সংবাদকর্মীদের নবম ওয়েজ বোর্ডের সুপারিশ চূড়ান্ত করা হবে বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, যিনি নবম ওয়েজ বোর্ডের সুপারিশ পরীক্ষা কমিটির আহ্বায়ক।
Advertisement
বৃহস্পতিবার তথ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে কমিটির বৈঠক শেষে ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। এখন এটি মন্ত্রিসভার অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে। ওবায়দুল কাদেরের সভাপতিত্বে বৈঠকে কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক, তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন, সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ এবং তথ্য প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসান উপস্থিত ছিলেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমরা রিপোর্টটি চূড়ান্ত করেছি। কিন্তু এই চূড়ান্ত রিপোর্টই চূড়ান্ত নয়। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারে কেবল মন্ত্রিসভা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মন্ত্রিসভা আমাদের এই কমিটি গঠন করেছে। বিভিন্ন স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনা করে যে রিপোর্ট তৈরি করেছি, আমরা মনে করছি এটা বাস্তবসম্মত ও যুক্তিসঙ্গত।’
তিনি বলেন, ‘এই রিপোর্টটি এখন আমরা ক্যাবিনেট ডিভিশনে পাঠিয়ে দেব। ক্যাবিনেট ডিভিশন থেকে মন্ত্রিসভা বৈঠকে উপস্থাপিত হবে। এবং মন্ত্রিসভা বৈঠকের অনুমোদনের পর এটা গেজেট আকারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত প্রকাশিত হবে।’
Advertisement
প্রতিবেদনে কী আছে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মন্ত্রিসভার বিষয়টি আমরা কীভাবে বলব? আমরা রিপোর্টটি ক্যাবিনেট ডিভিশনে পাঠিয়ে দেব। আমরা অহেতুক বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে জল্পনা-কল্পনা সৃষ্টি করতে চাই না। বাংলাদেশ এমনিতে গুজবের অনেক বড় ফ্যাক্টরি, গুজব সৃষ্টি করতে চাই না, গুজবের ডালপালা বিস্তার করতে চাই না। মন্ত্রিসভায় সিদ্ধান্ত হয়েই যাবে, এটা ম্যাটার অব টাইম। প্রধানমন্ত্রী আগামী ৫ তারিখে আসলে পরবর্তী কোনো দিন মন্ত্রিসভা বৈঠকে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে।’
ইলেকট্রনিক মিডিয়ার কর্মীদের ওয়েজ বোর্ডের আওতায় আনার বিষয়টির কী হলো- জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘গণমাধ্যমকর্মী আইন হবে। সেই আইনে সেটা থাকবে।’
এ বিষয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘নবম ওয়েজবোর্ডের সুপারিশে ইলেকট্রনিক মিডিয়ার জন্য আলাদা একটি নীতিমালা করার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু নবম ওয়েজ বোর্ড শুধু সংবাদপত্রের জন্যই। কারণ নবম ওয়েজ বোর্ডের ম্যান্ডেটের মধ্যে ইলেকট্রনিক মিডিয়া নেই। সেই কারণে নবম ওয়েজবোর্ডে এটা (ইলেকট্রনিক মিডিয়া) অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব নয়। গণমাধ্যমকর্মী আইন চূড়ান্ত হলে এটি করা সম্ভব হবে। গণমাধ্যমকর্মী আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিংয়ের পর্যায়ে আছে।’
সংবাদকর্মীদের বেতন-ভাতা সর্বোচ্চ ৮৫ শতাংশ বৃদ্ধির সুপারিশ করেছে নবম ওয়েজ বোর্ড, যা গত বছরের ৩ ডিসেম্বর মন্ত্রিসভা বৈঠকে উপস্থাপন করা হয়। ওই দিনই নতুন এই বেতন কাঠামো পরীক্ষা করে বাস্তবায়নের সুপারিশ দিতে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট মন্ত্রিসভা কমিটি গঠন করা হয়। নতুন সরকার গঠিত হলে গত ২১ জানুয়ারি মন্ত্রিসভা বৈঠকে ‘৯ম সংবাদপত্র মজুরি বোর্ড রোয়েদাদ, ২০১৮’ পরীক্ষায় ইতোপূর্বে গঠিত মন্ত্রিসভা কমিটি পুনর্গঠন করা হয়। পুনর্গঠিত ৭ সদস্যের মন্ত্রিসভা কমিটির আহ্বায়ক করা হয় ওবায়দুল কাদেরকে।
Advertisement
মন্ত্রিসভা বৈঠকে নবম ওয়েজ বোর্ডের সুপারিশ উপস্থাপনের পর মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেছিলেন, ‘ওয়েজবোর্ডে প্রথম তিনটি গ্রেডে ৮০ শতাংশ ও শেষের দিকে তিনটি গ্রেডে সর্বোচ্চ ৮৫ শতাংশ বেতন বৃদ্ধির সুপারিশ করেছে। যে সুপারিশ আসছে তারা (কমিটি) সেটা পর্যালোচনা করে হয়তো একটা নির্ধারণ করবেন।’
গত ৪ নভেম্বর সচিবালয়ে তখনকার তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর কাছে ‘নবম সংবাদপত্র মজুরি বোর্ড রোয়েদাদ, ২০১৮’ সুপারিশমালা জমা দেন বোর্ডের চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মো. নিজামুল হক।
সংবাদপত্র ও বার্তা সংস্থার কর্মীদের জন্য নতুন বেতন কাঠামো নির্ধারণের জন্য গত বছরের ২৯ জানুয়ারি নবম মজুরি বোর্ড গঠন করা হয়। ১৩ সদস্যের এই বোর্ডে চেয়ারম্যান সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মো. নিজামুল হক। এছাড়া সংবাদপত্র প্রতিষ্ঠানের মালিকপক্ষ এবং সাংবাদিক ও সংবাদপত্র কর্মচারী বা শ্রমিকদের প্রতিনিধিত্বকারী সমসংখ্যক প্রতিনিধিও ছিলেন ওয়েজ বোর্ডে।
সরকারের কাছে সুপারিশ দিতে বোর্ডকে ছয় মাস সময় দেয়া হয়েছিল। পরে নবম মজুরি বোর্ডের মেয়াদ আরও তিন মাস বাড়ানো হয়।
গত বছরের ১১ সেপ্টেম্বর নবম বেতন কাঠামো চূড়ান্ত করার আগে প্রতি মাসের মূল বেতনের ওপর ৪৫ শতাংশ হারে মহার্ঘ ভাতা ঘোষণা করে সরকার। এ মহার্ঘ ভাতা ২০১৮ সালের ১ মার্চ থেকে কার্যকর ধরা হয়। মহার্ঘ ভাতা বোর্ডের নির্ধারিত সামগ্রিক বেতন কাঠামোর সাথে সমন্বিত হবে।
নবম ওয়েজ বোর্ডের বৈধতা নিয়ে আদালতে একটি রিটও করেছিল সংবাদপত্র মালিকদের সংগঠন নিউজপেপারস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (নোয়াব)।
আরএমএম/এমএসএইচ/এমকেএইচ