মতামত

রিফাত ভালোবাসি, রিফাত ঘৃণা করি

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে সময় নষ্ট করবো না। গতকালের ঘটনায় দেশের কমবেশি প্রতিটি মানুষ চিনে গেছেন নিহত রিফাতকে। চিনে গেছেন মেহেদী রাঙ্গা হাতে স্বামীর রক্তমাখা মিন্নিকেও। আর সাথে চিনেছেন কিছু নরকের কীটকে, যাদের ধারালো আঘাতের মুখ থেকে স্বামীকে চেষ্টা করেও বাঁচাতে পারেননি মিন্নি।

Advertisement

আমরা যারা বরগুনাতে নেই, তারা ফেসবুকে আছি। ঘটনার ভিডিও চিত্র দেখেছি। কষ্ট পেয়েছি, প্রতিক্রিয়াশীল হয়েছি, হয়তো ভুলেও যাবো আজকালের মধ্যে। চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে কোন একদিন সকালে হয়তো বলবো, " ওই ছেলেটার নাম যেন কি? ঐ যে সেদিন মারা গেল!"

খুনিদের ছবি ষ্পষ্ট। বিচার হবে বলেই আস্থা রাখছি। সরকারও যথেষ্ট আন্তরিক এবং তৎপর। ফুটেজের প্রেক্ষিতে হত্যাকারী হিসেবে যার নাম সামনে এসেছে,তার নামও রিফাত। রিফাত ফরাজী।

এবার প্রশ্নটা অন্য জায়গায়, আপনার ঘরে কোন রিফাত ফরাজী বেড়ে উঠছে না তো? নড়েচড়ে উঠে আমাকে দু’চারটে মন্দ কথাও হয়তো শুনিয়ে দেবেন। একটু ভেবে দেখুন, আমাদের এই সমাজের কোন পরিবার থেকেই কিন্তু রিফাত ফরাজীরা জন্ম নেয়, বেড়ে ওঠে। তাদের ভয়ে এলাকার লোকেরা তটস্থ থাকে,কিছু বলে না।

Advertisement

এই কিছু না বলা মানুষই আমরা। আমরা চোখের সামনে হত্যাকাণ্ড দেখি, মুঠোফোনে হত্যাকাণ্ড দেখি। আহা উহু করি, ফেসবুকে ক্ষোভ প্রকাশ করি। ভাগ্যিস! ফেসবুক ছিল। তা না হলে, বোবা হয়েই থাকতে হতো সবার। প্রতিবাদী হতে হলে খুনি হতে হয় না, আগ্রাসী হতে হয় না। চোখ-কান খোলা রেখে সতর্ক হতে হয়।

আমার আপনার ঘরে যেন রিফাত ফরাজীরা বেড়ে না ওঠে। দূষণের দায় কিন্তু পরিবার এড়াতে পারে না। খুনির নামের শেষে পারিবারিক পদবীটা কিন্তু মিশে থাকে। দুজনের নামই তো রিফাত। আলাদা করতে হচ্ছে কিন্তু ওই পদবী দিয়েই। পরিবার দিয়েই। হা-হুতাশের মাঝেই নজর ফেরান পরিবারে, চারপাশে। প্রতিরোধ হোক সতর্কতায়। প্রতিকারে শান্তি মেলে, হারানো মানুষ মেলে না।

শেষের ভাবনাটা ভয়াবহ; বেঁচে থাকতে হবে মিন্নিকে। মানুষের রূপে কাল সে যেসব অমানুষকে দেখলো, মানুষের ওপর বিশ্বাস করে বেঁচে থাকতে তার কতটা কষ্ট হবে চিন্তা করলেই শিউরে ওঠে গা। এক রিফাত তাকে স্বপ্ন দেখিয়েছিল নতুন জীবনের। অন্য রিফাতের ঘৃণ্য আক্রমণে চুরমার হয়েছে সে স্বপ্ন।

রিফাত শব্দের অর্থ উচ্চতর কিংবা প্রাঞ্জল। এক প্রাঞ্জল রিফাতকে হারিয়েছি। অন্যদিকে খুনি রিফাতের উচ্চতর শাস্তি দাবি করছি। একই নামের মতো মানুষগুলোও তো একই রকমের দেখতে। তবু কেন এত ভয়াবহ পার্থক্য!

Advertisement

লেখক: সিনিয়র সহকারী সচিব, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার।

এইচআর/পিআর