আন্তর্জাতিক

যৌন নির্যাতনের কথা গোপন করলেই মুক্তি দেবে সৌদি

সৌদি আরবে কারাবন্দী এক নারী অধিকার কর্মীর পরিবার অভিযোগ করেছে যে, ওই অধিকার কর্মীকে আটক অবস্থায় নির্যাতনের কথা গোপন করলে মুক্তি দেবে কর্তৃপক্ষ। বন্দীদের ওপর নির্যাতনের অভিযোগ নতুন নয়। আটকদের মধ্যে এ পর্যন্ত চারজন নির্যাতনের অভিযোগ তুলেছেন। তাদের বক্তব্য অনুযায়ী, কারাগারে তাদের বিদ্যুতের শক, চাবুক দিয়ে পেটানো এবং যৌন নির্যাতন করা হয়েছে।

Advertisement

লুযেইন আল হাথলুল নামের ওই নারী অধিকার কর্মীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্র বিরোধী অপশক্তির সঙ্গে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনা হয়। চলতি বছরের মার্চে তিনিসহ আরও নয়জন অধিকার কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়।

সৌদি আরবে নারীদের গাড়ি চালানোর অধিকার আদায়ে লুযেইন আল হাথলুলের সক্রিয় ভূমিকা ছিল। নারীরা এখন স্বাধীনভাবে গাড়ি চালানোর অনুমতি পেলেও এর পেছনে কাজ করে এখন কারাগারে বন্দী রয়েছেন লুযেইন।

ব্রাসেলসে বসবাসকারী তার বোন লীনা আল হাথলুল মঙ্গলবার এক টুইট বার্তায় বলেছেন, আমি এ বিষয়ে লিখে হয়ত ঝুঁকি নিচ্ছি। হয়ত এতে আমার বোনের ক্ষতি হবে কিন্তু আমার পক্ষে এ ব্যাপারে কিছু না বলে আর থাকা সম্ভব হচ্ছে না।

Advertisement

তিনি বলেন, লুযেইনকে একটা প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। তাকে বলা হয়েছে যে, তাকে নির্যাতন করা হয়েছে কিনা এই বিষয়টি তিনি যদি অস্বীকার করেন তবে তাকে মুক্তি দেয়া হবে। তিনি আরও লিখেছেন, আবারও বলছি লুযেইনকে নির্মমভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। তাকে শারীরিক ও যৌন নির্যাতন করা হয়েছে।

তার পরিবার এর আগেও শারীরিক ও যৌন নির্যাতনের অভিযোগ তুলেছে। কিন্তু সৌদি সরকার বরাবরই তা প্রত্যাখ্যান করে আসছে। এই অভিযোগের ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে জানতে চাওয়া হলেও তারা এ বিষয়ে কিছু বলতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।

লুযেইন হাথলুল সৌদি আরবে নারী অধিকার বিষয়ে পরিচিত একটি মুখ। ২০১৪ সালে তিনি প্রথম পরিচিতি পান। সে সময় সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের সীমান্ত দিয়ে তিনি গাড়ি চালিয়ে ঢোকার চেষ্টা করেছিলেন। পুরো বিষয়টি টুইটারে লাইভ করেছিলেন তিনি।

অনেক সমালোচনার মুখে চলতি বছরের জুনে নারীদের গাড়ি চালানোর উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয় সৌদি।সেখানে দীর্ঘদিন ধরে চলা নারীদের পুরুষ অভিভাবক সম্পর্কিত একটি আইনও চলতি মাসে শিথিল করা হয়েছে।

Advertisement

ওই আইন অনুযায়ী, একজন নারীর জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে তার কোনো পুরুষ আত্মীয় অর্থাৎ বাবা, ভাই, স্বামী ও ছেলের অনুমোদন প্রয়োজন হতো। সম্প্রতি ওই আইনের একটি ধারা পরিবর্তিত হয়েছে। আগে দেশের বাইরে কোথাও যেতে হলে সাথে করে কোন পুরুষ অভিভাবককে নিয়ে যেতে হতো। কিন্তু এখন আর তার প্রয়োজন হবে না।

এসব আইনের পরিবর্তন হতে থাকলেও এগুলো পরিবর্তনের জন্য আন্দোলনে যাদের সক্রিয় ভূমিকা ছিল তাদের মধ্যে বেশিভাগই এখনো কারাগারে দিন কাটাচ্ছেন। দেশটির কর্তৃপক্ষ অবশ্য এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে। আটক মানবাধিকার কর্মীদের মুক্তির দাবি জানিয়ে আসছে পশ্চিমা দেশগুলো। জাতিসংঘের তরফ থেকেও তাদের মুক্তি দেয়ার আহবান জানানো হয়েছে।

গত বছর তুরস্কে সৌদি দূতাবাসে সাংবাদিক জামাল খাসোগজির হত্যাকাণ্ডের পর থেকে সৌদি আরবকে আরও কঠোরভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য সমালোচনা করা হচ্ছে। এসব সমালোচনার ব্যাপারে সৌদি আরব বলছে, মানবাধিকারের নাম করে তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের চেষ্টা চলছে।

গত বছরের আগস্টে কানাডার পক্ষ থেকে আটক মানবাধিকার কর্মীদের মুক্তির দাবি তোলা হয়েছিল। এরপরেই সৌদি আরব কানাডার সাথে ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছিন্ন করে এবং কানাডার রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কার করে।

টিটিএন/জেআইএম