দেশজুড়ে

সন্তানকে আদর করার শক্তিটুকুও নেই মায়ের

ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালের বিছানায় যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন মা পারুল বেগম। পাশে নানীর কোলে কাঁদছে আট মাসের শিশু জাকারিয়া। মায়ের কাছে যেতে চায় সে। কিন্তু সন্তানকে আদর স্নেহ দেয়ার শক্তিটুকুও নেই পারুলের। এক সপ্তাহ ধরে স্বজনদের সঙ্গে হাসপাতালেই কাটছে শিশুটির দিন।

Advertisement

পারুল মানিকগঞ্জ মুন্নু মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। স্বামী কামরুল ইসলামের সঙ্গে ঢাকায় বসবাস করেন তিনি। মা-বাবার সঙ্গে ঈদ করতে গ্রামের বাড়ি মানিকগঞ্জের ঘিওরে এসেছিলেন। ঈদের দিন রাতেই প্রচণ্ড জ্বর আসে তার। দু’দিন স্থানীয়ভাবে ওষুধ খেলেও জ্বর না কমায় মুন্নু মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে রক্ত পরীক্ষায় ডেঙ্গু ধরা পড়ে। এরপর থেকেই হাসপাতালে ভর্তি আছেন তিনি।

পারুল বেগম জানান, ঢাকায় অনেক সতর্ক ছিলেন। গ্রামে এসে ভেবেছিলেন এখানে ডেঙ্গু নেই। কিন্তু গ্রামেও যে ডেঙ্গুর বিস্তার ঘটেছে জানা ছিলো না।

তিনি বলেন, জ্বরে শরীর দুর্বল হয়ে পড়েছি। ছেলেটা তার কাছে আসার জন্য সবসময় কান্নাকাটি করে। কিন্তু তাকে কোলে নিয়ে আদর করার মতো শক্তিটুকুও নেই। এ ক’দিনে ছেলেটার স্বাস্থ্যহানী হয়েছে বলেও জানান তিনি।

Advertisement

ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে পারুলের মতো অনেকেই হাসপাতালের বিছানায় কাতরাচ্ছেন। মানিকগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতাল, মুন্নু মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল এবং ইসলামী হাসপাতাল ছাড়াও ডেঙ্গু রোগী রয়েছে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতেও। প্রতিদিনই বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা।

জেলা সিভিল সার্জন অফিসের তথ্য মতে, সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে জেলায় প্রতিদিন গড়ে ৩০ থেকে ৩৫ জন নতুন রোগী ভর্তি হচ্ছে। এ পর্যন্ত আক্রন্ত হয়েছে ৬ শতাধিক মানুষ। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন দুই শতাধিক। বাকিদের বেশির ভাগই সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। কয়েকজনকে পাঠানো হয়েছে ঢাকায়। শহর ও শহরতলী ছাড়িয়ে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়েছে গ্রামাঞ্চলেও।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বেশ কয়েকজন ডেঙ্গু রোগী ও তাদের স্বজনরা জানান, তারা নিজবাড়ি থেকেই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। আবার অনেকেই রয়েছেন যারা চাকরি কিংবা ব্যবসার প্রয়োজনে ঢাকা এবং গাজীপুরে গিয়ে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন।

মুন্নু মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের ডেপুটি ডিরেক্টর ডা. এসএম মনিরুজ্জামান জানান, যে সকল ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফিরছেন তাদের পুরোপুরি সুস্থ হতে আরও ৭ থেকে ১০ দিন পর্যন্ত সময় লাগবে। এ সময়টাতে তরল খাবারের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়া এবং পুষ্টি সম্মৃদ্ধ খাবার খাওয়া এবং পর্যাপ্ত বিশ্রামে থাকতে হবে।

Advertisement

মানিকগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীদের জন্য আলাদা কর্ণার এবং ১০০ সিট সংরক্ষিত করায় সাধারণ চিকিৎসা কার্যক্রম অনেকটাই ব্যাহত হচ্ছে। সিট না পাওয়ায় অনেক সাধারণ রোগী হাসপাতালের মেঝেতে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

এ প্রসঙ্গে মানিকগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন ডা. আনোয়ারুল আমিন আকন্দ জানান, ডেঙ্গু এখন জাতীয় সমস্যা। এজন্য এই রোগীদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা করতে হচ্ছে। ডেঙ্গু রোগীদের জন্য সাধারণ রোগীদের বিছানাপত্র ছেড়ে দিতে হচ্ছে। এ কারনে চিকিৎসা কার্যক্রম কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে।

তবে চিকিৎসক ও নার্সরা সাধ্যমতো সবাইকে চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন বলে জানান জেলা সিভিল সার্জন।

বি.এম খোরশেদ/এফএ/এমকেএইচ