সাবসিডারি (সহযোগী) কোম্পানির দায় বহন করে লোকসানের খাতায় নাম লেখানো এসিআই লিমিটেডের আর্থিক তথ্য বিশেষ নিরীক্ষার দাবি জানিয়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) কর্তৃপক্ষ।
Advertisement
গত ৩০ মে এক চিঠির মাধ্যমে দেশের পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কাছে এ দাবি জানো হয়েছে।
এদিকে বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে, পুঁজিবাজার ভালো করতে সরকারের ওপর মহল থেকে নির্দেশনা রয়েছে। এরই প্রেক্ষিতে সম্প্রতি স্টেকহোল্ডারদের দাবির প্রেক্ষিতে বেশ কিছু তড়িৎ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এসিআইর বিষয়ে ডিএসইর চিঠি কমিশন গুরুত্বসহকারে নিয়েছে। পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে যে ধরনের পদক্ষেপ নেয়া দরকার, তা নেয়া হবে।
এর আগে এসিআইর লোকসানের বিষয় ক্ষতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি গঠন করে ডিএসই। ওই তদন্ত কমিটি এসিআইর কাছে বছরের পর বছর ধরে রিজার্ভ থেকে সাবসিডারি কোম্পানির লোকসান বহনের কারণ জানতে চায়।
Advertisement
এসিআই লিমিডেট তদন্ত কমিটির প্রশ্নের উত্তরে জানায়- বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) শেয়ারহোল্ডারা যত লোকসানই হোক এসিআই লজিস্টিক লিমিটেড (স্বপ্ন) চালিয়ে যেতে বলেছে এবং দেশব্যাপী শাখা বিস্তার করতে বলেছে।
এসিআইর এই ব্যাখ্যাকে ব্যাখ্যা অগ্রহণযোগ্য এবং অবিশ্বাসযোগ্য বলে অভিমত দেয় ডিএসইর তদন্ত কমিটি।
ওষুধ ও রসায়ন খাতের কোম্পানি এসিআই লিমিটেডের গত কয়েক বছরের আর্থিক বিবরণীর তথ্য নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে গত ফেব্রুয়ারিতে ডিএসইর পরিচালনা পর্ষদ এই তদন্ত কমিটি গঠন করে।
ডিএসইর পরিচালক ও তদন্ত কমিটির সদস্য মিনহাজ মান্নান ইমন বলেন, এসিআই সংক্রান্ত বেশকিছু অভিযোগ অনেকদিন থেকে বাজারে আসছে। দীর্ঘদিন ধরে ক্রমবর্ধমান হারে লোকসান বাড়ছে। এ কারণে ক্ষতিগ্রস্ত একজন প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী অভিযোগ করেছেন। তাতে ওই বিনিয়োগকারী উল্লেখ করেছেন এসিআই যে লোকসান দেখাচ্ছে তা গ্রহণযোগ্য না।
Advertisement
এসিআইর লোকসান আপনার কীভাবে দেখছেন? এমন প্রশ্ন করা হলে ইমন বলেন, একটি কোম্পানি অধিকতর লাভের আশায় সাবসিডারি কোম্পানি করে। একটি নতুন কোম্পানি করলে সাময়িকভাবে সেখানে লোকসান আসতে পারে। কিন্তু এটা যদি এক সময় মূল কোম্পানিকেই খেয়ে ফেলে, তাহলে মূল কোম্পানির শেয়ারহোল্ডাররা কোথায় যাবে। এ বিষয়ে আমরা এসিআইর কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছি, তারও ব্যাখ্যা দিয়েছে। এসিআই যে ব্যাখ্যা দিয়েছে তা অগ্রহণযোগ্য।
চলতি বছরের জানুয়ারিতে এসিআই চলতি হিসাব বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকের (২০১৮ সালের অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর) অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এতে কোম্পানিটি পাঁচ কোটি ৪৪ লাখ টাকা লোকসান দেখায়। আর শেয়ার প্রতি লোকসান দেখানো হয় ৭৮ পয়সা। অথচ আগের বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে কোম্পানিটি ৩০ কোটি ১৩ লাখ টাকা মুনাফা করেছিল। সে বছর ইপিএস দেখানো হয়েছিল ৫ টাকা ৪৪ পয়সা।
ওই আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশের পর এসিআইর লোকসানের বিষয়টি পুঁজিবাজারে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। বিনিয়োগকারীদের পক্ষ থেকে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ও ডিএসইতে আবেদন জানানো হয়। এ প্রেক্ষিতেই ডিএসইর পরিচালনা পর্ষদের সভায় এসিআইর আর্থিক বিষয়গুলো তদন্ত করে দেখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয় এবং তদন্ত কমিটি গঠন করে।
ডিএসইর পরিচালক ও সাবেক চেয়ারম্যান বিচারপতি ছিদ্দিকুর রহমান মিয়াকে প্রধান করে গঠিত এই কমিটির সদস্য হিসেবে রাখা হয় ডিএসইর পরিচালক ও সাবেক সভাপতি মো. রকিবুর রহমান, পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন, স্বতন্ত্র পরিচালক মনোয়ারা হাকিম আলী, প্রফেসর ড. মো. মাসুদুর রহমান এবং ডিএসইর প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) আবদুল মতিন পাটোয়ারী।
ওই তদন্ত কমিটির এক সদস্য বলেন, এসিআইর সাম্প্রতিক গতিবিধি সন্দেহজনক। ৩৬ কোটি টাকা মূলধনের কোম্পানিটি সহযোগী প্রতিষ্ঠানের নামে প্রায় ৯০০ কোটি টাকা লোকসান দিয়েছে। বিষয়টা মোটেও বিশ্বাসযোগ্য নয়, গ্রহণযোগ্য তো নয়ই। আমাদের সন্দেহ, এসিআইর মালিকরা স্বপ্নের লোকসান দেখিয়ে কোম্পানি থেকে টাকা সরিয়ে নিচ্ছেন।
তিনি বলেন, এসিআই গত ১০ বছর ধরে তার রিজার্ভ থেকে লোকসানের বিপরীতে ভর্তুকি দিচ্ছে। এটা মেনে নেয়ার মতো বিষয় নয়। স্বপ্ন যদি সত্যিই এত লোকসান দিয়ে থাকে, তাহলে এসিআই কর্তৃপক্ষের উচিত ছিল সেটি বন্ধ করে দেয়া।
তিনি আরও বলেন, এটি ব্যক্তি মালিকানার প্রতিষ্ঠান নয় যে, মালিকরা যা খুশি তা করবেন। এটি একটি তালিকাভুক্ত কোম্পানি। শেয়ারহোল্ডাররাও এ কোম্পানির একাংশের মালিক। তাদের অর্থ নিয়ে নয়-ছয় করার অধিকার কারোরই নেই।
এমএএস/এমএমজেড/জেআইএম