গণতন্ত্রের অপরিহার্য শর্ত হচ্ছে অবাধ, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন। যেখানে ভোটাররা তাদের পছন্দমত ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবে। মিয়ানমারের নাগরিকরা দীর্ঘ সেনাশাসনের পর অবশেষে সেই সুযোগটি পেল। নির্বাচনে গণতন্ত্রী পন্থী অং সান সু চির দল এনএলডি পার্লামেন্টে দুই-তৃতীয়াংশের বেশি আসনে জয়লাভ করেছে। এর মধ্য দিয়ে মিয়ানমার গণতন্ত্রের পথে অভিযাত্রা শুরু করলো বলে আশা করা যাচ্ছে। প্রেসিডেন্ট থেইন সেইনের দল ইউএসডিপি নির্বাচনে ইতিমধ্যেই তাদের হার মেনে নিয়েছে। এখন সকল অনিশ্চয়তা দূর করে শান্তিপূর্ণভাবে বিজয়ী দলের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করাই হবে তাদের এক নম্বর দায়িত্ব। জনরায়ের প্রতি শ্রদ্ধা দেখাতে হলে এর কোনো বিকল্প নেই। শান্তিতে নোবেল জয়ী অং সান সু চির এই জয় গোটা বিশ্বব্যাপীই গণতন্ত্রের জয় বলে অভিহিত হচ্ছে। এর আগেও ৯০ এর নির্বাচনে জিতলে সামরিক শাসকরা তাকে ক্ষমতায় যেতে দেয়নি। শুধু তাই নয় তাকে কারান্তরীণ করে রাখা হয়েছে। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লড়াই করতে গিয়ে ২৭ বছরের বেশি সময় ধরে জেল-জুলুম সহ্য করতে হয়েছে তাকে। কিন্তু এরপরও তিনি হাল ছাড়েননি। অটল থেকেছেন গণতন্ত্র উদ্ধারের সংগ্রামে। গণতন্ত্রের জন্য এই লড়াই শুধু নোবেল পদকই এনে দেয়নি তাকে, মিয়ানমারের সাধারণ মানুষ ভোট দিয়ে এই নেত্রীর প্রতি তাদের আস্থার প্রতিফলন দেখিয়েছেন। এখন জনরায়ের প্রতি সম্মান দেখিয়ে গণতন্ত্র উদ্ধারে আত্মনিয়োগ করাই হবে তার অন্যতম কর্তব্য।দুঃখজনক হচ্ছে, এই বিপুল জয়ের কারণেও সাংবিধানিক বিধিনিষেধের কারণে সরকারের উচ্চ পদে বসতে পারছেন না সু চি। তবে নিশ্চিতভাবেই সরকারের কলকাঠি থাকবে তার হাতে। যে আভাস তিনি ইতিমধ্যেই গণমাধ্যমে দিয়েছেন।সংবিধানে পার্লামেন্টের এক-চতুর্থাংশ আসন সেনাবাহিনীর জন্য সংরক্ষিত রাখা হয়েছে, এটিও গণতান্ত্রিক রীতির পরিপন্থী। এসব বাধা উজিয়েই সু চিকে গণতন্ত্রের উদার নৈতিক পথে হাঁটতে হবে। সব ধর্মের ও সব জাতিসত্তার মানুষ তাদের মৌলিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার যাতে ফিরে পায় সে লক্ষ্যে কাজ করতে হবে। এবারের নির্বাচনে কোনো দলই মুসলিম সম্প্রদায়ের কাউকে মনোনয়ন দেয়নি। তাদের ভোটাধিকারও কেড়ে নেওয়া হয়েছে। সামরিক জান্তার নির্যাতনে রোহিঙ্গারা দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছে। লাখ লাখ রোহিঙ্গা দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নিয়েছে। এসব সমস্যা সমাধানে সু চিকে আন্তরিকভাবে এগিয়ে আসতে হবে।বর্তমান বিশ্ব বাস্তবতায় আঞ্চলিক সহযোগিতা ব্যতিরেকে কোনো দেশই এগিয়ে যেতে পারে না। কোনো দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হলে অন্য দেশেও এর ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। সেদিক থেকে প্রতিবেশি দেশ হিসেবে বাংলাদেশের মানুষও এই পরিবর্তনে খুশি। মিয়ানমারে এখন গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ফিরে আসায় নতুন করে আশার সঞ্চার হয়েছে। মিয়ানমারের সঙ্গে আমাদের সমুদ্রসীমা সংক্রান্ত বিরোধ নিষ্পত্তি হয়েছে শান্তিপূর্ণ উপায়ে। এখন এ অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে দু`টি দেশই যাতে একসঙ্গে কাজ করতে পারে এ লক্ষ্যে পরিবেশ সৃষ্টির জন্য কূটনৈতিক তৎপরতা চালাতে হবে। সু চির বিজয়ের মধ্য দিয়ে সত্যিকার অর্থেই যেন দেশটিতে গণতন্ত্র ফিরে আসে এবং সকল জাতি গোষ্ঠির মানুষ তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার ভোগ করতে পারে সেটি নিশ্চিত করা হবে বলে আমাদের প্রত্যাশা।এইচআর/আরআইপি
Advertisement