মতামত

পৈশাচিক!

কোলের শিশুকে জড়িয়ে ধরে নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে ছিলেন মা। কিন্তু সেই ঘুমই যে শেষ ঘুম হবে  কে তা জানতো। কিন্তু হয়েছে তাই। পৈশাচিক জিঘাংসার শিকার হয়ে পেট্রলের আগুনে দগ্ধ হয়ে করুণ মৃত্যু হয়েছে মা ও মেয়ের। ঝিনাইদহের কালীগঞ্জের ফারাসপুর গ্রামে সোমবার গভীর রাতে এ ঘটনা ঘটে। জাগো নিউজের এ সংক্রান্ত খবর থেকে জানা যায়,  জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার ফারাসপুর গ্রামের চাঁন মিয়া তার পরিবার পরিজন নিয়ে  রাতে নিজ বাড়িতে ঘুমিয়ে ছিলেন। রাত আনুমানিক তিনটার দিকে কে বা কারা জানালা দিয়ে পেট্রল জাতীয় দাহ্য পদার্থ ছুঁড়ে মেরে আগুন লাগিয়ে দেন। এতে ওই ঘরে থাকা গৃহকর্তা চাঁন মিয়া তার স্ত্রী তাসলিমা, বড় মেয়ে উর্মি ও শিশু কন্যা তাসলি অগ্নিদগ্ধ হয়। তাদের চিৎকারে আশপাশের লোকজন ছুটে এসে তাদেরকে উদ্ধার করে প্রথমে যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। তাদের মধ্যে চাঁন মিয়া, তাসলিমা ও শিশু কন্যা তাসলির অবস্থা আশঙ্কাজনক হলে তাদেরকে ভোরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে রেফার্ড করা হয়। তাদের বহনকারী অ্যাম্বুলেন্সটি ফেরি পার হওয়ার সময় সকাল আটটার দিকে তাসলিমা ও শিশু কন্যা তাসলি মৃত্যুবরণ করেন।এই ঘটনার জন্য পরিবারের বড় মেয়ে উর্মি খাতুনের স্বামী কামাল হোসেন  দায়ী বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। চার বছর আগে  কামাল হোসেনের সাথে  উর্মির বিয়ে হয়। কিন্তু বিয়ের পর থেকেই তাদের বনিবনা হচ্ছিল না। এ নিয়ে ঝগড়া বিবাদ লেগেই থাকতো। ঘটনার দুদিন আগেও কামাল ওই গ্রামে নিয়ে শুশ্বরবাড়ি না গিয়ে তাদেরকে ‘‘দেখে নেওয়ার” হুমকি দেয়। এরপরই ঘটলো এই পৈশাচিক ঘটনা। আমাদের দেশে যৌতুক, পারিবারিক বিরোধসহ নানা কারণে নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে অহরহ। কিন্তু এখনো এই আঁধার থেকে বেরোনো গেল না সেটা খুবই দুঃখজনক বিষয়।একবিংশ শতাব্দীর জ্ঞান-বিজ্ঞানের চরম উৎকর্ষের এই যুগে মধ্যযুগীয় কায়দায় মানুষজনকে পুড়িয়ে মারা হবে এটা মেনে নেওয়া যায় না। যারা এ ধরনের বর্বরোচিত অপরাধ কর্ম  যারা করে মনুষ্য সমাজে তাদের স্থান হওয়া উচিত কিনা সেটা ভেবে দেখতে হবে। কী অপরাধ ছিল ১৮ মাস বয়সী শিশু তাসলির।আর তার মা তাসলিমা খাতুনকেই বা কী কারণে পুড়িয়ে মারা হল। তদন্তে হয়তো সবকিছু বেরিয়ে আসবে তবে ঘটনার পরম্পরা বলছে, এ হত্যাযজ্ঞের মূল টার্গেট ছিল উর্মি খাতুন। আগুনে পুড়ে সে সামান্য আহত হলেও ভাগ্যগুণে বেঁচে গেছে। কিন্তু পরিবারের দুই সদস্য মা ও বোনকে হারিয়েছে চিরতরে। কে নেবে এর দায়-দায়িত্ব। এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। গতানুগতিক একটি তদন্ত হয়তো হবে। আসামি ধরা পড়বে কিনা কিংবা ধরা পড়লেও শেষ পর্যন্ত বিচার হবে কিনা এর নিশ্চয়তা দেবে কে? কিন্তু  এ ধরনের পৈশাচিকতার চির অবসান হওয়া অত্যন্ত জরুরি। এ জন্য অপরাধীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির কোনো বিকল্প নেই। ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে তা করতেই হবে।এইচআর/পিআর

Advertisement