেঁয়াজ বীজের আবাদ হয়ে থাকে। প্রায় এক হাজার চাষি পেঁয়াজ বীজ চাষ করছেন।
দূর্গাপুর উপজেলায় মূলত দুই জাতের বীজ চাষ হয়- তাহেরপুরী ও ফরিদপুরী। তবে তাহেরপুরী জাতের চাষ বেশি হচ্ছে। এখন পর্যন্ত বিরূপ আবহাওয়া বা প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হওয়ায় মাঠে মাঠে পেঁয়াজ গাছে ফুলের অবস্থা খুবই ভালো। চাষিরা কয়েক সপ্তাহ পরেই মাঠ থেকে পুরোপুরি পেঁয়াজ বীজ সংগ্রহ শুরু করবেন।
প্রতি একরে গড়ে ৫ থেকে ৬ মণ করে বীজ উৎপাদন হবে বলে কৃষকরা আশা করছেন। বাজার দর স্বাভাবিক থাকলে প্রতি মণ বীজ বিক্রি হবে ৮০ থেকে ৮৫ হাজার টাকা। এসব পেঁয়াজ বীজ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে মহাজন ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা এসে মণ বা কেজি দরে কিনে নিয়ে যান।
Advertisement
জানতে চাইলে চৌপুকুরিয়া গ্রামের কৃষক মহির উদ্দিন জানান, ‘পেঁয়াজের দানা উৎপাদন অতি লাভজনক হলেও ঝুঁকিও রয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে উৎপাদন ভালো, আর বিরূপ হলেই মাথায় হাত পড়ে।’
তিনি বলেন, ‘এবার ১০ শতাংশ জমিতে পেঁয়াজ বীজ আবাদ করেছি। উৎপাদিত এ বীজে নিজেই পেঁয়াজ রোপণ করবো বাকিটা বাইরে বিক্রি করে দিবো।’
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মসিউর রহমান বলেন, ‘উপজেলায় পেঁয়াজের বীজ উৎপাদনে কৃষকদের নানাভাবে উদ্বুদ্ধ করছে কৃষি বিভাগ। লাভজনক হওয়ায় দিনদিন পেঁয়াজ বীজের চাষ ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়ছে দূর্গাপুর উপজেলায়। এতে এলাকার লোক বেশ লাভবানও হচ্ছেন।’
পেঁয়াজ বীজ চাষের কৃষকদের পরামর্শস্বরূপ এই কর্মকর্তা বলেন, ‘পেঁয়াজ বীজে কৃষকরা যেন কীটনাশক প্রয়োগ না করে। কীটনাশক প্রয়োগ করলে মৌমাছি বসে না। আর মৌমাছি না বসলে পরাগায়ন হবে না। তাই পেঁয়াজ বীজ চাষে খুব সর্তকভাবে কীটনাশকের প্রয়োগ করতে হবে।’
হস্তপরাগায়নের পরামর্শে কৃষকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘পেঁয়াজ ফুলে হাতের তালু দিয়ে আলতোভাবে চাপ দিলে পরাগায়নের সৃষ্টি হয়। ফলে উৎপাদন বেশি হবে।’
এমএমএফ/এমএস