খেলাধুলা

সাকিব হাসলে বাংলাদেশও হাসে

বিশ্বকাপ শেষে টুর্নামেন্টসেরা পুরস্কার কার হাতে উঠবে সেটা সময়ই বলে দেবে। তবে বিশ্বকাপ যখন মাঝপথ অতিক্রম করেছে, তখন এই সেরা হওয়ার অন্যতম দাবিদার বাংলাদেশের অল রাউন্ডার সাকিব আল হাসান। আসলে সাকিব বাংলাদেশেরই সেরা অলরাউন্ডার নন, তিনি বিশ্বসেরা অল রাউন্ডার। তো বিশ্বের সেরা অলরাউন্ডার বিশ্বকাপে সেরা নৈপূণ্য না দেখালে কে দেখাবেন?

Advertisement

এই বিশ্বকাপে বাংলাদেশের পেছনে ফেলা ৭ ম্যাচের একটি হতে দেয়নি বৃষ্টি। শ্রীলংকার বিরুদ্ধে ভেসে যাওয়া ম্যাচটি নিয়ে আপসোস আছে অনেক। কে জানে ম্যাচটি হলে বাংলাদেশের নামের পাশে আরো এক পয়েন্ট বেশি থাকতো কি না। যে ৬ ম্যাচ হয়েছে তার মধ্যে তিনটিতে- বাংলাদেশ জিতেছে দক্ষিণ আফ্রিকা, ওয়েস্ট ইন্ডিুজ ও সর্বশেষ আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে। হেরেছে ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে।

বাংলাদেশ যে তিনটি ম্যাচ জিতেছে সেই তিন ম্যাচেই সেরা পারফরমার সাকিব আল হাসান। তিন ম্যাচ শেষেই তার হাতে উঠেছে সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার। এ যেন টুর্নামেন্টসেরা হওয়ার একেকটা নর্ম জমা হচ্ছে সাকিবের খাতায়। বাকি দুই ম্যাচের পর সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার হাতে উঠলে বিশ্বকাপের সেরা হওয়া কে ঠেকাবেন সাকিবকে? বাঁ-হাতি এ অলরাউন্ডার যে ফর্মে আছেন তাতে তার চাওয়াটা পূরণ হতেও পারে ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে।

সাকিব অলরাউন্ডার। আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে ব্যাট হাতে ৫১ রান করার পর বল হাতে ৫ উইকেট। এটা বিশ্বকাপে বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে সেরা সাফল্য; কিন্তু এই বিশ্বকাপে ‘ব্যাটসম্যান’ সাকিব যেন বেশি ফর্মে। ৪৭৬ রান করে সাকিব এখন ব্যাটসম্যানদের ওপরে। আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে ম্যাচে নামার আগে অস্ট্রেলিয়ার ওয়ার্নারের পেছনে ছিলেন সাকিব। ম্যাচের পর তিনি ওয়ার্নারের ওপরে।

Advertisement

আফগানিস্তান টস জিতে বাংলাদেশকে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানানোর পর সবার একটা কৌতুহল ছিল, কত রানের স্কোর করতে পারবে টাইগাররা? সাড়ে তিনশ’, চারশ’? না সাউদাম্পটনের উইকেট ২৬২ রানেই থামিয়ে দেয় বাংলাদেশকে এবং এ আভাস দিয়ে দেয়- এই মাঠ ও উইকেটে ২৬২ রান টপকে আফগানিস্তানের জন্য ম্যাচ জেতা কঠিন। শেষ পর্যন্ত পাক্কা ২০০ করে অলআউট হয় আফগানরা। বাংলাদেশ জয় পায় ৬২ রানে।

বাংলাদেশ ইনিংসে ২৩ রানে প্রথম উইকেট পতন। বিতর্কিত ক্যাচে সাজঘরে ফিরে যান লিটন দাস। পুরো ম্যাচে ওই একবারই বাংলাদেশ ছিল চাপে। এরপর কখনোই আফগানরা ম্যাচ বের করে নেয়ার মতো অবস্থা তৈরি করতে পারেনি। সব সময়ই বাংলাদেশের হাতেই ছিল ম্যাচ।

আফগানিস্তানের ব্যাটসম্যানরা যখনই উইকেটে থিতু হতে চেয়েছেন তখনই সাকিবের আঘাত। ধারাবাহিকভাবে উইকেট ফেলে তিন ওভার হাতে রেখেই ম্যাচের আগে হুমকি দেয়া আফগানিস্তানকে উড়িয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ।

বোলিং শেষে সাকিবের ফিগার দাঁড়ায় ১০-১-২৯-৫। যাকে বলে ম্যাজিক্যাল ফিগার। বিশ্বকাপে ৫ উইকেট পাওয়া বোলার অনেক আছেন; কিন্তু এক ম্যাচে অর্ধশতাধিক রান ও ৫ উইকেট পাওয়া ক্রিকেটারতো সাকিবসহ মাত্র দুই জন। এর আগে ভারতের যুবরাজ সিং-এর ছিলো এই কৃতিত্ব। এবার তার পাশে দাঁড়ালেন সাকিব।

Advertisement

এই বিশ্বকাপে সাকিব আর বাংলাদেশের হাসি মিলেমিশে একাকার। যে ম্যাচে সাকিব হাসেন সে ম্যাচে বাংলাদেশও হাসে। সাকিব এখন বলতেই পারেন ‘আমি জিতলে জিতে যান মা (দেশমাতা)।’

বিশ্বকাপে বাংলাদেশের শুরুটা ছিল দুর্দান্ত। দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ২১ রানের জয়ে প্রধান অবদান ছিলো সাকিবের। ৭৫ রান করেছিলেন, পরে বোলিংয়ে ১ উইকেট। দ্বিতীয় ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের কাছে হারা ম্যাচেও হেসেছিল সাকিবের ব্যাট। করেছিলেন ৬৪ রান, নিয়েছিলেন ২ উইকেট।

শ্রীলংকার বিরুদ্ধে পরের ম্যাচ বৃষ্টিতে বাতিল না হলে সাকিবের খাতায় আরো কিছু সাফল্য হয়তো যোগ হতো। ম্যাচ না হওয়ায় বাংলাদেশের যেমন আপসোস আছে, তেমন আছে সাকিবেরও। বাংলাদেশের দ্বিতীয় জয়টি ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে। ৭ উইকেটের সেই জয়ে সাকিবের অবদান ২ উইকেট ও অপরাজিত ১২৪ রান। ম্যাচসেরাও হয়েছেন এই অলরাউন্ডার। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধেই কেবল সাকিব রান অর্ধশত পার করতে পারেননি, আউট হয়েছিলেন ৪১ রানে। উইকেটও পানটি। সাকিব হাসেননি, হাসেনি বাংলাদেশও।

সর্বশেষ ম্যাচে আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের সবচেয়ে লম্বা ইনিংসটি খেলেছেন মুশফিকুর রহীম, ৮৩ রানের। লোয়ার অর্ডারে বিধ্বংসী ছিলেন মোসাদ্দেক হোসেনও; কিন্তু বাংলাদেশের ইনিংস বিল্ডআপ করার প্রাথমিক কারিগর কিন্তু সাকিব আল হাসানই। আর বোলিংয়ে তিনিইতো রাজা। আফগানিস্তানের রশিদ খানকে নিয়ে অনেক কথা হয়েছিল; কিন্তু সাকিব দেখিয়েছেন রশিদ খান নন, তিনিই সেরা। তার ব্যাট হেসেছে, বল হেসেছে। হেসেছেন সাকিব নিজেও। আর ম্যাচ শেষে বড় হাসিটা ছিল লাল-সবুজের দেশের মানুষের।

আরআই/আইএইচএস/