বিশেষ প্রতিবেদন

২ হাজার এটিএম বুথের তথ্য চুরির শঙ্কা

চোখ কপালে ওঠার মতো তথ্য এসেছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কাছে। ৩ বছর আগে দেশের ব্যাংকগুলোর মধ্যে আনুমানিক ২ হাজার এটিএম বুথের যন্ত্র সরবরাহকারী যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে গোপন চুক্তির পরিকল্পনা করেছিল একটি হ্যাকার গ্রুপ। তবে সেই চুক্তি বাস্তবায়নে তারা কতটুকু সফল হয়েছে তা বের করার চেষ্টা করছে ডিবি।

Advertisement

আরও পড়ুন : এটিএম বুথে জালিয়াতি : ইউক্রেনের ৬ নাগরিক রিমান্ডে

তিন বছর আগে ডিবির হাতে গ্রেফতার হওয়া এক বিদেশি অপরাধী রিমান্ডে তাদের এই তথ্য দিয়েছিল। সম্প্রতি গ্রেফতার হওয়া বিদেশিদের কাছেও এই তথ্য নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করছেন গোয়েন্দারা।

আরও পড়ুন : ‘রহস্য বৃত্তে’ আটকা প্রিমিয়ার ব্যাংক ডাকাতি মামলা

Advertisement

দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, সেসময় আসামি রিমান্ডে ডিবিকে জানায়, তখন এমন একটি চুক্তির পরিকল্পনা করেছিল আন্তর্জাতিক হ্যাকার গ্রুপের সদস্যরা। চুক্তি অনুযায়ী এটিএম বুথগুলোতে অবৈধ চিপ বসিয়ে দিবে ওই প্রতিষ্ঠানটি। চিপ থাকার ফলে সেসব বুথে যেই কার্ড ঢুকানো হবে, সেই কার্ডের তথ্য সরাসরি চলে যাবে হ্যাকার গ্রুপের সদস্যদের হাতে।

আরও পড়ুন : খেলাপি ঋণ এক লাখ ১১ হাজার কোটি টাকা

গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের ধারণা, ওই পরিকল্পনার বাস্তবায়ন করেই একের পর এক হানা দিয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে আন্তর্জাতিক হ্যাকার গ্রুপ। আর এতে ভয়াবহ নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়েছে দেশের ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবা। তবে সংখ্যাটা দুই হাজার বুথের তথ্য সত্যিই তারা নিতে পেরেছিল কি-না এ বিষয়টি এখনো নিশ্চিত নয়।

আরও পড়ুন : পত্রিকার হকার থেকে কোটিপতি

Advertisement

২০১৬ সালে এটিএম ও পয়েন্ট অব সেলস (পস) মেশিন জালিয়াতির প্রথম ঘটনায় গ্রেফতার হয় আন্তর্জাতিক জালিয়াত চক্রের অন্যতম হোতা বিদেশি নাগরিক পিওটর সিজোফেন মুজারেক। ঢাকার বিভিন্ন থানায় কয়েকটি মামলা হয়। ঘটনার তিন বছর পার হলেও সেই মামলার তদন্ত এখনো শেষ হয়নি। পুলিশ বলছে, তদন্ত প্রায় শেষ। দ্রুত চার্জশিট দেয়া হবে।

আরও পড়ুন : হাতঘড়িতে পাঁচ ব্যাংকের এটিএম কার্ডের তথ্য চুরি!

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, এক সপ্তাহের মিশনে আসা হ্যাকার গ্রুপের সদস্যরা আরও তিনটি ব্যাংকের এটিএম বুথ থেকে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পাওয়া গেলেও সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলো অর্থ চুরির বিষয়টি মুখে স্বীকার করছে না!

এদিকে সিআইডি জানায়, বুথে ডিজিটাল জালিয়াতির ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে রাজধানীর বাড্ডা থানায় মানি লন্ডারিংয়ের একটি মামলা করছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

আরও পড়ুন : কৃষি ব্যাংকের ভোল্ট ভেঙে টাকা লুট

ভয়াবহ এই ঝুঁকি ও বাংলাদেশে হ্যাকার গ্রুপের অপতৎপরতা বন্ধে সোমবার ডিবি পুলিশের মিন্টো রোডের কার্যালয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের কর্মকর্তা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বুয়েটের বিশেষজ্ঞ টিম এবং কম্পিউটার কাউন্সিলের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছে তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। এ ঘটনার পুরো রহস্য উদঘাটনে প্রযুক্তির জ্ঞানে দক্ষ একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

আরও পড়ুন : সুড়ঙ্গ কেটে ১৬ কোটি টাকা লুট : সেই সোহেলের ৫ বছর জেল

মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, বুথে ডিজিটাল জালিয়াতির আগাম তথ্য পেয়ে বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোকে সতর্ক করা হয়েছিল। ব্যাংকগুলো এসব তথ্য গুরুত্বসহকারে নিয়ে বুথের প্রযুক্তিগত আপডেট করে জালিয়াতি বন্ধে কার্যকরি ভূমিকা নিলে ভয়াবহ চুরি এড়ানো যেত।

কর্মকর্তারা আরও বলেন, হ্যাকার গ্রুপকে দ্রুত গ্রেফতার করতে পারায় তারা তাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারেনি। তবে দ্রুত সময়ের মধ্যে ব্যাংকিং খাতের ডিজিটাল সেবার এসব ফাঁক-ফোঁকর বন্ধ করা না গেলে চরম ঝুঁকিতে পড়বে এ খাত।

এই মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ডিবির অতিরিক্ত উপ-কমিশনার শাহিদুর রহমান রিপন জাগো নিউজকে বলেন, মামলার তদন্ত চলছে। গ্রেফতারকৃতদের রিমান্ডে এনে বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদ করলে চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া যাবে। গ্রেফতারকৃতদের তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। তাদের কারাগারে রাখা হয়েছে। মঙ্গলবার তাদের ডিবি কার্যালয়ে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

এদিকে এটিএম ও পয়েন্ট অব সেলস (পস) মেশিন জালিয়াতির প্রথম ঘটনাটি ঘটেছিল ৩ বছর আগে গুলশানে। সেই মামলার অগ্রগতির বিষয়ে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট উপ-কমিশনার (ডিসি) আলিমুজ্জামান বলেন, সেই মামলার তদন্ত প্রায় শেষ পর্যায়ে। তদন্তে মামলার এজাহারভুক্ত আসামি পিওটার ও সিটি ব্যাংকের কর্মকর্তাসহ এর বাইরেও চক্রের একাধিক সদস্যের নাম পাওয়া গেছে। মামলায় তাদের আসামি করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে আদালতে চার্জশিট দেওয়া হবে।

এর আগে ২০১৬ সালের মে মাসে তিন দিনের বিশেষ মিশন নিয়ে আসে তিন চীনা নাগরিক। তাদের মধ্যে জ্যু জিয়ানহুই রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডের প্রাইম ব্যাংকের এটিএম বুথ থেকে টাকা তোলার সময় ধরা পড়ে। নিরাপত্তাকর্মীর সন্দেহ করে তাকে পাকড়াও করেছিলেন।

একই বছরের ফেব্রুয়ারিতে কয়েকটি ব্যাংকের এটিএম কার্ড জালিয়াতির মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় পিওটার নামে জার্মানির এক নাগরিককে গ্রেফতার করে ডিবি পুলিশ। তার পেশাই ছিল এটিএম কার্ড ও পয়েন্ট অব সেলস (পস) মেশিন জালিয়াতি। তার সঙ্গে সিটি ব্যাংকের একাধিক কর্মকর্তা জড়িত ছিল। ওই সময় সিটি ব্যাংকের তিন কর্মকর্তাকেও গ্রেফতার করেছিল ডিবি। সর্বশেষ ৩১ মে ফের ঢাকায় সাত দিনের মিশন নিয়ে আসে হ্যাকার গ্রুপের সদস্য ইউক্রেনের সাত নাগরিক। চক্রের ছয় সদস্যকে পুলিশ গ্রেফতার করলেও এখনও আত্মগোপনে রয়েছে চক্রের আরও কয়েক সদস্য।

এআর/এসএইচএস/এমকেএইচ