ঘূর্ণিঝড় ফণীর কারণে মাঠে ৮০ ভাগ পাকা বোরো ধান কাটতে এবং ভুট্টা, চীনা বাদামসহ পরিপক্ক সব ফসল ঘরে তুলতে কৃষকদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের কৃষি তথ্য সার্ভিস থেকে বৃহস্পতিবার এ সংক্রান্ত একটি আদেশ জারি করা হয়েছে।
Advertisement
আদেশে বলা হয়, প্রিয় কৃষক-কৃষাণি ভাই ও বোনরা, ঘূর্ণিঝড় যে কোনো সময় আঘাত হানার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই বোরো ধানের শতকরা ৮০ ভাগ পেকে গেলে কেটে ফেলুন। পাশাপাশি পরিপক্ব চিনাবাদাম, ভুট্টা ও সবজির সংগ্রহ করুন।
এদিকে ৩ থেকে ৬ মে পর্যন্ত বিশেষ কৃষি বার্তায় সিলেট, সুনামগঞ্জ, মেহেরপুর ও নোয়াখালী জেলার জন্য বলা হয়, তুলনামূলকভাবে অতি ভালো বৃষ্টি (৬.০-১০.০ সি.মি) ও তীব্র বেগে বাতাসের সম্ভাবনা রয়েছে। এমতাবস্থায় দণ্ডায়মান ফসল রক্ষার জন্য নিম্নলিখিত কৃষি পরামর্শ জরুরিভাবে প্রেরণ করা হলো-
১. বোরো ধান ৮০ শতাংশ পরিপক্ব হলে দ্রুত তা কেটে ফেলা, অন্যথায় তীব্র বেগের বাতাস ও বৃষ্টিতে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হতে পারে।২. পরিপক্ব চিনাবাদাম, রবি ভুট্টা ও সবজি দ্রুত সংগ্রহ করে নিতে হবে।৩. সেচ নালা পরিষ্কার রাখতে হবে, যাতে ধানের জমিতে অতিরিক্ত পানি জমে না থাকে।৪. খেতের চারপাশে উঁচু বাঁধ দিতে হবে, যাতে পানির স্রোত দণ্ডায়মান ফসলের ক্ষতি করতে না পারে।৫. যেহেতু ভারী বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে তাই এই মুহূর্তে বীজ বপন ও চারা রোপণ থেকে বিরত থাকতে হবে।৬. সেচ, সার ও কীটনাশক প্রদান আপাতত বন্ধ রাখতে হবে।
Advertisement
এছাড়া রংপুর, কুড়িগ্রাম, কিশোরগঞ্জ, চুয়াডাঙ্গা, নরসিংদী, লালমনিরহাট, মৌলভীবাজার ও নেত্রকোনা জেলার জন্যও অনুরূপ বিশেষ কৃষি বার্তা দেয়া হয়েছে।
অপরদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, ২ মে (বৃহস্পতিবার) বাংলাদেশ এবং ভারতীয় আবহাওয়া অধিদফতরের সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী পশ্চিম মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’ বর্তমানে উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হচ্ছে।
সকাল ৯টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১০৬৫ কিলোমিটার, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে এক হাজার ২৫ কিলোমিটার, মংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৯১৫ কিলোমিটার ও পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৯২৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল। এটি আরও ঘনীভূত ও উত্তর পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে ৩ মে (শুক্রবার) বিকেল নাগাদ ভারতের ওড়িশা উপকূল অতিক্রম করতে পারে এবং পরে একই দিন বিকেল নাগাদ খুলনা ও তৎসংলগ্ন দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চল এলাকায় আঘাত হানতে পারে।
ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’র প্রভাবে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল, উত্তরাঞ্চল এবং তৎসংলগ্ন ভারতীয় অঞ্চলসমূহে আগামী ৭২ ঘণ্টায় ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে। এর প্রভাবে ওই অঞ্চলসমূহের প্রধান নদীসমূহের বিশেষত সুরমা-কুশিয়ারা, কংস, জাদুকাটা, তিস্তা নদীর পানি সমতল আগামী ৭২ ঘণ্টায় দ্রুত বৃদ্ধি পেতে পারে এবং কোথাও কোথাও বিপদসীমা অতিক্রম করে আকস্মিক বন্যা পরিস্থিতির উদ্ভব হতে পারে।
Advertisement
এছাড়া বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতরের পূর্বাভাস মোতাবেক ঘূর্ণিঝড় এবং এর প্রভাবে উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, বরগুনা, ভোলা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং তাদের দূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে চার-পাঁচ ফুট অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী (পুর) বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র ঢাকার আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া এসব তথ্য জানিয়েছেন।
এফএইচএস/এএইচ/আরএস/এমকেএইচ