খেলাধুলা

বুড়ো হাড়ের ভেলকি দেখালেন মালিঙ্গা

বিশ্বকাপ শুরুর দিন কয়েক পেরুতেই ইংল্যান্ড থেকে দুবার দেশে গিয়েছিলেন শ্রীলঙ্কার পেস বোলার লাসিথ মালিঙ্গা। ইনজুরি বা অন্য কোনো কারণে নয়, মালিঙ্গা দেশে গিয়েছিলেন তার শাশুড়ি মারা যাওয়ায়। নিকটাত্মীয়র মৃত্যুতে মানসিকভাবে কিছুটা বিপর্যস্ত হলেও খেলার মাঠে সেই ইস্পাতকঠিন চেহারায়ই বিশ্বের আলোচিত এ পেসার।

Advertisement

শুক্রবার এই বিশ্বকাপের টপ ফেবারিট, ব্যাটিং শক্তিতে বলীয়ান ইংল্যান্ডকে মাটিতে নামিয়ে আবার নিজেকে প্রমাণ করলেন লংকান ডান হাতি এই পেসার। বুঝিয়ে দিলেন, বুড়ো হাড়ের ভেলকি এখনও ফুরোয়নি।

শ্রীলঙ্কার পুঁজি ছিল মাত্র ২৩২ রানের। ইংল্যান্ডের জন্য এটা কোনো চ্যালেঞ্জই নয়-ম্যাচের মধ্য বিরতিতে এমন ধারণাই ছিল সবার। ওয়ানডে ক্রিকেটে এর আগে টানা ৭ ম্যাচে তিন শতাধিক রানের সংগ্রহ গড়া ইংলিশ ব্যাটসম্যানদের ২৩২ রান টপকাতে কত ওভার খেলতে হয়, তা দেখার কৌতূহলই ছিল মূলত।

কিন্তু শ্রীলঙ্কার দুর্দান্ত বোলিং-ফিল্ডিংয়ে তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ে ইংলিশদের ব্যাটিং লাইনআপ। ২৩২ রান তাড়া করতে গিয়ে ইংলিশরা অলআউট হয় ২১২ রানে। শ্রীলঙ্কারর ২০ রানের জয়ে বড় অবদান ৩৫ বছর বয়সী লাসিথ মালিঙ্গার।

Advertisement

শুক্রবার এ জয়ের পর থেকে দলের অধিনায়ক দিমুথ করুনারত্নের মুখ থেকে মালিঙ্গার প্রশংসা থামছেই না। লংকান অধিনায়ক তার পুরো দলকে মালিঙ্গার কাছ থেকে শিক্ষা নিতে বলেছেন, ‘দলের সব খেলোয়াড়ের উচিত তাকে (মালিঙ্গা) অনুসরণ করা। এ সিনিয়র খেলোয়াড় সবার জন্য বিরাট উদাহরণ।’

ম্যাচে ৪৩ রানে ৪টি উইকেট নিয়েছেন মালিঙ্গা। আরও কয়েকটি উইকেট পেতে পারতেন, যদি ফিল্ডিংয়ে লঙ্কানরা ভুল না করতো। তবে উইকেট পাওয়া নিয়ে কথা নয়, নাটকীয় এই জয়ের নায়ক যে মালিঙ্গাই, সেটা আলাদা করে বলার প্রয়োজন নেই। আর এই জয় শ্রীলঙ্কাকে দারুণভাবে টিকিয়ে রেখেছে বিশ্বকাপে।

ডান হাতি এ পেসার তার মেধা ও অভিজ্ঞতা দিয়ে যেভাবে ফেবারিট ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচটি ঘুরিয়ে নিজেদের দিকে এনেছেন সেটা দলটির তরুণ খেলোয়াড়দের জন্য অনুসরণীয় হয়েই থাকবে। অধিনায়ক সে কথাটিই বারবার মনে করিয়ে দিচ্ছেন তার অন্য সতীর্থদের।

শাশুড়ি মারা যাওয়ার পর ইতোমধ্যে দুবার দেশে গিয়েছিলেন মালিঙ্গা। সময়মতো ফিরেও এসেছেন। এ প্রসঙ্গ টেনে অধিনায়ক করুনারত্নে বলেছেন, ‘এখানেই তার পেশাদারিত্ব। এমন অবস্থার মধ্যেও তিনি ভালো করে জানেন তাকে কি করতে হবে। সেটা করেছেন তিনি। আমরা জানি, তিনি সেরাটাই দিচ্ছেন। আমি তাকে বলেছিলাম, যদি তুমি দেশে যেতে চাও এবং সময়মতো ফিরে আস তাহলে ঠিক আছে। তিনি প্রতিশ্রুতিমতোই ফিরেছেন এবং দলের অন্যদের জন্য দারুণ এক উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন।’

Advertisement

‘মালিঙ্গা নিজের সেরাটা ধরে রাখার চেষ্টা করেন। এটা বড় কথা। তিনি দারুণভাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। যে কারণে আমরা মালিঙ্গাকে দলের অন্যান্য সদস্যের কাছে উদাহরণ হিসেবেই দেখতে চাই। ধনঞ্জয়াও খুব ভালো বোলিং করেছেন। দুজনের দুর্দান্ত নৈপুণ্যের কারণেই আমরা ম্যাচে ফিরতে পেরেছিলাম’- বলেছেন লংকান অধিনায়ক।

২৩২ রান করে ম্যাচ জেতার বিষয়ে শ্রীলঙ্কার অধিনায়ক করুনারত্নে বলেছেন, ‘উইকেটও আমাদের সহায়তা করেছে। আমরা ব্যাটিংয়ের সময়ই বুঝতে পেরেছিলাম এ উইকেটে ২৮০ থেকে ৩০০ রান করা কঠিন। আমাদের লক্ষ্য ছিল ২৪০ রানের মতো করা। সেটাই হতো ফাইটিং স্কোর। বোলিংয়ের সময় আমাদের বিশ্বাস ছিল কয়েকটি উইকেট ফেলে দিতে পারলেই ম্যাচে থাকবো। সেটা করতে পেরেছি।’

৬ ম্যাচে শ্রীলঙ্কা ৬ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের পঞ্চম স্থানে। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে দুর্দান্ত জয় সাবেক চ্যাম্পিয়নদের ভালোভাবেই ফিরিয়ে এনেছে সেমিফাইনালের ফেবারিট হিসেবে। পাকিস্তান ও বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ম্যাচ দুটি বৃষ্টিতে ভাসিয়ে নিয়েছে তাদের। এখন শেষ তিনটি ম্যাচ জিততে হবে। অধিনায়ক করুনারত্নে বলেছেন, ‘আমাদের দৃষ্টি এখন দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে পরের ম্যাচে। ম্যাচ বাই ম্যাচ এগুতে হবে আমাদের। সামনের ম্যাচটি জিতলে পরের ম্যাচ নিয়ে পরিকল্পনা করবো।’

আরআই/এমএমআর/এমএস