আজম খান একজন জনপ্রিয় অভিনেতা। এছাড়াও তার রয়েছে বড় একটি পরিচয়। তিনি মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের গ্রুপ চিফ কমিউনিকেশন্স অফিসার। কমিউনিকেশন নিয়ে রীতিমত ব্যাংকিং সেক্টরে তার রয়েছে দীর্ঘদিনের কাজ। পাশাপাশি তিনি ভালোবাসেন অভিনয়। পেশা আর নেশাকে এক করে স্বপ্ন বুনছেন সুন্দর একটি বাংলাদেশের। সম্প্রতি তার ক্যারিয়ার নিয়ে কথা বলেছেন জাগো নিউজের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বেনজির আবরার—
Advertisement
প্রথমেই আপনার সম্পর্কে কিছু বলুন—আজম খান: ১৯৬৩ সালের ২৫ অগাস্ট বগুড়ায় আমার জন্ম। বাবা ছিলেন আইন এবং বিচার বিভাগের সরকারী কর্মকর্তা। মা ছিলেন গৃহিণী। তিন ভাই-এক বোনের মধ্যে সবার ছোট আমি। বর্তমানে আমি এক কন্যার বাবা। ওয়েস্ট অ্যান্ড হাই স্কুল থেকে এসএসসি, ঢাকা কলেজ থেকে এইচএসসি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে ব্যাচেলর অব সোশ্যাল সায়েন্স এবং মাস্টার্স অব সোশ্যাল সায়েন্স ডিগ্রি অর্জন করি। পেশাগত জীবনে প্রবেশ করেছিলাম ১৯৮৮ সালে।
এবার তবে ক্যারিয়ার সম্পর্কে কিছু শুনতে চাই— আজম খান: ১৯৮৮ সালে ভলান্টারি হেলথ সার্ভিসেস সোসাইটির (ভিএইচএসএস) সহকারী প্রকাশনা কর্মকর্তা হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করি। পরে ১৯৯৩ সালে কারিতাস বাংলাদেশে জনসংযোগ কর্মকর্তা, ১৯৯৯ সালে স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক লিমিটেডে জনসংযোগ কর্মকর্তা, ২০০১ সালে ডাচ-বাংলা ব্যাংক লিমিটেডে জনসংযোগ কর্মকর্তা, ২০০৪ সালে ঢাকা ব্যাংক লিমিটেডে হেড অব পিআর অফিস, ২০০৯ সালে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডে হেড অব মার্কেটিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট এবং হেড অব পাবলিক রিলেশন্স, ২০১৬ সালে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেডে গ্রুপ চিফ কমিউনিকেশন্স অফিসার হিসেবে যোগদান করি। বর্তমানে এখানেই কর্মরত আছি।
বর্তমানে যোগাযোগ দক্ষতা বাড়াতে ব্যাংকিং পেশায় কোন গুণগুলো থাকা জরুরি? আজম খান: আমাদের দেশে এখন সরকারি, বেসরকারি এবং বিশেষায়িত মিলে ৫৯টি ব্যাংক কাজ করছে। সারাদেশে ছড়িয়ে আছে প্রতিটি ব্যাংকের অসংখ্য শাখা, উপ-শাখা, এটিএম, এজেন্ট ব্যাংকিংসহ নানা ধরনের আউটলেট। অর্থাৎ ব্যাংক এখন জনগণের কাছে। গ্রাহকের দোরগোড়ায়। পাশাপাশি ব্যাংকিং এখন অনেক প্রতিযোগিতামূলক। সবাই চেষ্টা করছি সবার আগে গ্রাহকের কাছে পৌঁছাতে, ভালো ভালো ব্যাংকিং পণ্য তাদের কাছে তুলে ধরতে। এক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোর যোগাযোগ দক্ষতা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ সব ব্যাংকের পণ্য কিন্তু প্রায় এক ধরনেরই। কিন্তু এর উপস্থাপনা প্রত্যেকের ভিন্ন ভিন্ন। আর এ প্রেজেন্টেশন বা কমিউনিকেশন স্কিল হচ্ছে প্রতিযোগিতামূলক এ সময়ে প্রত্যেক ব্যাংকের সাফল্যের মূল চাবিকাঠি।
Advertisement
সব প্রতিষ্ঠানে জনসংযোগ বিভাগে কাজের চাপ অনেক বেড়েছে। এটাকে কিভাবে মূল্যায়ন করছেন?আজম খান: সব খাতেই জনসংযোগ পেশার গুরুত্ব আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। আগে জনসংযোগ বিভাগ শুধু জনগণের সাথে সংযোগের কাজ করতো। এখন জনসংযোগ বিভাগের নাম পরিবর্তিত হয়ে কমিউনিকেশন বিভাগ করা হয়েছে। কারণ পরিবর্তিত বাস্তবতায় শুধু জনসংযোগ নয়; দরকার প্রিন্ট, ইলেক্ট্রনিক, অনলাইন, সোশ্যাল মিডিয়ার জন্য কাঙ্ক্ষিত কমিউনিকেশন। যেন ব্যাংকগুলো তার গ্রাহকের কাছে আরও সহজে পৌঁছাতে পারে।
অভিনয়েও আপনি সফল। অভিনয় এবং কর্পোরেট জগতকে একসঙ্গে কিভাবে সামলান? আজম খান: অভিনয়ে এসেছি ২০১৫ সালে। এ অল্প সময়ে সফল অভিনেতা হতে পেরেছি কি-না জানি না। তবে শখ থেকে এসে দাঁড়িয়েছিলাম ক্যামেরার সামনে। তার পর থেকে নাটক, টেলিছবি, ধারাবাহিক, মিউজিক ভিডিও, ওয়েব কন্টেন্ট, ওয়েব সিরিজ, বিজ্ঞাপন আর সবশেষে সিনেমায়ও কাজ শুরু করেছি। কখনো ভাবিনি, আমি একজন সফল অভিনেতা। বরং পরিচালক আর সহশিল্পীদের সহযোগিতায় পরিচিত অভিনেতা হয়তো হতে পেরেছি এই সাড়ে চার বছরে। এ সময়ে শোবিজে প্রায় দুইশ কাজ করেছি। যার চার ভাগের একভাগ কাজ করেছি গুণী নির্মাতা চয়নিকা চৌধুরীর পরিচালনায়। তাই আমি তার কাছে অনেক কৃতজ্ঞ। শোবিজে আজ আমি যেখানে পৌঁছেছি, তার পেছনে তার অনেক অবদান রয়েছে। পাশাপাশি অন্যান্য নির্মাতা এবং সহশিল্পীদের কাছেও আমি ঋণী। কারণ তাদের সহযোগিতা না পেলে হয়তো ব্যস্ত কর্পোরেট জীবনের পাশাপাশি এ মায়ার জগতে এত সহজে এত কাজ করতে পারতাম না।
তরুণদের জন্য আপনার পরামর্শ কী?আজম খান: পড়াশোনার কোনো বিকল্প নেই। শিক্ষিত হতে হবে। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি মূল্যবোধ আর সামাজিক অনুশাসনে শিক্ষিত হতে হবে। পারিবারিক মূল্যবোধ ধরে রাখতে হবে। তারপর দরকার পরিশ্রম আর অধ্যবসায়। তুমি চাকরি, ব্যবসা, শিক্ষকতা, আইন, চিকিৎসা, প্রকৌশল যে পেশায়ই থাকো না কেন, কাজকে ভালোবাসতে হবে, কাজকে শ্রদ্ধা করতে হবে, কাজকে উপভোগ করতে হবে। আর থাকতে হবে স্বপ্ন। বড় হওয়ার স্বপ্ন। সবাইকে ছাড়িয়ে যাওয়ার স্বপ্ন। কারণ মানুষ আসলে তার স্বপ্নের চেয়েও বড়। আর এ স্বপ্ন কিন্তু দেখতে হয় তরুণ বয়সেই। তাহলে সেই স্বপ্ন পূরণের জন্য তুমি হয়তো হাতে সময় পাবে।
এসইউ/পিআর
Advertisement