নিখোঁজের ছয় দিন পরও খোঁজ মিলছে না নটরডেম কলেজ ময়মনসিংহ শাখার দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র সাফায়েত আল হোসাইনের। ইতোমধ্যে ছেলেকে ফেরৎ পেতে একটি চক্রের হাতে তুলে দিয়েছেন দেড় লাখ টাকা। চক্রটি কথা দিয়েছিল টাকা হাতে পাওয়ার পর ছেলেকে ময়মনসিংহ শহরতলী দিঘারকান্দা বাইপাস মোড়ে নটরডেম কলেজের পাশে রেখে যাবে। কিন্তু কথা রাখেনি চক্রটি।
Advertisement
ছেলে নিখোঁজের পর থেকে সাফায়েতের মা শয্যাশায়ী। আর বাবা ছেলেকে ফিরে পেতে ছুটে চলছেন পুলিশ, ডিবি পুলিশ, র্যাব অফিসে। বাদ যাচ্ছে না হুজুর, কবিরাজ আর ফকিরও। পরিবারের একটিই চাওয়া ফেরৎ চাই বুকের ধনকে। থানায় জিডির পরই পুলিশ সুপার শাহ আবিদ হোসেনসহ র্যাব ও গোয়েন্দা পুলিশের একাধিক টিম নিখোঁজ সাফায়েতের বাসা পরিদর্শন করেন।
সাফায়াতের বাবা আফজাল খান জানান, সাফায়েত নিখোঁজের চারদিন পর শুক্রবার সকালে তার সন্ধান জানিয়ে নিজেকে গোয়েন্দা বিভাগের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার পরিচয় দিয়ে +৮৮০৯৬৩৮৬৮৯০২৭ নম্বর থেকে দেড় লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে এক ব্যাক্তি। টাকা পাঠানোর জন্য ৫টি বিকাশ নম্বর দেয়। চক্রটির কথামতো সাফায়াতের বাবা ঠিকাদার আফজাল খান ওই ৫টি বিকাশ নম্বরে সন্ধ্যা ৬টার পূর্বেই দেড় লাখ টাকা পাঠায়। তাদের কথামতো ছেলেকে ফেরৎ পেতে সন্ধ্যার পর থেকে বাইপাস মোড়ে অপেক্ষা করতে থাকে। রাত দশটা পর্যন্ত অপেক্ষা করে ছেলের সন্ধান না পেয়ে হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন তিনি। এরপর ওই মোবাইল নম্বরগুলোতে একাধিকবার ফোন করেও সংযোগ পায়নি তারা। পরে রাতেই বিষয়টি ডিবির ওসি শাহ কামাল আকন্দসহ পুলিশ প্রশাসনকে অবহিত করেন।
আফজাল খান আরও বলেন, ওই ব্যক্তি নিজেকে পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা দাবি করে বলেন, আপনার ছেলের সন্ধান পাওয়া গেছে। আপনার ছেলের ভালোর জন্যই ফোন করেছি। আপনার ছেলে কোনো অপরাধ করেনি। আপনার ছেলেকে ছেড়ে দেব। আর আপনার ব্যাপারেও খোঁজখবর নিয়েছি। আপনি ভদ্রলোক। আর বুঝেন-ইতো আপনার ছেলেকে খুঁজে পেতে কিছু খরচ-পাতি হয়েছে। আপনাকে নম্বর দিচ্ছি সেগুলোতে দেড় লাখ টাকা পাঠান, টাকা হাতে পেলেই আপনার ছেলেকে ছেড়ে দেব। মুক্তিপণের টাকা না দিলে যদি ছেলেকে মেরে ফেলে, এজন্যই পুলিশকে না জানিয়ে তাদের দেয়া ৫টি বিকাশ নম্বরে দেড় লাখ টাকা পাঠিয়েছি। ডিবির ওসি শাহ কামাল আকন্দ জানান, সাফায়েতকে উদ্ধারে ডিবি ও থানা পুলিশের একাধিক টিম মাঠে কাজ করছে। শনিবার সাফায়েতের বাবা আফজাল খান জানান, মোবাইল ফোনে কে বা কারা দেড় লাখ টাকা দাবি করে পাঁচটি বিকাশ নম্বরও দেয়। সেই নম্বরগুলোতে টাকা পাঠিয়ে পরে আমাদেরকে জানানো হয়। আমরা সেই ফোন নম্বরটিসহ ৫টি বিকাশ নম্বর খতিয়ে দেখছি। প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, যে পাঁচটি নম্বরে টাকা পাঠানো হয়েছে সেই নম্বরগুলো চট্টগ্রাম ও ফেনী অঞ্চলের ।
Advertisement
সাফায়েত ত্রিশাল উপজেলার ধলা গ্রামের ঠিকাদার আফজাল খান রিপনের বড় ছেলে। সন্তানের পড়াশোনার জন্য আফজাল খান পরিবার নিয়ে ময়মনসিংহ শহরের বাউন্ডারি রোড এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় বসবাস করেন। সাফায়েত প্রতিদিনের মতো গত ২৫ জুন মঙ্গলবার সকালে কলেজে যায়। দুপুর ১টায় ক্লাস শেষ হয়। কিন্তু সন্ধ্যা পর্যন্ত বাসায় না ফেরায় তারা খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। আত্মীয় স্বজন, তার সহপাঠী ও বন্ধুদের বাসায় অনেক খোঁজাখুঁজির পর সন্ধান না পেয়ে রাতেই ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।
এমএএস/এমকেএইচ