খেলাধুলা

সমালোচনা নয়, আসুন মাশরাফিদের ইতিবাচক সমর্থন জানাই

আমরা প্রথম ম্যাচ যেটা জিতেছি দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে সেটা তো খুবই ভালো ছিল। কিন্তু আমরা ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে হারার পর কী দেখলাম? সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিশাল এক ঝড় বয়ে গেলো। সেখানে নেতিবাচক ঝড়ই বেশি দেখেছি। কিন্তু এতটা প্রতিক্রিয়া জানানো আমাদের ঠিক নয়। সবার বুঝতে হবে যে, আমরা খেলছি কাদের সঙ্গে। এটা ঠিক, এখন আমরা ক্রিকেটে শক্তিশালী। আমাদের দল যে কোনো দলের সঙ্গে ভালো পারফরম্যান্স করে জিততে সক্ষম।

Advertisement

কিন্তু বুঝতে হবে ইংল্যান্ড এখন এক নম্বর দল। তাদের বোলিং অ্যাটাক ও ব্যাটিং লাইনআপ দুর্দান্ত। হয়তো আমাদের শক্তি অনুযায়ী ওই ম্যাচে পরফর্ম করতে পারিনি। জায়গা মতো বল করতে পারিনি, ব্যাটিংয়ে ক্লিক করতে পারিনি। এর মানে এই নয় যে, আমরা পরের ম্যাচে আর ব্যাক করতে পারবো না। আমাদের ১৬ কোটি মানুষের প্রতিনিধিত্ব করেন মাঠে ১১ জন। আমরা একটুতেই মুষড়ে পড়ি, একটুতেই নেতিবাচক চিন্তা করি। অমুককে দলে নিতে হবে, অমুককে বাদ দিতে হবে- এসব মত প্রকাশ বাদ দিতে হবে।

আমরা সাপোর্টার, আমরা আরো সাপোর্ট করতে পারি। আসলে যে খেলে সে বুঝে। কেউ খারাপ করার জন্য খেলে না। কেউ হারার জন্য খেলে না। সব কিছু মিলিয়ে মনে হয় যে, আমরা যারা পাশে আছি, যারা টিভিতে খেলা দেখছি তাদের উচিত ক্রিকেটারদের আরো ইতিবাচক সমর্থন দেয়া। বিশ্বাস রাখা উচিত ছেলেরা যেভাবে জিতেছে প্রথম ম্যাচে, তাতে প্রমাণ হয়েছে তারা সক্ষম এবং সামনেও পারবে ইনশাআল্লাহ। এটা কিন্তু সময়ের ব্যাপার।

পরের ম্যাচে আমাদের প্রতিপক্ষ ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তারাও কিন্তু অনেক শক্তিশালী। আমরা যদি আয়ারল্যান্ডের ফাইনালের কথা চিন্তা করি তাহলেই বুঝতে পারবো ওরা কেমন প্রতিপক্ষ। এখন বাংলাদেশের সামনে সব ম্যাচ জেতা ছাড়া পথ নেই। কারণ, অন্যান্য ম্যাচগুলোয় কেউ জিতছে, কেউ হারছে। অন্যরা এগিয়ে যাচ্ছে।

Advertisement

খেলার মাঠে যে কোনো কিছু হতে পারে। এই যেমন অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ভারতের জয়টা দেখুন। ভারত হারতে হারতে জিতে গেছে। যে কোনো কিছুই হতে পারে যে কোনো ম্যাচে। টিকে থাকতে হলে আমাদের সব ম্যাচ জিততে হবে। আমি আসলে ওসব চিন্তা করছি না। আমি চিন্তা করছি যে, আমাদের দলের কয়েকজন যেভাবে ভালো পারফর্ম করছেন সেটা যদি ধরে রাখা যায় তাহলে ভালো কিছুই সম্ভব। যেমন সাকিব-মুশফিক তো ভালো করছেন ব্যাটিংয়ে।

কেউ না কেউ পারফর্ম করছেন। আসলে উদ্বোধনী জুটিতে ভালো করতে না পারলে ম্যাচ জেতা ফিফটি ফিফটি হয়ে যায়। ওপেনিংয়ে যদি ভালো পার্টনারশিপ হয়, কেউ একজন যদি ৪০ ওভার পর্যন্ত খেলতে পারেন আমার মনে রেজাল্ট ভালো হবে। এটা ব্যাটিং নিয়ে বলছি। কারণ, আমরা তো ব্যটিংয়ে খারাপ করছি।

বোলিংয়ে সবাই খুব ভালো মেইনটেইন করছেন। সাকিব ভাই তো নিজের অবস্থান ধরে রেখেছেন। সব ম্যাচেই পারফর্ম করছেন। বোলিংয়ের ধারাবাহিকতা আরেকটু ভালোভাবে ধরে রাখতে হবে। বিশেষ করে লাইন ও লেন্থের ক্ষেত্রে। যেন উল্টাপাল্টা বোলিং না হয়। ব্যাটিংয়ে শুরুটা আরো ভালো করতে হবে। আমি খুব আশাবাদী পরের ম্যাচগুলো নিয়ে।

তবে আমার এখন চিন্তা বৃষ্টি। কারণ, আমাদের দরকার জয় সেখানে দেখা গেলো বৃষ্টি এসে সর্বনাশ করে দিয়েছে। এখন আমাদের কোনো ম্যাচ থেকেই পয়েন্ট হারাতে চাইবো না। আমি বলবো না যে পঁচা শামুকে পা কাটবে। কারণ, বিশ্বকাপে যারা খেলছে তারা সবাই যোগ্য ও শক্তিশালী। কথা হলো, যে কোনো দলের বিপক্ষেই হোক-একটি পয়েন্ট হারালে কিন্তু ক্ষতি হয়ে যাবে। তবে এটা ঠিক বৃষ্টির উপর তো কারো হাত নেই।

Advertisement

যেটা আমাদের হাতে নেই সেটা নিয়ে চিন্তা করেও লাভ নেই। আমাদের হাতে যে বিষয়গুলো আছে-এই যেমন ভালো শুরু করা, ধারাবাহিকতা ধরে রাখা। যে রান পাচ্ছে না সে একটু কন্ট্রিবিউট করুক। ২০ রান ২৫ রান যোগ করুক। যে বোলিংয়ে খারাপ করছে যে যেন আরেকটু মেইনটেইন করে। ইকোনোমিক্যাল বোলিং করতে পারলে প্রতিপক্ষকে কম রানে আটকিয়ে রাখা সম্ভব। উইকেটটা আসলে ভাগ্যেরও ব্যাপার। ফিল্ডিংটা আমাদের ভালো হচ্ছে। সব কিছু মিলিয়ে আমাদের হাতে যে কাজগুলো আছে সেগুলো করতে পারলেই ভালো করা সম্ভব।

আমাদের এবারের দলটি কিন্তু অসাধারণ। বলবো সর্বকালের সেরা স্কোয়াড নিয়েই বাংলাদেশ এবার বিশ্বকাপে খেলতে গেছে। গত বিশ্বকাপেও কিন্তু খুব ভালো দল নিয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশ। এবার তার চেয়েও ভালো। ডে বাই ডে আমাদের স্কোয়াডের ভালো দিকটাই দেখছি। যে কোনো দিন যে কোনো কিছু হতে পারে। বাংলাদেশ দুর্দান্ত শুরু করায় সবাই বেশি আশাবাদী হয়েছিলাম যে, সেমিফাইনালে আমরা সহজেই উঠতে পারবো। এখন কিন্তু অবস্থা কঠিন হয়ে গেছে। আমাদের সব ম্যাচ জিততে হবে। কিন্তু ওই যে, বৃষ্টিও একটা ভয় দিয়ে যাচ্ছে।

শুরুতে যা বলছিলাম দর্শক ও সমর্থকদের নিয়ে। আমার মনে হয় যে, দর্শক অবশ্যই ক্রিকেট নিয়ে ভালো ধারণা রাখে। একজন দর্শক কিন্তু একের মধ্যে অনেক হতে পারে। তারা যেমন উপদেষ্টা হতে পারে, সিলেক্টর হতে পারে। সে অধিনায়ক হতে পারে, সে খেলোয়াড়ও হতে পারে। এমন কী কোচও হতে পারে। কিন্তু ওই দর্শক কিন্তু মাঠে খেলে দিতে পারবে না। খেলতে হয় খেলোয়াড়দের। তাদেরই মাঠে সব পরিকল্পনা বাস্তায়ন করতে হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যে বিষয়গুলো প্রকাশ হয়, লেখালেখির মাধ্যমে নিজেদের মতামত প্রকাশ করা হয় সেটা যেন ইতিবাচক হয়। সেটা দলের জন্য অনেক সাপোর্ট হিসেবে কাজ করবে।

তখন খেলোয়াড়রা দেখবেন যে, যারা মাঠে খেলা দেখতে পারছে না তারা দেশ থেকে তাদের সাপোর্ট দিচ্ছে। দলের খেলোয়াড়রা কিন্তু এটাই আশা করে। কারণ, কেউ ইচ্ছা করে খারাপ খেলে না। ভালো-খারাপ কিন্তু খেলারই অংশ। দর্শক যারা নেতিবাচক চিন্তা করছেন, অনেক মতামত দিচ্ছেন তা ঠিক না। কারণ, দলের সঙ্গে অনেক অভিজ্ঞ মানুষ আছেন। যারা দল নিয়ে অনেক ভালো চিন্তা করেন, খেলোয়াড়দের বেশি কাছ থেকে দেখেন তাদের উপরই সব ছেড়ে দিন। কারণ, তারাই বুঝবেন মাঠে কিভাবে পরিকল্পনা কার্যকর করবেন।

আমরা সবাই ইতিবাচক সমর্থন দিয়েই যাই। বিশ্ব যেন আমাদের সমর্থকদের নেতিবাচক হিসেবে না জানে। কারণ, আমরা এখন ক্রিকেট পাগল জাতি। আমাদের সম্মান আমাদের ধরে রাখতে হবে। আমরা যে যেখানে, যে অবস্থানেই আছি সবাইকে খেলোয়াড়দের সমর্থন দিয়ে যেতে হবে। এটাই বলবো-সমালোচনা নয়, আসুন মাশরাফিদের ইতিবাচক সমর্থন জানাই।

আরআই/এমএমআর/পিআর