রাজধানীর চাঁনখারপুলে ৫শ’ কোটি টাকা ব্যয়ে ৫শ’ শয্যার বার্ন ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল নির্মিত হচ্ছে। ১ দশমিক ৭৬ একর জমির ওপর উপমহাদেশের অন্যতম এই অত্যাধুনিক ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল নির্মাণের কাজ শুরু করার লক্ষ্যে প্রাক প্রস্তুতি দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। ইতোমধ্যেই বেদখলকৃত জমি উদ্ধার করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুসারে রাজধানীসহ সারাদেশের দগ্ধ রোগীদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করার পাশাপাশি উচ্চতর ডিগ্রিপ্রাপ্ত ও গুণগত মানসম্পন্ন বার্ন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক গড়ে তোলার লক্ষ্যে এটি নির্মিত হচ্ছে। সম্প্রতি পরিকল্পনা কমিশনের একজন সদস্যের (সচিব পদমর্যাদার) সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত প্রাক-একনেক বৈঠকে ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রোপোজাল (ডিপিপি) উত্থাপন করা হলে কিছু সংশোধন সাপেক্ষে তা প্রাথমিকভাবে অনুমোদন করা হয়। আগামী মঙ্গলবার অনুষ্ঠিতব্য একনেকের বৈঠকে প্রকল্প প্রস্তাবটি চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য উত্থাপন করা হতে পারে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদফতর ও বার্ন বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলাপকালে এসব তথ্য জানা গেছে।দেশে বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট স্থাপন প্রকল্পের জাতীয় সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেনের কাছে এ খবরের সত্যতা জানতে চাইলে তিনি বলেন, খুব শিগগিরই একনেকের বৈঠকে প্রকল্প প্রস্তাবটি উত্থাপন করা হবে। তিনি আরও বলেন, বার্ন ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল নির্মাণের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী খুবই আন্তরিক। তিনি দ্রুত কাজ শুরু করার তাগিদ দিয়ে আসছেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমও প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছানুযায়ী বার্ন ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল নির্মাণ কাজ দ্রুত শুরু করতে সর্বাত্মক সহায়তা করছেন। জানা গেছে, প্রকল্পটির মোট ব্যয় ৫৩০ কোটি টাকা। আন্ডারগ্রাউন্ডে দুই তলা বেইজমেন্টসহ মোট ১২তলা বিশিষ্ট ভবনে ৫০০ শয্যার হাসপাতালসহ বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট স্থাপনের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় আর্কিস্ট্রাকচারাল ডিজাইনের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশে প্রতি বছর গড়ে ৬ লাখ নারী, পুরুষ ও শিশু বিভিন্নভাবে (বিদ্যুৎস্পৃষ্ট, অগ্নিশিখা, রাসায়নিক ও গরম তরল পদার্থে) দগ্ধ হচ্ছেন। তাদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে উচ্চ ডিগ্রিধারী বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক প্রয়োজন। সারাদেশের হাজার হাজার পোড়া রোগীর চিকিৎসার জন্য (এমডি ও এম.এস উচ্চ ডিগ্রিধারী) কমপক্ষে ১ হাজার ৫শ’ জন বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি বিশেষজ্ঞ প্রয়োজন হলেও বর্তমানে রয়েছে মাত্র ৫২ জন।একাধিক বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জন জানান, বর্তমানে সীমিত পর্যায়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্থ মেডিকেল কলেজে বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি বিষয়ে স্নাতকোত্তর এমএস ও মহাখালীর বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ানস অ্যান্ড সার্জনস (বিসিপিএস)-এ এফসিপিএস কোর্সে প্রতি বছর হাতেগোনা ২ থেকে ৩ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হচ্ছে। পৃথক ইনস্টিটিউট স্থাপিত হলে প্রতি বছর গড়ে ১০ থেকে ১২ জন উচ্চ শিক্ষার কোর্সে ভর্তি হতে পারবেন বলে তিনি দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেন।জানা গেছে, প্রধামন্ত্রী শেখ হাসিনা নিমতলীতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ট্রাজেডিতে আহতদের দেখতে এবং বিরোধী জোটের জ্বালাও পোড়াও কর্মসূচি চলাকালে অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারাত্মকভাবে আহতদের দেখতে বিগত কয়েকবছরে বেশ কয়েকবার ঢামেক বার্ন ইউনিট পরিদর্শনে যান। পোড়ারোগীদের কষ্ট ও যন্ত্রণা প্রধানমন্ত্রীর মনকে ভীষণভাবে নাড়া দেয়। উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ২৬ ফেব্রুয়ারি হোটেল সোনারগাঁওয়ে প্লাস্টিক সার্জনদের বার্ষিক সম্মেলনে গিয়ে দেশে একটি আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন সর্বাধুনিক বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট স্থাপনের ঘোষণা দেন। এরপর গত ১৭ মে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের পরিচালক ডা. মো. জুলফিকার আলী বার্ন ইনস্টিটিউট স্থাপনের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেন।স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একাধিক দায়িত্বশীল ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জাগো নিউজকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কয়েকমাস আগে ডা. সামন্তলাল সেনের নেতৃত্বে আট সদস্যের একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ার কয়েকটি হাসপাতাল পরিদর্শন করে এসেছেন।সম্প্রতি চানখারপুলে বেদখলকৃত জমি উদ্ধারের মধ্যে দিয়ে প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়। আর একনেকে পাস হলে দ্রুত কাজ শুরু হবে বলে জানা যায়। এমইউ/এসএইচএস/আরআইপি
Advertisement