আমাদের প্রত্যেকের জীবনেই নির্ভরশীলতা এক গুরুত্বপূর্ণ বাস্তবতা। শিশুকাল থেকে শুরু করে পরিণত বয়স পর্যন্ত আমরা বিভিন্নভাবে পরিবার, সমাজ, বন্ধু-বান্ধব, অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ও প্রযুক্তির ওপর নির্ভরশীল থাকি। এই নির্ভরশীলতা কখনো প্রয়োজনীয় ও স্বাভাবিক, আবার কখনো এটি অতিরিক্ত মাত্রায় গিয়ে সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। তাই নির্ভরশীলতার সঠিক সীমা নির্ধারণ করা অত্যন্ত জরুরি।
Advertisement
নির্ভরশীলতা মানুষের পারস্পরিক সম্পর্ক ও সহযোগিতার ভিত্তি তৈরি করে। যেমন:
• শিশুদের জন্য পরিবার: শিশুদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশের জন্য তাদের বাবা-মায়ের ওপর নির্ভরশীল হতে হয়। এটি স্বাভাবিক ও অপরিহার্য।
• শিক্ষা ও জ্ঞান অর্জনে নির্ভরশীলতা: শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের ওপর নির্ভর করে জ্ঞান অর্জন করে। কর্মক্ষেত্রে নবীন কর্মীরা অভিজ্ঞদের সহায়তায় দক্ষতা বাড়ায়।
Advertisement
• সমাজের সহায়তা: একে অপরের সাহায্য ছাড়া সমাজ চলতে পারে না। এক্ষেত্রে স্বাস্থ্যসেবা, নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক সুযোগ-সুবিধা ইত্যাদি ক্ষেত্রে নির্ভরশীলতা স্বাভাবিক।
• প্রযুক্তি ও আধুনিক সুযোগ-সুবিধা: দৈনন্দিন জীবনে ইন্টারনেট, মোবাইল ফোন, যানবাহন ইত্যাদির ওপর নির্ভর করা আমাদের জীবনকে সহজ করে তুলেছে।
অতিরিক্ত নির্ভরশীলতার সমস্যাআরও পড়ুন
চিকিৎসক ও পেশাগত দক্ষতার উন্নয়নে দরকার পুনর্মূল্যায়ন ব্যবস্থা মালয়েশিয়ায় কারখানায় অভিযান, বাংলাদেশিসহ ৪২০ প্রবাসী আটক মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশিসহ ৬০০ অভিবাসী আটকযখন নির্ভরশীলতা চাহিদার সীমার বাইরে চলে যায়, তখন তা ব্যক্তি ও সমাজের জন্য ক্ষতিকর হয়ে ওঠে।
Advertisement
• স্বনির্ভরতার অভাব: অতিরিক্ত নির্ভরশীলতা মানুষকে নিজের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা থেকে বঞ্চিত করে। এতে ব্যক্তির আত্মবিশ্বাস কমে যায় এবং যেকোনো কাজে সে অন্যের সাহায্যের অপেক্ষা করে।
• অর্থনৈতিক ক্ষতি: কেউ যদি সবসময় অন্যের আর্থিক সহায়তার ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে, তবে সে নিজের অর্থনৈতিক দায়িত্ব নিতে শেখে না। ফলে ব্যক্তিগত ও পারিবারিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বাধাগ্রস্ত হয়।
• প্রযুক্তির প্রতি আসক্তি: আধুনিক যুগে প্রযুক্তির ওপর অতিরিক্ত নির্ভরশীলতা অনেক ক্ষেত্রে মানুষের সৃজনশীলতা ও সামাজিক মেলামেশার ক্ষমতা কমিয়ে দেয়।
• সামাজিক সম্পর্কের ভারসাম্যহীনতা: অতিরিক্ত নির্ভরশীলতা পারিবারিক ও সামাজিক সম্পর্কে দূরত্ব তৈরি করতে পারে। যেমন, যদি কোনো ব্যক্তি সবসময় অন্যদের সাহায্য ছাড়া কাজ না করতে পারে, তবে সে ধীরে ধীরে আত্মনির্ভরশীলতা হারিয়ে ফেলে।
সঠিক ভারসাম্য বজায় রাখার উপায়• স্বনির্ভরতা বাড়ানো: নিজের দায়িত্ব নিজে নেওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।• সীমিত নির্ভরশীলতা: প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রেই নির্ভরশীলতা রাখা উচিত, যেন তা ব্যক্তির উন্নতির পথে বাধা না হয়।• আত্মবিশ্বাস ও দক্ষতা বৃদ্ধি: নিজের দক্ষতা বাড়িয়ে আত্মনির্ভরশীল হয়ে ওঠা উচিত।• প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার: প্রযুক্তির ওপর অতিরিক্ত নির্ভরশীল না হয়ে এর উপযোগিতা কাজে লাগানো উচিত।
উপসংহার
নির্ভরশীলতা প্রয়োজন, কিন্তু অতিরিক্ত নির্ভরশীলতা মানুষের বিকাশের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। তাই আমাদের উচিত প্রয়োজন ও অতিরিক্ততার মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করা, যেন আমরা স্বনির্ভর ও সফল জীবন গড়ে তুলতে পারি।
এমআরএম/এমএস